শিরোনাম
পেঁচা: একটি রাতের পাখি
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১৮:৩৩
পেঁচা: একটি রাতের পাখি
অনামিকা রায়
প্রিন্ট অ-অ+

পেঁচা কথাটি শুনলে আপনার মনে ভাল ও মন্দ দুই ধরণের কথা মনে পড়ে যায় । কিছু পেঁচাকে সৌভাগ্যের চিহ্ন হিসাবে আবার কিছু পেঁচাকে দুঃখের কারণ বলে মানুষ মনে করে । লক্ষ্মী পেঁচাকে আমরা সবাই সৌভাগ্যের প্রতীক ও হুতুম পেঁচাকে অলক্ষ্মী বলে ভেবে থাকি । আদিম যুগে মানুষ পেঁচাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেছেন ও তাঁর পুজো করেছেন । বাঙালিদের লক্ষ্মীর বাহন হিসাবে পেঁচাকে স্থান দেওয়া হয়েছে । মা লক্ষ্মীর বাহন হওয়ার আগে থেকেও পেঁচার পুজো করা হত।


লক্ষ্মীর বাহন হিসাবে পেঁচা এসেছে আলেকজান্ডারের পরে পশ্চিম সীমান্তবর্তী গ্রিক রাজাদের মুদ্রা থেকে । লক্ষ্মীর বাহন হিসাবে পেঁচাকে ভাবার কারণ হল যে – পেঁচা শস্যক্ষেত্রে বিভিন্ন পোকামাকড়, ইঁদুর, ব্যাঙ ও বিভিন্ন শস্য নস্টকারী প্রাণীদের খেয়ে ধ্বংস করে বলে । একজোড়া পেঁচা পাঁচ বছরে প্রায় তিন হাজার ইঁদুর হত্যা করতে পারে । প্রাচীন রোমের দেবী ‘মিনার্ভা’র হাতে পেঁচা থাকে । তাঁকে জ্ঞানের ও জাদুর প্রতীক হিসাবে মনে করা হয় । আবার পেঁচা গ্রিসের শান্তি ও জ্ঞানের দেবী এথেনার বাহন হিসাবে দেখা যায় । খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সালে ইজিপ্টে একটি কাঠের কফিনে একটি অদ্ভুত দেখতে পেঁচার ছবি পাওয়া গিয়েছে । আবার মধ্য-পশ্চিম আমেরিকায় একটি পাহারের গুহায় প্যালিওসিন যুগের পেঁচার ফসিল পাওয়া গিয়েছে ।


পেঁচার বয়স কত এটা জানলে আপনি অবাক হতে বাধ্য। একদল গবেষকদের মতানুসারে – পেঁচা ডাইনোসরদের থেকে ৩৫০০ বছর আগে পৃথিবীতে জন্ম হয়েছিল । পেঁচা নাকি ডাইনোসরদের থেকেও পুরনো । প্রত্নতাত্ত্বিকরা পেঁচার জীবাশ্ম বিচার করে দাবি করেন যে – পেঁচার বয়স ৬ কোটি বা তাঁর থেকে বেশি হবে । বিশেষজ্ঞদের মতে পেঁচার বয়স আরও বেশি হতে পারে বলে তাঁর মনে করেন ।


পেঁচা সম্পর্কে আরো কিছু অজানা তথ্য-


১. পেঁচা যে সাঁতার কাটে এটা হয়তো আপনাকে অবাক করবে। কিন্তু অবাক হলেও এটা সত্যি।গ্রেট হর্ন্ড পেঁচাসহ কিছু প্রজাতির পেঁচারা পানিতে সাঁতার কাটতে পারে। শিকার ধরতে প্রায়ই পেঁচাকে জলাশয়ের কাছাকাছি যেতে হয় এবং পালক ভিজে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু পেঁচার মতো ভারী পালকের পাখির পক্ষে ভেজা পালক নিয়ে ওড়া সম্ভব না। তখন এরা ডানার সাহায্যে সাঁতরে তীরে পৌঁছায়।


