নামজারিতে ঘুষ কত? দিক নির্দেশনা দিলেন এসিল্যান্ড
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:৫০
নামজারিতে ঘুষ কত? দিক নির্দেশনা দিলেন এসিল্যান্ড
নাজিরপুর (পিরোজপুর) থেকে মো. মশিউর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

নামজারিতে ঘুষ কত? ইউনিয়ন তহশিলদারদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন এসিল্যান্ড। এ সংক্রান্ত একটি অডিও সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে পিরোজপুরের নাজিরপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমানের। জেলা প্রশাসক মো. জাহেদুর রহমান বিষয়টির তদন্ত চলমান রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।


এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান বিবার্তাকে জানান, অডিওটা শুনেছি, এটা দুঃখজনক। তাদের সঙ্গে এমন কোনো আলোচনা আমার হয়নি। আমি এখানে নতুন এসেছি। খাসজমি উদ্ধারসহ কিছু কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সেই কার্যক্রমগুলো শুরু করতে গিয়ে দেখি যে বিভিন্ন ধরনের রোষানলের শিকার হচ্ছি। অডিওতে এখানে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা আছে, এটা কোন জায়গায়, কোন প্রেক্ষিতে করা হয়েছে, এটাও আমি পুরোপুরি বুঝতে পারছি না। আমি সিনিয়র স্কেল পরীক্ষার জন্য এই মুহূর্তে ঢাকায় অবস্থান করছি। পরীক্ষা দিয়ে আগামী মঙ্গলবার স্টেশনে যাব। গেলে বুঝতে পারব, বিষয়টি কী হয়েছে।’


অডিও কথোপকথন থেকে জানা যায়, নাজিরপুর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের ভূমি সহকারী তহশিলদারদের নিয়ে গত জুলাইয়ে বৈঠক করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান। বৈঠকে তিনি ভূমি সহকারী তহশিলদারদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখন আমাকে পরিষ্কার করে একটি বিষয় আপনাদের অবগত করতে হবে, আমি ইউএনও স্যারের চাপে আছি। ধরেন, আমার অফিস থেকে নামজারিতে অতিরিক্ত আদায় বন্ধ করা হলো। আপনারা পার কেইসে যে ডিল করেন- এটা আপনারা নিশ্চিত করবেন কীভাবে যে আপনারা টাকা নিচ্ছেন না? আপনাদের মতামত শুনি। আপনারা কী চান? কত করে নেওয়া হোক? খোলামেলা আলোচনা করেন, মতামত দেন সবাই এখানে উপস্থিত আছেন। যদি বলেন স্যার, আপনি যদি না করে দেন, তাহলে নিশ্চিত করব আমরা কোনো টাকা-পয়সার লেনদেন করব না। কিন্তু বাস্তবে এটা কখনো হবে না। আপনারা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন। কাজ করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই মানে খরচা আছে এবং বিভিন্ন ধরনের বিষয় আছে। যেটার কারণে এটা নিতে হচ্ছে বা নিচ্ছেন। এটা কমবেশি সবাই নিচ্ছে। কিন্তু এটা যে এই অফিসে দেওয়া হইতেছে বিধায় আপনারা এটাকে বড় আকারে একটা কিছু করবেন, এই ধরনের অভিযোগ আসলে আমার জন্য বিব্রতকর। আমার প্রস্তাব হচ্ছে পার নামজারিতে আমার অফিসে ৪ হাজার করে দিবেন আপনারা অফিসে দেড় হাজার করে রাখবেন।


জানা যায়, জমি খারিজ বা নামজারি করতে সরকার নির্ধারিত খরচ ১ হাজার ১৭০ টাকা হলেও নাজিরপুরের বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়গুলোর তহশিলদাররা দলিল ভেদে নেন ৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ নামজারির আবেদনের জন্য কোর্ট ফি ২০ টাকা, নোটিশ জারি ফি ৫০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি ১ হাজার টাকা ও প্রতি কপি মিউটেশন খতিয়ান সরবরাহ বাবদ ১০০ টাকার বাইরে আর কোনো খরচ নেই। তবে চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ না দিলে ভূমি কার্যালয় থেকে জমির নামজারি করতে পারেন না বলে অভিযোগ আছে অনেকেরই। এমনকি ভুক্তভোগীরা আরো জানান, জমির খাজনা (দাখিলা) দেওয়ার জন্য গেলেও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দিতে হয় ঘুষ।


এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ডা. সঞ্জীব দাস বিবার্তাকে বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। অভিযোগটি খুব গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্তে যদি ঘটনার সত্যতা প্রমাণ হয় তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


বিবার্তা/রোমেল/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com