এই বঙ্গভূমিতে বাঙালীর স্বাধীনতার স্বাদ ভোগের স্বপ্ন সুপ্রাচীন এক পৌরাণিক উপাখ্যান। উর্বর পলিমাটি খুড়ে স্বপ্নের বীজ বোনা বাঙালী, ফল ভোগের সময় বঞ্চিত; প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। বঞ্চিত বাঙালী এই নিষ্পেষিত জীবন আর দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটাতে চেষ্টা করেছে, শ্রম দিয়ে, রক্ত দিয়ে, আবেগ দিয়ে। কিন্তু নেতৃত্বের অভাবে মুক্তি মেলেনি যুগ যুগান্তরেও।
নেতৃত্ব দিয়ে স্বপ্ন জয়ের চূড়ান্ত চেষ্টার পথে নির্ভীক পা ফেলে হেঁটে যাওয়া প্রথম মানুষটি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু তাঁর সীমাহীন সাহস,সুদৃঢ় মনোবল, ক্যারিসমেটিক নেতৃত্বগুণ আর বাঙালীর স্বাধীনতার স্বপ্নজয়ের আবেগ ও আত্মত্যাগের মনোবাসনা দিয়েই সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়াশীল শাসনযন্ত্র থেকে একটি শোষিত জনপদের ঘরে শুধু একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের বাসিন্দা হওয়ার গৌরবই এনে দেননি। পাশাপাশি উন্মুক্ত করেছিলেন অসাম্প্রদায়িকতা ও প্রগতিশীলতার খোলা জানালা।
ভাগ্যাহত বাঙালীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের ভিত বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে তৈরি হয়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংষ্কৃতিক উন্নয়নের যে আকাশচুম্বী অট্টালিকা বেড়ে উঠছিলো তা ধূলিসাৎ হয়ে যায় ১৫ আগস্ট ঘাতকদের তান্ডবে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এমন একটি সময়ে জন্মেছিলেন যখন উপমহাদেশীয় রাজনৈতিক উত্তাপ চরমে। সদ্যবিভক্ত দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাসহ বিশৃঙ্খলা ছিলো নিত্য ঘটনা। পিতা মুজিব তখন বিপ্লবী তরুণ। পিতার আন্দোলন-সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক জীবন, তাঁর কারাগারের দিনগুলো, কয়েকটি দিন মুক্তি মিললে পরিবারের সাথে ক্ষণকালের মিলন, এ সবই বঙ্গবন্ধুতনয়া শেখ হাসিনার শৈশবের স্মৃতি। যে স্মৃতি, অভিজ্ঞতা, শিক্ষা, শেখ হাসিনার পিতার মতো আদর্শিক, আপসহীন, নির্ভীক দেশপ্রেমিক হওয়ার মানচিত্র। '৭৫-পরবর্তী সময়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগে শেখ হাসিনা প্রবাসে থেকে বাঙালীর মুক্তির সেই স্বপ্নচিত্রই একেঁছিলেন, যা ছিলো বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন এবং বর্তমান সময়ের বাস্তব বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুকন্যা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে সেসব জনবান্ধব কর্মপন্থা হাতে নিয়েছিলেন, যা ছিলো আশাবাদী এই বাঙালীদের প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হাত থেকে সামগ্রিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংষ্কৃতিক মুক্তির রুপরেখা।
স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির চক্রান্ত আর ক্ষমতার এভারেস্ট ধুলিসাৎ করে জনগণ হৃদয়ের মনিকোঠায় স্থান দিয়েছিলেন জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখা হাসিনাকে। ক্ষমতায় এসেছিলো জনগণ,বাঙালীর স্বাধীনতার আকাশের ফিরে এসেছিলো হারানো নক্ষত্র,আলোকিত হয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নে,সমৃদ্ধিতে জ্বলে উঠেছিলো নক্ষত্রের উজ্জ্বলতায়।
তারপর বাংলার বাতাস আবার ভারী হয়ে উঠেছিলো স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিষবাষ্পে। গণতন্ত্রের শুভ্রতায় পড়েছিলো জলপাই রঙের থাবা, বুটের তলায় পিষ্ট হয়েছিলো স্বাধীনতার নীল প্রজাপতি।