২. পেঁচাকে সাধারণত আমরা রাতের পাখি বলেই জানি। কিন্তু সব পেঁচা নিশাচর না। গ্রেট গ্রে, নর্দান হক্‌, নর্দান পিগমিসহ পেঁচার আরও কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে যারা দিনের বেলা শিকার করে। তবে এদের নিশাচর না হওয়ার জন্য দায়ী বিবর্তন। কারণ, এরা যেসব অঞ্চলে বসবাস করে সেখানে রাতের বেলা তেমন কোনো শিকার পাওয়া যায় না।


৩. পেঁচার ঘাড়ের বৈশিষ্ট্য বিস্ময়কর। এদের ঘাড়ে ১৪টি অস্থিসন্ধি থাকে। মানুষের ঘাড়ে থাকে এর অর্ধেক। এ অনন্য দেহ বৈশিষ্ট্যের জন্য পেঁচার ঘাড় ২৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘুরে যেতে পারে। এ দক্ষতা পেঁচাকে টিকে থাকতে সাহায্য করে। এরা সহজে চোখ নাড়াতে পারে না। ফলে ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশের উপর নজর রাখতে হয় এদের।


৪. কিউবার ‘জায়ান্ট আউল’ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আকৃতির পেঁচা। এদের উচ্চতা প্রায় সাড়ে তিন ফুট। তবে এরা অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং গবেষকরা নিশ্চিত না যে এরা উড়তে পারতো কিনা। যদি এদের ওড়ার ক্ষমতা থাকতো, তবে এদেরকেই বলা যেত উড়তে জানা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাখি। কিউবার বনাঞ্চলে এদের দেহাবশেষ আবিষ্কার করেন গবেষকরা।


৫. মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিতে পেঁচা অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে। এসব অঞ্চলের পেঁচাদের প্রধান শিকার ইঁদুর। আর এই ইঁদুর হচ্ছে ফসলের শত্রু। ইসরায়েল, জর্ডান ও প্যালেস্টাইন অঞ্চলে কৃষিজমির আশপাশ দিয়ে পেঁচার জন্য বাসা বানিয়ে রাখা হয়। এক জোড়া পেঁচা বছরে গড়ে ছয় হাজার ইঁদুর শিকার করে।


৬. কিছু কিছু পেঁচার নকল চোখ থাকে, যেমন- নর্দান পিগমি আউল। এদের চোখের রং উজ্জ্বল হলুদ। কিন্তু এদের মাথার পেছনে কালো রঙের কিছু পালক আছে যা দেখলে অবিকল চোখ বলে মনে হবে। শিকারি প্রাণীকে বিভ্রান্ত করে এ নকল চোখ।


৭. আর্কটিকে বসবাসকারী তুষার পেঁচারা শীতের মৌসুমে দক্ষিণ দিকে তিন হাজার মাইল পর্যন্ত ভ্রমণ করে।


৮. পেঁচা দুই কানে দুই রকম শব্দতরঙ্গ শনাক্ত করতে পারে।


৯. নারী পেঁচারা আকৃতিতে পুরুষ পেঁচার চেয়ে বড়।


১০. পেঁচারা বাসা তৈরি করতে পারে না। এরা বেশিরভাগ সময়ই গাছের কোটরে বসবাস করে। অন্য পেঁচার পরিত্যক্ত গাছের কোটরই বেছে নেওয়া পছন্দ পেঁচাদের।


নিঃসঙ্গ দ্বীপ ছাড়া পৃথিবীর সব স্থানেই প্যাঁচা দেখা যায়। বাংলাদেশে ১৭টি প্রজাতির প্যাঁচা পাওয়া যায়, যার মধ্যে ২৫টি স্থায়ী এবং ২টি পরিযায়ী। প্যাঁচা মূলত নিঃসঙ্গচর।


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com