শিরোনাম
বৃদ্ধ দাদা জানেন না, আবরার নেই
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ১১:৫১
বৃদ্ধ দাদা জানেন না, আবরার নেই
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

আবরার ফাহাদের দাদা আবদুল গফুর বিশ্বাস (৮৭) বয়সের ভারে স্মৃতিশক্তি লোপ পেলেও আবরারকে নিয়ে কিছু ঝামেলা হয়েছে সেটি তিনি বুঝতে পারছেন। কিন্তু তিনি এখনও জানেন না যে বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন তার নাতি আবরার।


বাড়িতে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে আবদুল গফুর বিশ্বাস জানতে চান- কী হয়েছে? কিন্তু পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ এবং শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় সত্য আড়াল করে তাকে জানানো হয়, আবরার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং এখন ভালো আছেন।


আবদুল গফুর বিশ্বাসের পাঁচ ছেলে চাকরির সুবাদে বাড়ির বাইরে থাকেন। একসঙ্গে এত লোক কখনও তাদের বাড়িতে আসে না। অনেকে কান্নাকাটি করছেন, অনেকেই ভারাক্রান্ত। সব মিলিয়ে অজানা শঙ্কা আবদুল গফুরের মনে।


মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে আবরার ফাহাদের লাশ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স যখন তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় তখনও আবদুল গফুর বিশ্বাসকে কিছুই জানানো হয়নি।


কিন্তু বাড়িতে এত আত্মীয়স্বজন আর মানুষ দেখে ব্যাকুল হয়ে জানতে চান- তোমরা না গতকালকে বললা আমার নাতি অ্যাক্সিডেন্ট করেছে? আজকে বাড়ি আসবে। আমার নাতি বাড়িতে আসছে না কেন, আর আমার বাড়িতে এত লোকজন কেন? কিছু প্রশ্নের উত্তর হয় না। নির্বাক দর্শকদের ভূমিকা পালন করা ছাড়া খুব বেশি কিছু করা সম্ভব হয় না।


শুধু রায়ডাঙ্গা না, কুষ্টিয়া না, সারা দেশে যখন আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে, দেশি-বিদেশি মিডিয়াগুলো ফলাও করে আবরারকে ন্যক্কারজনকভাবে হত্যার সংবাদ পরিবেশন করছে, তখনও দাদা আবদুল গফুর বিশ্বাস আজানা শঙ্কা নিয়ে অপেক্ষা করে আছেন, মেধাবী নাতি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে।


আবদুল গফুর বিশ্বাসের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আবরার তাকে নিয়মিত দেখতে আসে কিনা। তিনি বলেছিলেন, ছুটিতে বাড়িতে এলেই গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসত আবরার। খোঁজখবরও নিত। মেধাবী নাতিকে নিয়ে গর্বিত এ বৃদ্ধ জীবনের শেষলগ্নে এসেও স্বপ্ন দেখেন তার নাতি অনেক বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে। পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে। যদিও তার এবং পরিবারের একসময় চাওয়া ছিল আবরার ডাক্তার হবে।


কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়া মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছিলেন আবরার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় দ্বিতীয় হয়েছিলেন। কিন্তু নিজের ইচ্ছাতেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। অত্যন্ত মেধাবী আবরার ফাহাদের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবার আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা। আর বৃদ্ধ দাদা তো প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন- নাতি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন।


বিবার্তা/তাওহীদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com