বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখার অপরাজেয় জীবনীশক্তির আধার সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করার এক সুদুরপ্রসারী চক্রান্তেরই অংশ ছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ড। দেশকে দুর্বল, খর্বিত, নিঃস্ব ও আত্মবিশ্বাসহীন করার প্রথম ধাপ ছিল এ হত্যাকাণ্ড। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে পঙ্গু করতেই পিলখানায় সুক্ষ্ম কৌশলে বেছে বেছে দক্ষ ও দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের এক সাথে করে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, দুনিয়ার কোনো যুদ্ধে এক সাথে এতো সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার নজির নেই। ২৫ ফেব্রুয়ারীর সেনা হত্যাযজ্ঞ ছিল আমাদের সেনাবাহিনীর শৌর্য, শক্তি ও অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার একটি ভিনদেশী মাষ্টারপ্ল্যান। এই ঘটনায় দেশীয় তাবেদার’রা মীর জাফরের ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিল।
তিনি বলেন, এটি ছিল বাংলাদেশের জন্য এক ঘন অন্ধকারতম অধ্যায়। এই বেদনাদায়ক ঘটনায় আমরা সকলেই মুহ্যমান ও শোকে ভারাক্রান্ত। পিতার শুণ্য আসনের দিকে তাকিয়ে আজো তাদের সন্তানদের একরাশ দীর্ঘনিঃশ্বাস ঝড়ে পড়ে। ওই নির্মম হত্যাযজ্ঞ ছিল দেশের গৌরব ও মর্যাদার প্রতীক সেনাবাহিনীর জন্য একটি বিপর্যয়ের দিনই নয়, বরং তাদের জন্য ছিল এটি একটি অশুভ বার্তা।
তিনি বলেন, এটাই প্রথম নয়, সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৫ থেকেই। সেই সময় ক্যান্টনমেন্টে সুপরিকল্পিতভাবেই বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয়া হয়েছিল। ৭৫ সালের ৬ নভেম্বর দিনে ও রাতে বেশ কিছু সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সেই সময় রুখে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। ৭ নভেম্বর, সিপাহী জনতা সম্মিলিত বিপ্লবের মাধ্যমে দেশকে উল্টো পথে নেয়ার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছিলো।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, দীর্ঘ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও জবাব মেলেনি এ হত্যাকান্ড সম্পর্কিত অনেক প্রশ্নের। গত ১২ বছর যাবত প্রতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারী সেনা হত্যাযজ্ঞের দিনটি কিছু সাধারণ কর্মসূচির মাধ্যমে পার হয়ে যায়। এই হত্যাকান্ডে যে তদন্তগুলো হয়েছিল, এর পূর্ণাঙ্গ কোনো তদন্ত এখনো জাতির সামনে প্রকাশ করা হয়নি। বিশেষ করে সেনাবাহিনী যে তদন্ত করেছিল, সেই তদন্ত এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ফলে, স্বাভাবিকভাবে জাতির সামনে প্রশ্ন থেকেই গেছে এই ভয়াবহ রক্তাক্ত ঘটনার পেছনে মূল কারা ছিল, পরিকল্পনাকারী কারা ছিল, কারা লাভবান হয়েছে ? এগুলো রহস্যজনকভাবেই উদঘাটন করা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, পূর্ব পরিকল্পিত পিলখানা হত্যাকা-ের ঘটনায় অনেকের সাজা হয়েছে, আবার অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের অনেকের জড়িত থাকার কথা শোনা গেলেও সেগুলোকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি এখনও রহস্যের কুয়াশায় ঢাকা। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে-এই মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের ঘটনার পর্দার পেছনের কুচক্রীরা অধরাই থেকে গেছে।
বিবার্তা/জাহিদ/এনকে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]