শিরোনাম
ওমান দেশের মানুষ
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০১৮, ১৮:৪৫
ওমান দেশের মানুষ
হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী
প্রিন্ট অ-অ+

ওমান নামের দেশটিতে এখন চলছে গ্রীষ্মকালীন ছুটি। ছুটি পেলে কেউ কি আর ঘরে বসে থাকে, বিশেষ করে পকেটে যদি খরচ করার মতো টাকা থাকে! ওমানীরা তো ধনীই। তাই ছুটিতে তারা বেরিয়ে পড়েছে ঘর ছেড়ে। কেউ দেশ ছেড়ে ভিনদেশে, কেউ আবার নিজ দেশের এ প্রান্ত ওপ্রান্ত সব চষে বেড়াচ্ছে। তাদের দলে আছে অনেক প্রবাসী এবং বিদেশ থেকে আসা পর্যটকের দলও। যারা দেশের ভেতর বেড়াচ্ছে, তাদের অনেক সময় কোনো-না-কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়। তবে সেই ঝামেলা সামাল দিতে গিয়ে তারা দেখা পান ওমানী চরিত্রের আরেকটি দিকের - সাহায্যপ্রবণতা বা সহৃদয়তা।


রামানুজ ভেংকটেশের অভিজ্ঞতার কথাই ধরা যাক। সম্প্রতি তিনি ওমানের দক্ষিণাঞ্চলীয় মুসানদাম গভর্নরেট থেকে সংযুক্ত আরব আমীরাত হয়ে মূল ভূখণ্ডে ফিরছিলেন। তিনি বলেন, আমি মুসানদাম থেকে গাড়ি চালিয়ে ফুজাইরাহ হয়ে ফিরছিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল খাতমাত মালাহা বর্ডার ক্রসিঙয়ে পৌঁছানো। কিন্তু ওই পর্যন্ত পৌঁছানোর সঠিক পথটি আমার জানা ছিল না। 'কী করি, কী করি' ভাবতে-ভাবতে দিব্বা শহরে হাজির। ওখানে একটি ফিলিং স্টেশনের ধারে দেখি আনমনে দাঁড়িয়ে আছেন এক ওমানী ভদ্রলোক। তাঁকেই গিয়ে ধরলাম, ''আচ্ছা, বর্ডার চেকপোস্টটি কোনদিকে বলতে পারেন?''


ভদ্রলোক প্রথমে আমাকে মানচিত্র বের করে পথের নিশানা বুঝিয়ে দিলেন। কিন্তু তাতেও বুঝি আশ্বস্ত হতে পারলেন না। পরে নিজের গাড়িতে উঠে আমাকে বললেন, ''গাড়ি নিয়ে আমার গাড়ির পেছন-পেছন আসুন।'' বলেই তিনি আমাকে পথ দেখিয়ে একেবারে বর্ডার পোস্টে নিয়ে গেলেন। এ ওমানী ভদ্রলোকের সহৃদয়তা দেখে আমি খুশি তো হয়েছিই, প্রচণ্ড অবাকও হয়েছি। তাঁর কথা আমি কখনোই ভুলবো না।


আরেক প্রবাসী আনন্দ বিজয়ের অভিজ্ঞতাও একই রকম। এ প্রবাসী ভারতীয় থাকেন মস্কটে। পরিবার নিয়ে গিয়েছিলেন দুবাই। হাত্তা সীমান্ত হয়ে তাঁর ওমান ফেরার কথা। ইতিমধ্যে চার ঘণ্টা গাড়ি চালিয়েছেন আনন্দ। একদিকে ক্লান্তি, অন্যদিকে সন্ধ্যা সমাগত। কিন্তু হাত্তা ক্রসিং-এর পথ হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। সবাই চিন্তিত। এ রাতের বেলা কোথাও যে থাকা যাবে, তার উপায় নেই। তাছাড়া পরদিনই তাঁকে কাজে যোগ দিতে হবে।


