শিরোনাম
নিরবে-নিভৃতেই কবি শেখ ফজলল করিমের ৮৩তম মৃত্যুবার্ষিকী
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:৪৩
নিরবে-নিভৃতেই কবি শেখ ফজলল করিমের ৮৩তম মৃত্যুবার্ষিকী
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর। মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর। এই অমর বাণীর রচয়িতা কবি শেখ ফজলল করিমের ৮৩তম মৃত্যুবার্ষিকী নিরবে-নিভৃতেই কেটে গেল।


শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ছিল এ কবির মৃত্যুবার্ষিকীর দিন। তার পরিবার থেকে শুরু করে প্রসাশনের কেউ স্মরণে নূন্যতম দোয়া মাহফিলেরও কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি। এ নিয়ে তার ভক্তরা আক্ষেপ প্রকাশ করে কলেজ ছাত্ররা স্থানীয় মসজিদে দোয়া মাহফিল করেছেন।


প্রতিবছর জেলা সদরে কবি শেখ ফজলল করিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে মিলাদ মাহফিল ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন হলেও এবার কিছু হয়নি।


কবি শেখ ফজলল করিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, শুক্রবার নজরুল উৎসব হওয়ার কারণে কবি শেখ ফজলল করিমের মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজন করেনি বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ।


প্রধান শিক্ষক মাহবুবুল আলম খোকন বলেন, কবির মৃত্যুবার্ষিকীর মিলাদ মাহফিল পরবর্তীতে করা হবে।


এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল হাসান জানান, কবির মৃত্যুবার্ষিকী পালনের জন্য সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা ছিল না। ডিসি মহদেয় কিছু বলেন নি বলে করা হয় নি। তবে একজন প্রথিতযশা কবির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী সরকারিভাবেই পালন হওয়া দরকার বলে তিনি জানান।


১৯৯৩ সালে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে কবির স্মৃতির উদ্দেশে ছোট্ট একটি স্মৃতিফলক তৈরি করা হয়। এটি কবির বাড়ির দিক নির্দেশনা হিসেবে কাজ করে।


জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনায় কবির স্মৃত বিজড়িত গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ২০০৫ সালে কবির স্মৃতি রক্ষার্থে কাকিনা বাজারে দ্বিতল ভবনে নির্মিত শেখ ফজলল করিম পাঠাগারটি এখন আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে। নেই কোনো নিরাপত্তা প্রহরী, নেই পাঠকমহলের পদচারণা, যেসব বই-পুস্তক ছিল সেগুলোও হারিয়ে যেতে বসেছে।


বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, কিছুদিন আগে পাঠাগারটি অস্থায়ী ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হলেও পাঠাগারটি এখন আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়। যার ফলে সেখানে বই প্রেমিরা এখন সেখানে যায় না। আর রাতের চিত্রটা ভিন্ন, কেননা খোলামেলা জায়গা হওয়ার কারণে মাদক সেবীরা পাঠাগারটি নিরাপদ স্থান হিসাবে বেচে নিয়েছেন।


২০০৫ সালে নির্মিত পাঠাগারটিতে ২০০৯ সালে দেখভালের জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে স্থানীয় আজিমুদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে এক হাজার টাকা সম্মানীতে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে একটি টাকাও সম্মানি পাননি বলে জানান আজিমুদ্দিন।


কবি শেখ ফজলল করিম স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি ও কাকিনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, ঢাকা থেকে আসার কারণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়নি।


কবির নাতি ওয়াহিদুন্নবী বলেন, কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল কবির বাড়ি। সেটি ভেঙ্গে পাকা করে একটি রুমে রাখা হয়েছে কবির জিনিস পত্র। দীর্ঘদিন এমনি পড়ে থাকায় কবির ব্যবহৃত জিনিসগুলো নষ্ট হতে চলেছে।


কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনায় অজোপাড়াগায়ে ১৮৮২ সালের ১৪ এপ্রিল সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন কবি শেখ ফজলল করিম। ১৩ বছর বয়সে পার্শ্ববর্তী বিনবিনা গ্রামের গনি মোহাম্মদ সর্দারের মেয়ে বসিরন নেছার সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পরের বছর ‘এন্ট্র্রাস’ পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন তিনি।


কবির বৈচিত্রময় রচনায় ফুটে উঠেছে সমসাময়িক ঘটনা, চিন্তা-চেতনা, ধর্মতত্ত, দর্শন, সমাজ সংস্কার ও নারী শিক্ষাসহ সমাজ পরিবর্তন ও মননশীলতার অঙ্গীকার।


উপমহাদেশের প্রথম কাকিনার মতো অজপাড়াগাঁয়ের নিজ বাড়িতে কবি স্থাপন করেছিলেন ‘শাহবিয়া প্রিন্টিং ওয়ার্কস’ নামের একটি ছাপাখানা।


এছাড়া তিনি ৫৫টির অধিক বই লিখে গেছেন। বইগুলোর মধ্যে ‘লাইলী মজনু’ ‘শিরি ফরহাদ’ ‘বিবি খাদিজা’ ‘মহর্ষি রাবেয়া’ উল্লেখযোগ্য।


উপদেশমূলক রচনা ‘পথ ও পাথেয়’ গ্রন্থের জন্য তিনি পেয়েছিলেন রৌপ্য পদক। বাংলা ১৩২৩ সনে ভারতের নদীয়া সাহিত্য পরিষদ তাকে সাহিত্য বিশারদ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৩৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


বিবার্তা/জিন্না/তাওহীদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com