শিরোনাম
টাঙ্গাইলে হাঁসের খামারে আমিনুরের ভাগ্য বদল
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ১৮:৩০
টাঙ্গাইলে হাঁসের খামারে আমিনুরের ভাগ্য বদল
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ফাজিলহাটী ইউনিয়নের গাছপাড়া কামারনওগাঁ বিল।বর্তমানে বিলের পানি শুকিয়ে পুরো জায়গাটা এখন আবাদি জমিতে রুপ নিয়েছে। কয়দিন পর এসব জমিতে বোরো আবাদ হবে।বর্ষার মৌসুমে জমিগুলো জলাশয়ে পরিণত হয়। অল্প সময়ের পানিকে পুঁজি করে কামারনওগাঁ গ্রামের আমিনুর রহমান গড়ে তুলেছেন একটি ভ্রাম্যমাণ হাঁসের খামার।পানি থাকাবস্থায় হাঁসগুলো ওই বিলে থাকে।পানি শুকিয়ে গেলে হাঁসগুলোকে নেয়া হয় অন্যত্র।



এই শীতে বিলের বেশিরভাগ অংশ শুকিয়ে গেলেও কোথাও কোথাও একটু পানি রয়ে গেছে। পাশের এক খণ্ড উঁচু জমির ওপর একচালা একটি ঝুপড়ি থেকে আমিনুরের কয়েকবার আয়-আয় ডাক শুনে পাক-পাক আওয়াজে মুখরিত হলো চারপাশ। এক-এক করে চলে আসে দূরে ছড়িয়ে থাকা হাজার খানেক হাঁস।খাবারের সময়ে মুলত হাঁসগুলোকে কাছে ডাকে আমিনুর।হাঁস পাহারায় ঝুপড়ির এক কোনে শোবার জায়গা বানিয়েছেন আমিনুর।ইচ্ছে, চেষ্টা আর অক্লান্ত পরিশ্রমে বিদেশ ফেরত আমিনুর এখন মাসে লাখ টাকা উপার্জন করছে হাঁসের খামার থেকে। জলাশয়ের অভাবে গত নয় মাসে তিনবার জায়গা বদল করতে হয়েছে তাকে। আগামী চার পাঁচদিনের মধ্যে কামারনওগাঁ বিল ছেড়ে নতুন জায়গায় খামারটি সরাতে হবে বলে জানালেন তিনি। ভ্রাম্যমাণ খামারটি একদিকে বদলে দিচ্ছে আমিনুরের ভাগ্য অন্যদিকে এলাকাবাসী পেয়েছে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রেরণা।


আমিনুর জানান, বছর খানেক আগে তিনি একহাজার হাঁসের বাচ্চা কিনে খামার তৈরি করেন। প্রথমে কামারনওগাঁ সিকদারবাড়ি এলাকায় শ্বশুর বাড়ি, এরপর নিজের বাড়ি অতঃপর কামারনওগাঁর বিলে আনা হয়েছে খামারের হাঁসগুলো। জলাশয় যেখান সেখানেই ভ্রাম্যমাণ এই খামারটিকে সরাতে হয়। এবার পাশ্ববর্তী এলাসিন ইউনিয়নের সিংহরাগী এলাকায় ধলেম্বরীতে হাঁসগুলো সরানোর কথা ভাবছেন তিনি।


১০/১২বছর আগে তিনি গমের ব্যবসা করতেন।প্রতিদিনের লাভের অংশ থেকে একটি করে হাঁস কিনতেন।এভাবে ১৬৫টি হাঁস কিনলেন। হাঁস পালোনের লাভ তখন থেকেই বুঝতেন। দীর্ঘদিন হাঁস পালনের টাকায় সংসার চালিয়ে বিদেশে যাওয়ার খরচও জোগাড় করেছিলেন। উপার্জন বাড়াতে সৌদি আরবে যান। সৌদি থেকে ফিরে সিঙ্গাপুরে যান। প্রবাসের চেয়ে হাঁস পালনেই বেশি উপার্জন হবে ভেবে দেশে ফিরে আসেন তিনি। দেশে ফিরে প্রথমে বেকার হয়ে পড়েন। ক’দিন পরই ৩৫ হাজার টাকায় একহাজার জিনডিং ও খাকী ক্যাম্পবেল প্রজাতির হাঁসের বাচ্চা কেনেন। ঘর তৈরিতেও তেমন খরচ হয়নি। ভ্রাম্যমাণ খামার হওয়ায় সবসময় হাঁসগুলো থাকে জলাশয়ে। ফলে খাবার খরচও কমে আসে। বাচ্চাগুলো প্রথম তিন-চার মাস পালনের পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩শ ডিম দিচ্ছে। প্রতি শতক ডিম ১ হাজার ১০০ টাকা (৪৪ টাকা প্রতি হালি) দরে খামার থেকেই কিনে নিচ্ছে পাইকাররা। এতে প্রতি দিনের সাড়ে তিনশ’ ডিম বিক্রি হয় ৩ হাজার ৮০০ টাকা। যা মাসে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। ৫ মাস যাবত ধারাবাহিকভাবে সাড়ে তিনশ’ ডিম তুলছেন আমিনুর। কখনো খামার মাসে থেকে ৪০০ ডিমও আসে।