আনন্দ বলেন, এ সময় আমি হঠাৎ একটি গাড়ি দেখতে পেলাম, যার লাইসেন্স প্লেট ওমানের। আমি আমার গাড়ির বাতি জ্বালিয়ে তাঁকে থামার সঙ্কেত দিলাম। তিনি কাছে এলে তাঁকে আমার সমস্যাটি বললাম। শুনে তিনি মুহূর্তমাত্র চিন্তা না করে আমাকে বললেন, ''আমার পেছন-পেছন আসুন।'' বলেই তিনি আমাকে সোজা একেবারে পৌঁছে দিলেন সীমান্তে। পথটিও একেবারে কম নয় ; দেড় ঘণ্টার যাত্রা। আমি আরো আরবদেশে ঘুরেছি। সত্যি বলতে কী, এমন সাহায্যপ্রবণ মানুষ আর কোনো আরব দেশেই নেই।


এবার শোনা যাক এক দক্ষিণ আফ্রিকানের কথা। তাঁর নাম শন ব্রেচার। দুবাইপ্রবাসী এ মানুষটি বেড়াতে এসেছিলেন ওমানে। তিনি বলেন, আমি এক মরুভূমি পার হচ্ছিলাম। মাঝপথে আমার গাড়ির তেল ফুরিয়ে যায়। নিঃসীম মরুভূমি। বাইরে ৪৪ ডিগ্রি উত্তাপ আর আমার চারদিকে মরুর বালি আর পাথুরে পাহাড় - এছাড়া আর কেউ নেই, কিছু নেই। আমি দাঁড়িয়ে আছি এক অন্তহীন শূণ্যতার মাঝখানে। উপায় না-দেখে আমি হিচহাইকারদের পন্থা বেছে নিলাম। পাশ দিয়ে যাচ্ছিল একটি ছোট টয়োটা গাড়ি, সেটিকেই থামার সঙ্কেত দিলাম। কাজ হলো। গাড়িটি শুধু থামলোই না, আমার সাথে কথা বলতে গাড়ির মালিকও বেরিয়ে এলেন। তিনি মি. ইয়াহিয়া।


ব্রেচার বলেন, ইয়াহিয়া সাহেব ছুটি কাটাতে পরিবারের কাছে যাচ্ছিলেন। আমার সমস্যাটি শুনে তিনি বললেন, আমি আপনাকে গাড়ির তেল যোগাড় করে দেব। বলেই আমাকে তাঁর গাড়িতে তুলে ৫০ কিলোমিটার দূরের পেট্রোল স্টেশনে নিয়ে গেলেন, আবার মরুভূমির মাঝখানে আমার গাড়ির কাছে নিয়ে এলেন আমাকে। এখানেই শেষ নয়, তিনি এবার আমাকে আমার গন্তব্য সোহার-এর পথও দেখিয়ে দিলেন, যাতে আমি সহজে বাড়ি পৌঁছতে পারি। আমি ঠিকমতো পৌঁছেছি কিনা জানার জন্য কয়েক ঘণ্টা পর এসএমএস করলেন।



ব্রেচার বলেন, এ মানুষটি সত্যিকার দয়ামায়ার মূর্ত প্রতীক। তাঁর কাজ তাঁকে আমার রোল মডেলে পরিণত করেছে। আমি তো মনে করি, তিনি প্রত্যেক ওমানীর রোল মডেল হতে পারেন। এ মানুষটি আমাদের সবাইকে দেখিয়ে দিলেন আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত। আরো দেখালেন ওমানী জাতির মানুষেরা আসলে কেমন - এরা হচ্ছে দয়ালু, সেবাপরায়ণ, খাঁটি এবং কোনো বাধ্যবাধকতা ছাড়াই অন্যকে সাহায্য করতে আগ্রহী।


কেন ওমানীরা এ রকম - তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন একজন ওমানী। তাঁর নাম হামদা আল বুসাইদি। তিনি বলেন, ওমানে বহুকাল ধরে বিদেশীরা আসছে-যাচ্ছে, ওমানীরা তাদের নানাভাবে সাহায্যও করছে। এভাবেই আমাদের মধ্যে অন্যকে সাহায্য করার একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। সূত্র : টাইমস অব ওমান


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com