কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা নতুন কিছু নয়। ক্রমবর্ধমান কাজের চাপে অনেককেই মেজাজ হারাতে বা রাগারাগি করতে দেখা যায়। কিন্তু দীর্ঘকালীন মেয়াদে বড়সড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে এটি। শারীরির অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিক অসুস্থতার কারণও হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের কথায়, কাজকে উপভোগ করতে হবে। কিন্ত এই কাজের জায়গা যদি অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে, তা হলে নানা সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলি দেখা দিলেই বুঝতে হবে, এবার ব্যক্তিগত জীবন ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে কাজের জায়গা বা সংশ্লিষ্ট কাজটি। আসুন, দেখে নেয়া যাক সেই লক্ষণগুলো!
কাজে অনীহা
কাজের তেমন ইচ্ছে নেই। ছুটি হলেই যেন প্রাণে বাঁচা যায়। কিংবা রোজ দেরিতে অফিস পৌঁছনো একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলি কিন্তু ভালো লক্ষণ নয়। এর মানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার কাজটি উপভোগ করছেন না। তাই এই বিষয়গুলিতেও গুরুত্ব দিতে হবে। একঘেয়েমি কাটাতে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসা যেতে পারে। কোনো অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকলে, মন খুলে কথা বলতে হবে সংশ্লিষ্ট সিনিয়র বা অফিস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। এতে কর্মক্ষেত্রের হারিয়ে যাওয়া ইচ্ছে বা উৎসাহ ফিরে আসতে পারে।
একঘেয়ে ওয়ার্ক কালচার
মনে হয়, যেন যন্ত্রের মতো কাজ করছে সবাই। একটা হেলদি ওয়ার্ক কালচারের অভাব রয়েছে। রোজ যথাসময়ে অফিস পৌঁছনোর পর মেইল, অ্যাসাইনমেন্ট, টানা কাজ আর ছুটি- এর বাইরে জীবন নেই। বস বা কলিগদের মধ্যেও কোনো হাসি-ঠাট্টা নেই। এই রকম পরিবেশে দীর্ঘ দিন কাজ করলে মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যস্ত হতে পারে। তাই এই বিষয়গুলি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
নানা শারীরিক সমস্যা
অধিকাংশ কাজে আট-ন'ঘণ্টা টানা শিডিউল। কাউকে আবার সমানে কম্পিউটারের সামনে বসে টাইপ করে যেতে হয়। কেউ কাজের চাপে ডেস্ক ছেড়ে উঠতেই পারেন না। এর জেরে পেশিতে ব্যথা, গ্যাসের সমস্যা, হেডেক-সহ একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্তি কাজের চাপে ঘুমেরও সমস্যা হয়। এর জেরে নানা ক্রনিক ডিজিজ দেখা দিতে পারে। এগুলি বড়সড় মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অল্পেই বিরক্তবোধ
কাজের চাপে স্বভাব, আচার-আচরণেও প্রভাব পড়ে। ধীরে ধীরে একটা হতাশা বাড়তে থাকে। আমাদের অনুকূলে কিছু না হলেই রেগে যাই আমরা। অনেকে আবার অল্পেই বিরক্ত হয়ে যান। তাদের অর্থহীন রাগ বা খারাপ ব্যবহারের শিকার হন আশপাশের প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব বা সহকর্মীরা।
ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ আর অবসাদ
কাজের চাপ বাড়লে ক্রমেই উদ্বেগ বাড়তে থাকে। এর জেরে একসময়ে গভীর অবসাদে ভোগার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে প্রায়শই অযথা মাথা গরম হয়ে যাওয়া কিংবা সহকর্মীদের সঙ্গে অযথা ঝামেলা হতে পারে। কথা কাটাকাটি হতে পারে। আর এগুলি হওয়া মানেই বুঝতে হবে সংশ্লিষ্ট চাকরিটি ধীরে ধীরে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠছে। কাজের চাপ থেকে জন্ম নেয়া এই অবসাদ থেকেই একসময়ে দুঃখ, নিরাশা এমনকি আত্মহত্যার মনোভাবও জন্মায়।
এই ধরনের কোনো উপসর্গ দেখলেই তড়িঘড়ি মানসিক রোগবিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া উচিত। ভালো কোনো কাউন্সেলিং সেশনে যোগ দেয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে কাজ থেকে ছুটি নিয়ে কয়েকদিনের জন্য বাইরে থেকে ঘুরে আসা যেতে পারে। আর নিতান্ত খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হলে, ব্রেক নেয়াটাই শ্রেয়। পরে আবার নতুন করে কাজ শুরু করতে হবে- পুরনো সংস্থায় বা নতুন কোথাও!
বিবার্তা/অনামিকা/জাই
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]