আমিনুর রহমান আরো বলেন, জলাশয়ে ঠিকমতো পানি থাকলে খাবার খরচ কমে যেতো এতে ডিমের দাম আরো কম হত। কিস্তু পানি কমে যাওয়ায় অনেকটা সময় হাঁসগুলো বাড়িতে পালন করতে হয়। এরপরও তার ইচ্ছে চলতি বছরে তিন হাজার বাচ্চা তার খামারে তুলবেন। বিদেশের চেয়েও এখন তার বেশি উপার্জন হচ্ছে। পাশ্ববর্তী অনেকে প্রেরণা পেয়ে খামার করার কথা ভাবছেন। ৪/৫ মাসে খামারের ডিম বিক্রি হয়েছে ৫ লাখ টাকা। খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা। এখন নিয়মিত ডিম দিচ্ছে। এছাড়া একহাজার হাঁসের দাম ৪০০ টাকা দরে হলে বিক্রি হবে প্রায় ৪ লাখ টাকা। যার সবটুকুই থাকবে লাভ থেকে। এ হিসেবে মাসে লাখের ওপর উপার্জন হচ্ছে আমিনুরের।


তিনি বেকারদের বলেন, হতাশার কিছু নেই। সঠিকভাবে শ্রম দিলে হাঁস পালনে বিদেশি টাকার চেয়েও বেশি উপার্জন করা সম্ভব। অনেকেই তাকে দেখে হাঁস পালনের পরামর্শ নিতে আসেন। তবে অভিযোগ করে বলেন, প্রাণী সম্পদ বিভাগ এসব খামার পরিদর্শণ, বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরহ, নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা দিলে খামারিরা উপকৃত হতো। হাঁস পালন একটি লাভজনক প্রজেক্ট।সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ খাতকে একটি সম্ভাবনাময় খাতে রুপ দেয়া সম্ভব।



আমিনুরের স্ত্রী বিপুল জানান, তিনি এবং তার স্বামী দুজনে মিলেই শ্রম দিচ্ছে খামারে। ফলে স্বামী প্রবাসে থাকার চেয়ে তাদের সংসার এখন আরো ভালো চলছে। হাঁসের বিষয়ে তিনি বলেন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের আওতায় প্রথম ধাপে ১৭ দিন দ্বিতীয় ধাপে ২১দিন প্রশিক্ষণ করেছেন তিনি। খামারে প্রাথমিক চিকিৎসা এখন নিজেই দিতে পারেন।


ডিম দেয়ার সময় হাঁসের রোগ কম হয়।তবে এসময় ক্যালসিয়াম কমে যায় এটাও বিপুলের জানা। ডিম দেয়া শুরু করলে হাঁকে পিএল দিয়ে দেয়। ফলে চিকিৎসা খরচ অনেকটাই কমে এসেছে। গম ভাঙা, কুঁড়া আর ধান একত্র করে হাঁসের খাবার তৈরি করা হয়।বাজার থেকে কেনা কোন খাবার (ফিড) তাদের খামারে দেয়া হয় না। সাড়ে তিনমাস বয়স থেকে ডিম দেয়ার শুরু করে এখনও পালাক্রমে ডিম দিচ্ছে। হাঁস পালনেই মাসে লাখ টাকা উপার্জন করছে।কখনও মাসে এক লাখ আবার কোনো মাসে ১ লাখ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার ডিম বিক্রি হচ্ছে।


দেলদুয়ার উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের ভ্যাটেরিনারি সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ আলী বলেন, আমিনুরের হাঁসের খামরটি নিঃসন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ।তবে হাঁসগুলোকে সুস্থ রাখার জন্য নিয়ম মাফিক ভ্যাকসিন এবং ডাক কলেরার টিকা সিডিউল অনুযায়ী দিতে হবে।সরকারের নির্ধারিত মূল্যে ভ্যাকসিনসহ, চিকিৎসা ও পরামর্শ সেবা দেয়া হচ্ছে।


বিবার্তা/মোল্লা তোফাজ্জল/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com