
দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে এ সম্মেলনকে ঘিরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। সম্মেলনে পদপ্রত্যাশীরাও শেষ মুহূর্তের দৌঁড়ঝাপ অব্যাহত রেখেছেন। কারা আসছেন নেতৃত্বে? কোন এলাকা পাচ্ছে প্রাধান্য? সংকটকালীন সময়ে কার কী অবদান? কার পারিবারিক ঐতিহ্য কী? এসব নানা আলোচনায় সরগরম এখন ছাত্রলীগের রাজনীতি।
আগামী ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের এই জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ২৭ নভেম্বর, রবিবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে আগামী ৮ ও ৯ ডিসেম্বর দুই দিনব্যাপী ছাত্রলীগের এই জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এরমধ্যে ৮ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং ৯ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। ২১ নভেম্বর, সোমবার বেলা ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ।
মূলত, ৪ নভেম্বর (শুক্রবার) ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। পরে ১৫ নভেম্বর, মঙ্গলবার তা ৩ তারিখের পরিবর্তে ৮ ডিসেম্বর করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৯ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় সফরে জাপান যাওয়ার কথা ছিল। যার কারণে সম্মেলন পিছিয়ে ৮ ডিসেম্বর নেয়া হয়। কিন্তু ওই সফর বাতিল হওয়ায় সম্মেলনের তারিখ ৬ ডিসেম্বর করা হয়েছে।
এদিকে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে যেন ঘুম নেই পদপ্রত্যাশীদের। সম্মেলনের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে, পদপ্রত্যাশী ও কর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস, আকাঙ্ক্ষা ততই বেড়ে চলেছে। সংগঠনের শীর্ষপদ পেতে পদপ্রত্যাশীরাও শেষ মুহূর্তের দৌঁড়ঝাপ অব্যাহত রেখেছেন। সবাই যার যার অবস্থান থেকে আওয়ামী লীগ হাইকমাণ্ডের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন। তারা সংগঠনের জন্য নিজেদের ত্যাগ ও ইতিবাচক দিকগুলো বিভিন্নভাবে প্রচার করছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রলীগের এবার নেতৃত্ব নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি নেতা বাছাইয়ে নেতৃত্ব দিবেন।
এদিকে ছাত্রলীগের বিগত সম্মেলনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনে কয়েকটি বিষয় দেখা হয়। তার মধ্যে- পারিবারিক পরিচিতি, নিয়মিত ছাত্রত্ব, সংগঠনের জন্য ত্যাগ ও এলাকা। নেতৃত্ব নির্বাচনে অন্যান্য যোগ্যতার পাশাপাশি এলাকার বিষয়টি বিশেষ প্রাধান্য পেয়ে আসছে। সেক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন বিভাগের পদপ্রত্যাশীরা আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।
ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়ে বিবার্তা২৪ডটনেটের ধারাবাহিক আয়োজনের আজ ৭ম পর্ব। সম্মেলনে নেতৃত্বের দৌড়ে ময়মনসিংহ অঞ্চলে আলোচিত যারা, তাদের নিয়ে।
ছাত্রলীগের সম্মেলনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ২০১১-১৫ পর্যন্ত এইচ.এম. বদিউজ্জামান সোহাগ ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সিদ্দিকী নাজমুল আলম সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরমধ্যে সাধারণ সম্পাদক নাজমুল জামালপুরের অর্থাৎ এই অঞ্চলের ছিলেন। এরপর ছাত্রলীগের দুইটি কেন্দ্রীয় কমিটি হলেও ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে শীর্ষ নেতৃত্ব আসেনি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এই অঞ্চলের। ফলে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে ফের নেতা আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে বিগত দুই কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেতা না আসায় এবার এখান থেকে একজন কেন্দ্রীয় নেতা আসার সম্ভাবনার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।
আলোচনায় যারা
ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে আলোচনায় আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি সোহান খান, কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস,ঢাবির আইন অনুষদ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. শরীফুল হাসান শুভ,ছাত্রলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক সুরাপ মিয়া সোহাগ, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপ সম্পাদক রাশিদ শাহরিয়ার উদয় এবং স্কুল ছাত্র বিষয়ক উপ-সম্পাদক শাকের আহমেদ আল আমিন,সহ সম্পাদক এসএম রাকিব সিরাজী।
কেমন নেতৃত্ব চান আলোচিত পদপ্রত্যাশীরা?
ছাত্রলীগের সম্মেলন ঘিরে ভাবনা জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সোহান খান বিবার্তাকে বলেন, ছাত্রলীগকে শক্তিশালী করার জন্য আগামীতে যে ৩০তম সম্মেলন হচ্ছে, সেই সম্মেলনে আমরা চাচ্ছি- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতৃত্ব অর্থাৎ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অবশ্যই যেন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়, যে নেতৃত্ব তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখবে। দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে জড়িত থেকে সংগঠনের জন্য যাদের অবদান আছে, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও জনপ্রিয় ছাত্রনেতাই যেন ছাত্রলীগের আগামীর চেয়ারে বসে, এটাই মাননীয় নেত্রীর কাছে আমার প্রার্থনা।
কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস বিবার্তাকে বলেন, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে বলতে চাই,মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী,দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও সংগঠনের প্রশ্নে আপসহীন,জামায়াত বিএনপি ও উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সর্বদাই সোচ্চার এবং যারা সংগঠনের সংকটে পাশে ছিল,দীর্ঘদিন রাজপথে যাদের শ্রম -ঘাম আছে, তৃণমূল কর্মীদের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে, এমন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করি। সর্বোপরি দেশরত্ন শেখ হাসিনা'র অবিকল্প সাহসী অভিযাত্রায় সারথী, যারা লড়াকু পথযাত্রায় কাজ করবে এমন নেতৃত্বের হাতেই উঠুক শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির মশাল।
ঢাবির আইন অনুষদ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. শরিফুল হাসান শুভ বিবার্তাকে বলেন, ছাত্র নেতৃত্ব আসুক এমন- বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ ও বাস্তবায়নে কাজ করবে, আদর্শ, চরিত্রবান, সৎ, মেধাবী ও নিষ্ঠাবান হবে। একইসাথে সাধারণ ছাত্রদের অধিকার আদায়ে কথা, তাদের সাথে মিশতে হবে। এক্ষেত্রে পরিশ্রমী ও সৎ ছাত্রদের মূল্যায়ন করতে হবে, যারা বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য ছাত্র সমাজকে এক সাথে নিয়ে কাজ করার যোগ্যতা রাখেন।
বিবার্তা/রাসেল/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]