দৌলতপুর এখন মাদকের স্বর্গরাজ্য, উদ্ধারে অনীহা!
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ২১:১০
দৌলতপুর এখন মাদকের স্বর্গরাজ্য, উদ্ধারে অনীহা!
কুষ্টিয়া থেকে শরীফুল ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর এখন মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। দৌলতপুরের সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে বিভিন্ন প্রকার মাদক। ভারত থেকে অবাধে পাচার হয়ে আসা ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইন ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক দৌলতপুরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় এখন মাদক রাজ্যে পরিণত হয়েছে উপজেলাটি। দৌলতপুর ভারতের সীমান্তবর্তী হওয়ায় এলাকাটি বরাবরই মাদক ব্যবসায়ীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত। ভারত থেকে আসা বিভিন্ন প্রকার মাদক উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামের মাদক পাচারকারীদের হাত বদলে দৌলতপুরসহ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লেও উদ্ধার অভিযানে রয়েছে অনীহা। সীমান্তরক্ষী বিজিবি’র অভিযানে মাঝে মধ্যে আসামি ছাড়াই মাদক উদ্ধার হলেও তা পাচার হয়ে আসা মাদকের নগণ্য অংশ বলে সচেতন মহলের অভিমত। আর মাদক ব্যবসার নেপথ্যের গডফাদাররা সবসময়ই থাকেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।


তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে শতাধিক বা তারও বেশি মাদক ক্রয়-বিক্রয় ও সেবনের স্থান বা ঘাঁটি রয়েছে। এরমধ্যে খোদ দৌলতপুর থানা ও উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকার মধ্যেই রয়েছে একডজনের বেশি মাদক সেবন ও বিক্রয় কেন্দ্র। তারমধ্যে স্বরূপপুর, ব্র্যাকপাড়া, সাদিপুর, সাহাপুর, মানিকদিয়াড়, বেগুনবাড়ী ও দৌলতপুর গোরস্থানপাড়া উল্লেখযোগ্য। এসব স্থানে দিন-রাত মাদক ক্রয়-বিক্রয় ও সেবন হয়ে থাকে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আশা মাদক সেবীরা খুব সহজেই চিহ্নিত এসব স্পট থেকে মাদক সংগ্রহ ও সেবন করতে পারে। মাদক সেবী ও বিক্রেতারা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এমন অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটালেও সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করেন না। আবার কেউ পুলিশকে জানালেও তার উপর নেমে আসে নানারকম নির্যাতন খড়্গ। অথবা তার কপালেই জোটে উল্টো মাদক মামলা। ফলে তারা মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের দ্বারা অতিষ্ঠ থাকলেও মুখ খুলতে সাহস পান না। যার কারণে সীমান্ত এলাকা দিয়ে বিভিন্ন প্রকার মাদক দৌলতপুরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় মাদক সেবী ও বিক্রেতাদের হাতের মুঠোই সহজে চলে আসছে এসব নেশাদ্রব্য। আর এ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে কিশোর থেকে যুবক এমনকি বয়োবৃদ্ধরাও। ফলে চরম হতাশ ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ অভিভাবকমহল।


মাদকাসক্ত এক সন্তানের পিতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবার্তাকে জানান, দৌলতপুরে মাদক এতটাই বেড়েছে যে, এটা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে দৌলতপুরসহ দেশের যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে।


জয়রামপুর গ্রামের মাদকাসক্ত সন্তানের মা ভানুয়ারা খাতুন ও তারাগুনিয়া হলবাজার এলাকার রাশেদা বিবার্তাকে বলেন, তাদের মাদকাসক্ত ছেলে ও চুরি ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত। এদের গ্রেফতারে দৌলতপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হয়নি। উল্টো মাদকাসক্ত ছেলেদের ধরতে পুলিশ ঘুষ দাবি করছে। আমরা গরীব ও অসহায় দিনমজুর মানুষ। মাদকাসক্ত ছেলেদের ধরানোর জন্য পুলিশকে টাকা দিবো কিভাবে!


মাদক প্রসঙ্গে সীমান্ত সংলগ্ন প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান মুকুল সরকার বিবার্তাকে জানান, বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমানে মাদকের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ না হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীসহ যুব সমাজ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছেন।


অপরদিকে অপর সীমান্ত সংলগ্ন রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল বিবার্তাকে জানান, সীমান্ত দিয়ে আসা মাদক দৌলতপুরসহ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। মাদক উদ্ধারে প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার কারণে সীমান্ত এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে। তিনি মাদক উদ্ধারে প্রশাসনের জোর তৎপরতা দাবি করেন।


মাদক উদ্ধার ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম মাদকের প্রবণতা বৃদ্ধির বিষয়টি অস্বীকার করে বিবার্তাকে বলেন, বিগত সময়ে মাসে প্রায় ৮০ থেকে ৯০টি মাদকের মামলা হত। কিন্তু গত মাসে মাত্র ২৭টি মাদকের মামলা হয়েছে। এথেকে প্রমাণ হয় মাদকের প্রবণতা কমেছে।


সীমান্ত দিয়ে মাদক পাঁচার ও মাদক সেবন নিয়ন্ত্রণ না হলে শিক্ষার্থীসহ যুবসমাজ ধ্বংসের পাশাপাশি অভিভাবকরা হয়ে পড়বেন অসহায় ও শিক্ষাবিমুখ। এমনটাই মনে করে সচেতন মহল।


বিবার্তা/শরীফুল/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com