শিরোনাম
মুক্তিযোদ্ধা নরেশ বর্মনকে আর ভিক্ষা করতে হবে না
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০১৯, ২২:১৬
মুক্তিযোদ্ধা নরেশ বর্মনকে আর ভিক্ষা করতে হবে না
নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র বর্মণ। নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার গোলনা ইউনিয়নে সরকারের খাস জমিতে কোনো রকমে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুঃস্থ জীবন যাপন করেন।বয়স এখন প্রায় ৭৪। একাত্তরে যে হাত অস্ত্র নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল, আজ সেই হাত ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘোরে। গত ২৮ অক্টোবর ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ পত্রিকায় “মুক্তিযোদ্ধা নরেশের হতে ভিক্ষার ঝুলি” সংবাদটি প্রকাশিত হয়।


খবরটি জলঢাকার মেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের নজরে এলে তিনি সাথে সাথে এলাকাতে যোগাযোগ করে খুঁজে বের করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র বর্মণকে। গত ১ নভেম্বর তুরিন আফরোজ ঢাকা থেকে ছুটে যান জলঢাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেশের গ্রামের বাড়িতে। জানতে পারেন যে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ করেছেন নরেশ। ভারত সরকারের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ৪১২০৪১ নং সিরিয়ালে নরেশের নাম থাকলেও আজ পর্যন্ত সরকারি গেজেট ভুক্ত না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা নরেশকে সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।



মুক্তিযোদ্ধা নরেশ বর্মনের বাড়িতেআন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ


মুক্তিযোদ্ধা নরেশের মাথায় বেশ বড় একটি টিউমার আছে, পয়সার অভাবে সেই চিকিৎসাও তিনি করাতে পারছেন না। হাপানীতে ভোগেন নরেশ, সেই সাথে শরীরে রয়েছে হাজারো ব্যাধি। অভাবী নরেশ নিজের ও পরিবারের পেটের দায় ও চিকিৎসার জন্য হাতে ঝুলি নিয়ে গ্রামের পথে পথে ভিক্ষা করছেন। কখনো স্কুলের সামনে, কখনো মসজিদের সামনে, কখনো হাটে-বাজারে ভিক্ষা করে বেঁচে আছেন নরেশ। নরেশের একটাই চাওয়া এই দেশ আর জাতির কাছে –তার মৃত্যুর আগে যেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু পান।


নরেশকে সঙ্গে নিয়ে গত ২ নভেম্বর তুরিন আফরোজ জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজাউদ্দৌলার কার্যালয়ে যান। দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা করেও মুক্তিযোদ্ধা নরেশের সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি।


সুজাউদ্দৌলা জানান, নরেশের যাচাই-বাছাই চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। এরপর নরেশকে সঙ্গে নিয়ে তুরিন আফরোজ নীলফামারী জেলার সিভিল সার্জন রানজিৎ কুমার বর্মনের কাছে যান। জলঢাকা থেকে এপয়েন্টমেন্ট করে বৃদ্ধ নরেশকে কষ্ট করে নীলফামারী নিয়ে যাওয়ার পরও দেখা মেলেনি সিভিল সার্জনের।


সহায়তা না পেয়ে আজকে ৪ নভেম্বর তুরিন আফরোজ মুক্তিযোদ্ধা নরেশকে নিয়ে ছুটে যান নীলফামারী জেলার জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরীর কাছে। দাবি একটাই – মুক্তিযোদ্ধা নরেশের প্রাপ্য সম্মান্টুকু চাই! জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র বর্মনের কাগজ পত্র পর্যালোচনা করে নরেশ বর্মনের চিকিৎসার জন্য তৎক্ষণাৎ নগদ দশ হাজার টাকা ও এক সপ্তাহের শুকনা খাবার দিয়ে আশ্বস্ত করেন সরকারি ভাবে গেজেট প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে তিনি সুপারিশ করবেন।



নীলফামারী সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সামনে মুক্তিযোদ্ধা নরেশ বর্মনের সাখে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ


জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, যেহেতু নরেশ বর্মণের নাম ভারতীয় তালিকায় আছে তাই তার যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন হবে না। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেশ বর্মনকে তার বরাবর আবেদন করতে বলেন যাতে জেলা প্রশাসক মহোদয় অতি দ্রুত সময়ে মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্রকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে পারেন। এমনকি জেলা প্রশাসক মহোদয় বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেশ বর্মনের চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে যা কিছু করা দরকার তার দায়ীত্ব নিবেন বলেও আশ্বাস দেন। মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র বর্মনকে সকল ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন নীলফামারী জেলার জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী ও তার কার্যালয়।


সবশেষে জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেশ বর্মনকে বলেন, এই যে তার কষ্টের জীবন সেটার জন্য তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান হওয়ার কারণে জেলা প্রশাসক মহোদয় নিজে জাতির পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র বর্মনের কাছে ভুলের ক্ষমা প্রার্থনা করেন।


এখন থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেশ বর্মনকে আর ভিক্ষা করতে হবে না।


বিবার্তা/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com