২৪৮ বছর ঐতিহ্যের খোয়াসাগর দীঘি এখন বিনোদন কেন্দ্র
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯:৪৯
২৪৮ বছর ঐতিহ্যের খোয়াসাগর দীঘি এখন বিনোদন কেন্দ্র
সুমন দাস, লক্ষ্মীপুর
প্রিন্ট অ-অ+

বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণের জন্য ১৭৭৫ সালে লক্ষ্মীপুরে একটি দীঘি খনন করা হয়- যার বিস্তৃতি ২২ একর। দীঘিটির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত কুয়াশাচ্ছন্ন দেখায়। কুয়াশাকে স্থানীয়ভাবে খোয়া বলা হয়। এছাড়া দীঘির পানি সাগরের মতোই-এ দুইয়ে মিলেই নামকরণ হয় খোয়াসাগর দীঘি। লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের উপকণ্ঠের ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে দালাল বাজার এলাকায় লক্ষ্মীপুর-রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই খোয়াসাগর দীঘি।


দীঘিটিকে ঘিরে মানুষের মুখে মুখে রহস্যময় গল্প প্রচলিত আছে। এটি খননের পর পানি পান করতে নেমে নববধূ উধাও হয়ে যায়। পরে সবার মুখে রটে যায় এ কাহিনী। সময়ের পরিক্রমায় ইতিহাস হয়ে লক্ষ্মীপুরের পরিচিতি বয়ে বেড়াচ্ছে দীঘিটি।


সাম্প্রতিক সময়ে জেলার অন্যতম প্রধান নান্দনিক বিনোদন কেন্দ্র খোয়াসাগর দীঘি। এটি এখন খোয়াসাগর দীঘি পার্ক হিসেবে বিশেষ পরিচিত হয়ে উঠেছে। দর্শনার্থীদের পদচারণায় দীঘি এলাকা অঘোষিত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে বিনোদন পিপাসুদের ভিড়। বিশেষ করে শুক্র-শনিবারসহ ছুটির দিনগুলোতে উপচে পড়া ভিড় হয় এখানে। জেলার বিভিন্নস্থান থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা একটু সময় পেলেই প্রাকৃতিক পরিবেশ আর নির্মল বাতাসের জন্য ছুটে আসেন এখানে।



সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুরে কোন পর্যটন কেন্দ্র নেই। এজন্য সম্প্রতি পর্যটন মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের আর্থিক সহায়তায় দীঘি এলাকায় বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর উত্তর, পশ্চিম পাশে গাইডওয়াল এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। দীঘিমুখী করে খোলা আকাশের নিচে চেয়ারে দর্শনার্থীদের বসা ও সোলার ল্যাম্পপোস্টের মাধ্যমে রাত্রিকালীন আলোর ব্যবস্থাও করা হয়। দিঘিতে ঘোরার জন্য কয়েকটি নান্দনিক ছোট নৌকাও রয়েছে। পাড়ে রঙ-বেরঙের ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। ওয়াকওয়েতে রেলিং দিয়ে শিশুদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি টাকার কাজ করা হয়েছে বলে প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে। বাকি কাজও চলমান। এ অবস্থায় প্রতিদিনই বিনোদনপিপাসু দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে।


লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মামুন বিন জাকারিয়া বিবার্তাকে বলেন, পরিকল্পিত উন্নয়ন হলে দীঘির সৌন্দর্যে দেশ-বিদেশের মানুষও মুগ্ধ হবে। গত এক বছরে এর দুইপাড়ে ৫-৬ টি চাইনিজ রেঁস্তোরা গড়ে উঠেছে। শিশুদের মনোমুগ্ধকর বিনোদনের জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে শিল্পাঙ্গণ।


কাগজপত্র ঘেঁটে এবং প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দালাল বাজারের জমিদার ব্রজ বল্লভ রায় স্থানীয় লোকজনের বিশুদ্ধ পানি চাহিদা মেটাতে জল সংরক্ষণের জন্য ১৭৭৫ সালে দিঘিটি খনন করেন। সে সময়  পালকি করে নববধূ নিয়ে বরযাত্রী দিঘিটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। দূরের পথ হওয়ায় বধূটি দিঘির জলে তৃষ্ণা মেটানোর ইচ্ছে প্রকাশ করে। একপর্যায়ে তিনি (বধূ) পালকি থেকে নেমে জল পান করতে দিঘিপাড়ে যায়। অঞ্জলি ভরে জল পান করার সময় দীঘির নিচ থেকে কে যেন তাকে টেনে নিয়ে যায়! এরপর আর ওই বধূকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে দিঘির ইতিহাস জানা গেলেও বর-নববধূর নাম-পরিচয় অজানাই রয়ে গেছে। যুগে যুগে প্রচণ্ড খরাতেও নববধূ হারিয়ে যাওয়া দীঘির সেই অংশটুকু কখনো শুকায়নি।


স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বিশাল দীঘির পশ্চিমে রাস্তার পাশে সনাতন ধর্মালম্বীদের দুটি মঠ রয়েছে। সেই মঠগুলো পরিচর্যা করে দর্শনার্থীদের জন্য দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা সম্ভব। যা ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করবে।


নোয়াখালীর চৌমুহনী এসএ কলেজের ছাত্র আবদুল মান্নান বিবার্তাকে বলেন, আমি আগে খোয়াসাগর দিঘির নাম শুনেছি। কিন্তু কখনো আসা হয়নি। এখন দিঘিরপাড়ে সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে শুনে দেখতে এলাম। অন্যরকম অনুভুতি, বেশ ভালো লাগছে। রাতেও সময় কাটানোর জন্য দারুণ জায়গা। দীঘির চারপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করলে সৌন্দর্য বাড়বে কয়েকগুণ ।



লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক নজরুল ইসলাম ভুলু বিবার্তাকে বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল প্রথম খোয়াসাগর দীঘি ও দালাল বাজার জমিদার বাড়ির সংরক্ষণে উদ্যোগ নেন। এরপর জেলা প্রশাসন দীঘি ও জমিদার বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করে। এই প্রাচীন দীঘিকে ঘিরে গড়ে ওঠা বিনোদন কেন্দ্রকে পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি।


লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাশাসক (ডিসি) মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বিবার্তাকে বলেন, খোয়াসাগর দীঘি পার্কটি এখন জেলাবাসীর বিনোদনের অন্যতম স্থান। দীঘির পাশে রায়পুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে বাঁকটি সোজাকরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়। এটি বাস্তবায়ন হলে সড়কটি দীঘির পার্কের সাথে সম্পৃক্ত হবে।


বিবার্তা/রোমেল/জেএইচ


 


 


 


 


 


 


 


 


 


 

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com