যে গোনাহগার জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৩, ০৯:৫০
যে গোনাহগার জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

দুনিয়ার জীবনে যারা সফল পরকালের চিরস্থায়ী জান্নাতই তাদের শেষ ও চূড়ান্ত ঠিকানা। যারা দুনিয়ার জীবনে ব্যর্থ তাদের পরিণাম জাহান্নাম।


মানুষ যা-ই করুক জাহান্নামে যেতে চায় না। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে জাহান্নামে যেতে চান। আল্লাহ তাআলা নিজেও চান মানুষ যে জান্নাতের অধিবাসী হয়। সে কারণে যেসব কাজ জান্নাতের অন্তরায় তা তিনি কুরআন-সুন্নাহর নসিহতের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন।


হাদিসে বলা হয়েছে, এ সব গোনাহের কারণে মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না কিংবা জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না অথবা বলা হয়েছে, জাহান্নামে প্রবেশ করবে। ওইসব গোনাহগুলো হলো,


ইমান না আনা : হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইমানদার ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ সহিহ বোখারি ও মুসলিম


তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা ইমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না।’সহিহ মুসলিম : ৫৪


প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া : হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ সহিহ মুসলিম : ৪৬


অহংকার করা : নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ সহিহ মুসলিম : ৯১


চোগলখোরি ও পরনিন্দা : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চোগলখোর বা পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ সহিহ মুসলিম : ১০৫


তিনি আরও বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন সবচেয়ে খারাপ লোকদের দলভুক্ত হিসেবে ওই ব্যক্তিকে দেখতে পাবে, যে ছিল দুমুখো। যে একজনের কাছে এক কথা আরেকজনের কাছে আরেক কথা নিয়ে হাজির হতো।’ মুসলিম : ২৫২৬


আত্মহত্যা : নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবে। সেখানে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে তার বিষ তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যেকোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে।’ সহিহ বোখারি : ৫৪৪২


আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ সহিহ মুসলিম : ২৫৫৬


হারাম খাওয়া : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হারাম অর্থের মাধ্যমে (যে শরীরে) মাংস বৃদ্ধি পেয়েছে তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। অর্থাৎ যে ব্যক্তি হারাম অর্থ ও অবৈধ উপার্জন দ্বারা দেহ গঠন করেছে জাহান্নামের আগুনই তার প্রাপ্য।’ মিশকাতুল মাসাবিহ : ২৭০৩


উপকার করে খোঁটা : নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যে উপকার করে খোঁটা দেয়।’ সুনানে নাসায়ি : ৫৬৮৮


ঋণ পরিশোধ না করা : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কোনো ঋণগ্রস্ত মৃতের লাশ (জানাজার জন্য) নিয়ে আসা হলে জিজ্ঞেস করতেন, সে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করেছে কি না? যদি বলা হতো করেছে, তবে জানাজা পড়তেন। অন্যথায় (সাহাবিদের) বলতেন, তোমরা তোমাদের সাথীর জানাজা পড়ে নাও (কিন্তু তিনি নিজে তাতে অংশগ্রহণ করতেন না)। সহিহ মুসলিম : ১৬১৯


অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শহীদের ঋণ ছাড়া সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ সহিহ মুসলিম : ১৮৮৬


কঠোর প্রকৃতি ও কটূভাষী হওয়া : কঠোর প্রকৃতি ও কটূভাষী লোক এবং যে ব্যক্তি মানুষের কাছে এমন বিষয় নিয়ে গর্ব অহংকার প্রকাশ করে বেড়ায় প্রকৃতপক্ষে যা তার কাছে নেই, এগুলো গোনাহের কাজ। হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কঠোর প্রকৃতি ও কটূভাষী লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং ওই লোকও নয় যে এমনসব বিষয়ে মানুষের কাছে গর্ব অহংকার প্রকাশ করে বেড়ায় প্রকৃতপক্ষে যা তার কাছে নাই।’ সুনারেন আবু দাঊদ : ৪৮০১


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘২ শ্রেণির মানুষ জাহান্নামে যাবে। যাদের আমি এখনো দেখি নি। (রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে তাদের আত্মপ্রকাশ হয়নি) তারা হল-


এমন কিছু লোক যাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের মত লাঠি। তারা তা দিয়ে জনগণকে মারধর করবে।


 আর ওই সব উলঙ্গ-অর্ধ উলঙ্গ বেপর্দা নারী যারা (নিজেদের চলাফেরা ও বেশ-ভূষায়) মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করবে এবং নিজেরাও অন্য মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা উটের মত উঁচু হবে এবং একপাশে ঝুঁকে থাকা চূড়ার মতো কেশ রাশি শোভা পাবে। এ সব নারী জান্নাতে তো যাবেই না বরং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না অথচ বহুদূর থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।’ (মুসলিম)


যারা উল্লেখিত কাজগুলো থেকে তাওবাহ করে আল্লাহর পথে ফিরে আসবে। আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তাওবাকারী বান্দাদের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। উল্লেখিত গোনাহে জড়িত ব্যক্তি যদি এ গোনাহ থেকে ফিরে আসে এবং এর প্রতিকারমূলক কাজ করে এবং পুনরায় এসব গোনাহ না করে যথাযথভাবে তাওবাহ করে তবে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন। কেননা মহান আল্লাহ তাওবাহকারীকে ভালোবাসেন। বান্দাহকে ক্ষমা করতেও ভালোবাসেন।


উল্লেখ্য, আল্লাহ তাআলা নিজ দয়া ও ইনসাফের ভিত্তিতে এদের মধ্যে যাকে খুশি ক্ষমা করে দেবেন যদি সে শিরক থেকে দূরে থাকে। 


কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন-‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না, যে ব্যক্তি তাঁর সাথে শরিক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪৮)


তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মারা গেল যে, (জীবিত অবস্থায়) সে ভালো করে জানত, ‘আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনো সত্য মাবুদ নেই, সে ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম)


আবার পরকালের ফয়সালার সময় ঈমান থাকা সত্বেও আল্লাহ তাআলা যাদেরকে ক্ষমা করবেন না তাদেরকে তিনি জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন। পাপের শাস্তি ভোগ করার পর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।


কবিরা গোনাহে জড়িত ব্যক্তিরা প্রথম পর্যায়ে জান্নাতে প্রবেশকারীদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে না বরং জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করে পরিশেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কোনো তওহীদপন্থী ব্যক্তিই কাফেরদের মতো চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে না। আর এটাই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকিদাহ।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com