
পিতা-মাতার খেদমত করা ইসলামে একটি মহান ইবাদত। এ কাজের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা ও রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেকবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বিশেষত শীতকালের কঠিন পরিবেশে তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়া আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ, যা আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার পথ প্রশস্ত করে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাদের একজন বা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে পৌঁছে যায়, তবে তাদের প্রতি উহ্ শব্দটুকুও করো না এবং তাদের ধমক দিও না; বরং তাদের সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে কথা বলো। (সুরা বনি ইসরাইল: ২৩)
এ আয়াতে পিতা-মাতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাদের খেদমতের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়েছে। শীতকাল, যা অনেক ক্ষেত্রেই প্রবীণদের জন্য শারীরিক ও মানসিক কষ্টের সময়, এই আয়াতকে জীবনে বাস্তবায়নের উত্তম সময়।
হাদিসের আলোকে পিতা-মাতার খেদমত
রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘পিতা-মাতা সন্তানের জান্নাতের দরজা। চাইলে তুমি এই দরজাটি খুলে নাও বা নষ্ট করো।’ (তিরমিজি: ১৯০০)
এ হাদিসে জান্নাতের সঙ্গে পিতা-মাতার খেদমতের সরাসরি সম্পর্কের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শীতকাল হলো এমন এক ঋতু, যখন ঠান্ডাজনিত অসুস্থতা, আরামদায়ক পোশাক এবং খাবারের প্রয়োজন বৃদ্ধ হয়। এ সময়ে তাদের আরামের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া আমাদের জন্য সওয়াবের দরজা খুলে দিতে পারে।
শীতকালে পিতা-মাতার জন্য বিশেষ খেদমত
১. গরম পোশাক ও আরামের ব্যবস্থা: প্রবীণদের শরীর শীতের ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। তাদের জন্য গরম কাপড়, কম্বল বা শীত তাড়ানোর যন্ত্রপাতি (যেমন: রুম হিটার) ব্যবস্থার মাধ্যমে আরাম নিশ্চিত করা জরুরি। আল্লাহ বলেন, তোমরা যা কিছু ভালো কাজ করবে, আল্লাহ তা জানেন। (সুরা বাকারা: ১৯৭) এমন কাজ তাদের খুশি করবে এবং আল্লাহর কাছে তা একটি উত্তম সওয়াব হিসেবে গৃহীত হবে।
২. পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ: শীতকালে সুস্থ থাকার জন্য পুষ্টিকর ও গরম খাবার বিশেষ প্রয়োজন। প্রবীণদের জন্য গরম দুধ, স্যুপ, মধু এবং খেজুর ইত্যাদির ব্যবস্থা করা তাদের প্রতি যত্নশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
৩. শারীরিক ও মানসিক যত্ন: শীতকালে প্রবীণদের শরীর শক্তিহীন হয়ে পড়ে। হালকা ব্যায়ামে উৎসাহ দেওয়া, প্রয়োজনীয় তেল মালিশ করা এবং প্রয়োজন হলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা তাদের আরামদায়ক জীবনের জন্য অপরিহার্য। পাশাপাশি, মানসিকভাবে তাদের সঙ্গ দেওয়া, গল্প করা এবং তাদের প্রয়োজনগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনা তাদের সুখী রাখতে সাহায্য করে।
৪. দোয়া ও আখিরাতের জন্য প্রস্তুতির কথা স্মরণ করানো: পিতা-মাতার জন্য তাদের জীবনের এই পর্যায়ে বিশেষ দোয়া করা এবং তাদের আখিরাতের প্রস্তুতিতে সহায়তা করা সন্তানের অন্যতম দায়িত্ব। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি জিনিস অব্যাহত থাকে: সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান এবং নেককার সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম: ১৬৩১)
৫. প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সেবার ব্যবস্থা করা: শীতের মৌসুমে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এ সময় পিতা-মাতার সুস্থতার জন্য চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা এবং তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র যথাসময়ে সরবরাহ করা সন্তানদের কর্তব্য।
৬. তাদের জন্য বেশি সময় দেওয়া: পিতা-মাতা বার্ধক্যে পৌঁছালে তাদের প্রয়োজন আমাদের সময় ও মনোযোগ। শীতের দীর্ঘ রাতগুলো তাদের সঙ্গে কাটানো তাদের মানসিক প্রশান্তি এনে দেবে।
পিতা-মাতার খেদমত আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। শীতকালে তাদের জন্য যত্নবান হওয়া আমাদের দ্বীনি ও মানবিক দায়িত্ব। কোরআন-হাদিসের নির্দেশনাকে জীবনে বাস্তবায়ন করে আমরা পিতা-মাতার দোয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। আসুন, আমরা শীতকালকে পিতা-মাতার খেদমতের জন্য বিশেষ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করি এবং জান্নাতের পথে অগ্রসর হই।
বিবার্তা/সাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]