এই অন্ধকার সময়গুলোতেও আলো হাতে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। বন্দুকের নলকে তুচ্ছ করে স্বপ্ন বাস্তবায়নের লড়াই করেছেন, দিন-রাত, পাড়া-মহল্লায়, গ্রামে- গঞ্জে।
চক্রান্তের দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর ক্ষমতালোভীদেরকে জনশক্তি দ্বারা পরাজিত করে তিনি বিজয়ের নতুন নিশান উড়িয়েছেন পুনরায়। ফিরে এসে তখনও অনেকটা কাজ বাকী। অনেক প্রতিশ্রুতি পূরণের অপেক্ষায়, অনেক স্বপ্ন তখনও চক্রান্তের জালে বন্দী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে বাঙালীর গ্লানি মোচন অধ্যায়ের শুরু করেছিলেন শেখ হাসিনা।
শৈশব থেকে দেখে আসা সাম্প্রদায়িকতা-প্রতিক্রিয়াশীলতার নষ্ট চলচ্চিত্রের দাপট থামিয়েছেন তিনি আদর্শিক কঠোরতায়। তৈরি করেছেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বাস্তবচিত্র। জঙ্গি দমনে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশ। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ গঠনে, 'একটি বাড়ি একটি খামার' সহ নানা জনবান্ধব প্রকল্প চলমান। মৌলিক চাহিদা পূরণে তিনি হাতে নিয়েছেন নানা মেগা প্রকল্প। প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১০ টাকা মূল্যে চাল দিয়েছেন। শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে, উপবৃত্তি মায়ের মোবাইল ফোনে পাঠচ্ছেন তিনি।
খাদ্যচাহিদা পূরণ করে রপ্তানিতেও অবদান রাখা এখন সম্ভবপর। সুকৌশলী চক্রান্তের মুখোশ উন্মোচন করে নিজেদের অর্থায়নে দৃশ্যমান স্বপ্নের পদ্মাসেতু। ফ্লাইওভারগুলো জ্যাম কমাচ্ছে রাজধানী ঢাকার। চার লেন হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ কয়েকটি মহাসড়ক। রাজধানীকে গতিশীল করতে চলছে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ।
মিয়ানমারের কাছ থেকে সমুদ্রসীমা বিজয়। ভারতের সাথে ছিটমহল সমস্যার সমাধান। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিকতা আর সাহসিকতা দেখিয়ে বিশ্বব্যাপী উপস্থাপন করে মাদার অব হিউম্যানিটি খ্যাতি পেয়েছেন। কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক স্মীকৃতি প্রদান। প্রত্যেক গ্রামকে শহরে পরিণত করার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ ইতিমধ্যে অগ্রসরমান।
এশিয়ান হাইওয়ে প্রকল্পের কাজ চলছে। জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বর্তমানে এদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বাংলাদেশ প্রবাদতুল্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা।
উন্নয়ন সমৃদ্ধি আর সম্ভাবনার এই বাংলাদেশ কৃষকে মুখে হাসির বাংলাদেশ। শ্রমিকের চোখে শান্তির বাংলাদেশ। গণমানুষের চোখে শত সংগ্রামে পাওয়া কাঙ্খিত স্বপ্নের সুখী সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক ডিজিটাল বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণের পথে অগ্রসরমান বাংলাদেশ। আমাদের কাছে বাঙালীর স্বপ্নযাত্রার দুর্গম পথের নির্ভীক বিজয়ী অভিযাত্রী বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।
জন্মদিনে শুভেচ্ছা এই দশকে ভীষণ গর্বে গর্জে ওঠা বাঙ্গালীর স্পর্ধার শক্তি সঞ্চারণের মহীয়সী নারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
লেখক : সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিবার্তা/শারমিন/হুমায়ুন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]