শিরোনাম
নবীগঞ্জে জায়েদ হত্যার রহস্য উদঘাটন
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২০, ২২:৫৪
নবীগঞ্জে জায়েদ হত্যার রহস্য উদঘাটন
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের জায়েদ মিয়া (২২) নামের এক ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধারের ১৫ দিনের মাথায় হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ।


ব্যবসায়ী জায়েদ মিয়ার প্রেম সংক্রান্ত ঘটনা, বিয়ে ভঙ্গ ও পাওনা টাকা আত্মসাত করতেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান নবীগঞ্জ-বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী।


শুক্রবার (২০ মার্চ) বিকেলে নবীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গনে সংবাদ সম্মেলন করে গ্রেফতারকৃত আসামি মোহাম্মদ আলী রুবেলের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি মোতাবেক এসব তথ্য জানান নবীগঞ্জ-বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী।


তিনি জানান, সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের দুস্তপুর গ্রামের জনৈকা হ্যাপি আক্তার সুখীর সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমেরে সম্পর্ক ছিল একই এলাকার ইচপুর গ্রামের ধনাই মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ আলী রুবেলের। রুবেল-সুখীর প্রেম চলাকালে হ্যাপী তার খালাতো বোনের বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামে বেড়াতে আসে। হ্যাপি আক্তার সুখী’র খালাতো বোন রত্মা বেগমের স্বামী রিপন মিয়া। শ্যালিকা হ্যাপীকে নিয়ে দুলাভাই রিপন মিয়া বাড়িতে বসে গল্প করার সময় ওই বাড়িতে যায় রিপনের বন্ধু জায়েদ মিয়া। এ সময় সুখীকে একনজর দেখেই ভালো লেগে যায় জায়েদের।


এক পর্যায়ে মোহাম্মদ আলী রুবেলের প্রেমিকা সুখীর সাথে নতুন করে প্রেমের গভীর সর্ম্পক গড়ে উঠে জায়েদের। জায়েদের সাথে হ্যাপি আক্তার সুখী’র নতুন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠায় সুখীর প্রথম প্রেমিক মোহাম্মদ আলী রুবেলের সঙ্গে ২ বছরের পুরনো প্রেমের সর্ম্পক ভেঙে যায়। এরপর থেকে জায়েদের উপর ক্ষিপ্ত ছিল রুবেল।


অন্যদিকে রিপন মিয়া, রনি মিয়া এবং জায়েদ মিয়ার মধ্যে ছিল গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক। তাই জায়েদ-সুখীর প্রেমের সম্পর্কটি জানা ছিল জায়েদের বন্ধুদেরও। সকল বন্ধু মিলে শেরপুরে জায়েদ আহমদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে নিয়মিত আড্ডা দিত। হ্যাপি আক্তার সুখী ও জায়েদ মিয়ার প্রেমের সম্পর্কের সুযোগে জায়েদের নিকট থেকে প্রায় ১০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল সুখীর খালাতো বোনের জামাই রিপন মিয়া। এরপর বন্ধু রনি মিয়াও জায়েদের কাছ থেকে টাকা ধার নেয়। দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কের পর জায়েদ-সুখীর প্রেমের সম্পর্কটি গড়িয়েছে বিবাহে। উভয় পরিবারের সম্মতিতে জায়েদ-সুখীর বিবাহে দিনক্ষণ ৬ মার্চ উভয় পক্ষ এক সাথে বসে নির্ধারণ করার কথা ছিল।


এদিকে সুখীর সাবেক প্রেমিক মোহাম্মদ আলী রুবেল জায়েদ-সুখীর নতুন প্রেমের সম্পর্কটি কোনো ভাবে মেনে নিতে পারেনি। অপরদিকে টাকা ধার নেয়ার বেশ কিছুদিন পর জায়েদ মিয়া তার বন্ধু রিপন মিয়া ও রনি মিয়ার কাছে তার পাওনা টাকা ফেরত চাইলে উভয়ের সাথেই তার বাকবিতণ্ডা ও তর্কাতর্কি হয়। তিন বন্ধুর মনোমালিন্যের সুযোগ খুঁজে মোহাম্মদ আলী রুবেল।


এক পর্যায়ে জায়েদ মিয়ার বন্ধু রিপন মিয়া ও রনি মিয়ার সাথে পরিচয় হয় সুখীর সাবেক প্রেমিক রুবেলের। রিপন মিয়া সুখীর খালাতো বোনের জামাই হওয়ায় রিপনের সাথে সুখীর সাবেক প্রেমিক মোহাম্মদ আলী রুবেলের সাথে পরিচয়টা অতি সহজে হয়ে যায়। এরই মধ্যে পরস্পর যোগসাজসে রুবেলের প্রেমের ব্যর্থতা, জায়েদ-সুখী বিবাহ ভাঙতে এবং জায়েদের পাওনা টাকা আত্মসাৎ এর উদ্দেশ্যেই শেরপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর নিকটবর্তী একটি নির্জনস্থানে রুবেল-রিপন-রণি মিলে জায়েদ মিয়াকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরে তারা ইমোর মধ্যে একে অপরের সাথে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে জায়েদকে হত্যা করার মাস্টার প্লান করে।


৪ মার্চ শেরপুর বাজারে দোকান বন্ধ করে জায়েদ মিয়া বাড়ি যাওয়ার পথে তাকে হত্যা করা হবে বলে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত ১১টার দিকে জায়েদকে হত্যার করার উদ্দেশ্যে বিবিয়ানা বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্টের সড়কের মজলিশপুর নামক স্থানে অবস্থান নেয় রুবেল-রিপন-রণি। প্রতিদিনের ন্যায় শেরপুর বাজার থেকে দোকান বন্ধ করে জায়েদ মোটরসাইকেল যোগে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। জায়েদ মিয়া বিবিয়ানা বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্টের সড়কের মজলিশপুর নামক স্থানে আসা মাত্রই রুবেল-রিপন ও রনি মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে জায়েদের মাথায় জিআর পাইপ দিয়ে উপর্যুপুরি আঘাত করে রক্তাক্ত করে।


এসময় জায়েদের মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে জায়েদের লাশটিকে পাশের একটি জমিতে ফেলে দেয় এবং মোটরসাইকেলটি আরো কিছু দুরে রেখে আসে ঘাতকরা। এরপর থেকেই জায়েদের কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না পরিবারের লোকজন। ঘটনার পর দিন ৫ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে পাহাড়পুর গ্রামের আঃ লতিফের ছেলে ট্রাক্টর চালক সাইফুর রহমান জায়েদের ছোট ভাই আমজদ মিয়াকে ফোন করে জানায়- উল্লেখিত স্থানে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় জায়েদের লাশ পড়ে আছে। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় ৬ মার্চ জায়েদের মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-০৫) দায়ের করেন।


এরপরই রহস্য উদঘাটনে তৎপরতা চালায় পুলিশ। মামলার তদন্তভার দেয়া হয় থানার এস আই সমীরণ চন্দ্র দাশকে। একপর্যায়ে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয় পুলিশ। গত ১৮ মার্চ বুধবার মোহাম্মদ আলী রুবেলকে তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়। পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে রুবেল। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে তার সহযোগী রিপন ও রণির নাম জানায় রুবেল । গত বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জের বিজ্ঞ আদালতের বিচারক তৌহিদুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ঘাতক মোহাম্মদ আলী রুবেল।


এ ছাড়াও রিপন মিয়া ও রণি মিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আজিজুর রহমান, ওসি (অপারেশন) আমিনুল ইসলাম।


বিবার্তা/ছনি/জাহিদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com