শিরোনাম
সুস্থ হয়ে উঠো প্রিয় বসুন্ধরা
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২০, ১৯:৩০
সুস্থ হয়ে উঠো প্রিয় বসুন্ধরা
অনামিকা রায়
প্রিন্ট অ-অ+

কোনও প্রাণীই সে যে জায়গায় বসবাস করে, তার ক্ষতি করে না। সেখানকার পরিবেশ বাঁচিয়ে চলে। কিন্তু আমরা আমাদের বাসস্থান, এই পৃথিবীর সঙ্গে বিরাট প্রশ্নচিহ্ন জুড়ে দিয়েছি। পৃথিবী জুড়ে বর্জ্যের পাহাড় তৈরি করে ফেলেছি। লকডাউনে পৃথিবীর রূপ-রং কতটা বদলেছে তার সাক্ষী প্রায় সকলেই। কিন্তু পৃথিবীর শরীর যে ভাঙতে বসেছে! এখনও যদি তাকে পুনরুদ্ধার করার উদ্যোগ না নেওয়া হয়, ভবিষ্যতে এ বাসস্থানই ধ্বংসের সম্মুখীন হতে বাধ্য। তাকে সুস্থ করে তুলতে দরকার সুপরিকল্পনা।


সাসটেনেবল লিভিং:যা সাসটেন করবে অর্থাৎ আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে, সেটাই সাসটেনেবল লিভিং। সহজ ভাবে পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন বলা যায়, যাতে পৃথিবীর ক্ষতি না হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে আমাদের গ্রামগুলো ঘুম থেকে উঠে পড়ে। তারপর যে যাঁর কাজ সেরে সূর্যাস্তের কিছু পরেই খেয়েদেয়ে ঘুম। এঁরা বেশিরভাগ মাটির হাঁড়িতে রান্না করে খান। নিজের জমিতে আনাজ উৎপন্ন হয়, তাই কীটনাশকও শরীরে প্রবেশ করে না। এর সবটুকু শহুরে জীবনে মেনে চলা সম্ভব নয়। কিন্তু অনুপ্রেরণা নেওয়া যায়। কী ভাবে, সেটাই জেনে নেওয়া যাক। বিষাক্ত কৃত্রিম জিনিস দূরে সরিয়ে প্রাকৃতিক বিকল্প বেছে নেওয়া যায়।


প্লাস্টিকের পরিবর্তে: পরিবেশবিদরা মনে করছেন সকলের আগে বর্জনীয় প্লাস্টিক। পরিবর্তে কাপড়, পাট বা বাঁশের তৈরি জিনিস ব্যবহার জরুরি। বাজারে প্লাস্টিক না নিয়ে জুট বা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে যেতে পারেন। এতে আপনিও পরিবেশের কথা ভাবলেন, আবার যে মানুষগুলো এসব তৈরি করে থাকেন তাদের রুজির সংস্থানও হল। চিকিৎসকদের মতে, প্লাস্টিকে করোনা-ভাইরাস বাঁচে প্রায় তিন দিন। সেখানে সুতির ব্যাগ বাড়ি এনে কেচে নিলেই বিপদমুক্ত। কিন্তু ইতিমধ্যেই যে পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে জমা হয়েছে পৃথিবীর বুকে, সেই দূষণ কী সহজে কমানো সম্ভব?


উপায় পুনর্ব্যবহার: যে পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য জমেছে, তা রিসাইকল করা ছাড়া উপায় নেই। ব্যবহৃত পণ্য রিসাইকল করে নতুন পণ্য তৈরি করা যায়। তাতে করে নতুন পণ্য তৈরি হবে আবার বর্জ্যও কম হবে।


জ়িরো ওয়েস্ট: রোজ পরিবার-পিছু কতটা বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, সে দিকে খেয়াল রাখুন। রান্নাঘরের বর্জ্যের মধ্যে মূলত থাকে তরকারির খোসা। সেটা কমপোস্ট করে গাছের সার তৈরি করা যায়। এমন ভাবে জিনিস বাছুন, যা থেকে কোনও ওয়েস্ট তৈরি হবে না। এই চিন্তা মাথায় রেখেই জিরো ওয়েস্ট বাজার তৈরি করা যায়।


বৃক্ষরোপন: চারপাশে তাকালেই বুঝতে পারবেন গাছ না বাড়ি, কোনটা বেশি চোখে পড়ে। অথচ সেই পাড়ার বছর কুড়ি আগের ছবি দেখলে চমকে উঠতে হয়। গাছ কেটে, পুকুর বুজিয়ে মহীরুহ-সমান বিল্ডিং। তাই বাড়ির আশপাশে বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নিতে পারেন। তাতে করে সে জায়গার তাপমাত্রাও কমবে অনেকটা। উৎসব-অনুষ্ঠান উপলক্ষে নিজ নিজ এলাকায় গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়াই যায়। নিজের বাড়িতেও ফলাতে পারেন রোজকার আনাজপাতি, যাতে ক্ষতিকর কীটনাশক থাকবে না। ছোট ছোট পদক্ষেপে জীবনযাপনেও বদল আনতে পারেন।


যে পদক্ষেপ জরুরি:


• যাতায়াতের জন্য ই-বাইক বা সাইকেল ব্যবহার বাড়াতে পারেন। পেট্রোল-ডিজ়েলের দূষণ নেই এতে।


• অনেক রেস্তরাঁ মাটির পাত্রে বা কাগজের কৌটোয় খাবার ডেলিভারি করে। সেটা জেনেও অর্ডার দিতে পারেন।


• ৫০ মাইক্রনের কম ঘনত্বযুক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।


• বাড়িতে অতিথি সমাগমে প্লাস্টিক বা থার্মোকলের পরিবর্তে কলাপাতা, শালপাতার থালার ব্যবস্থা রাখুন।


• রাস্তায় বেরোনোর সময়ে বাম্বু-স্পুন বা নিজের একটি চামচ ক্যারি করতে পারেন। স্ট্র ও প্লাস্টিকের চামচ রোজ কয়েক টন বর্জ্য তৈরি করে।


• স্যানিটারি ন্যাপকিনও প্রকৃতিতে মেশে না। তাই ইকোফ্রেন্ডলি ন্যাপকিন ব্যবহার করতে পারেন। শিশুদের ডায়পারও একই ধরনের বর্জ্য তৈরি করে। কৃত্রিম ডায়পারের বদলে কাপড়ের ডায়পার ব্যবহার করুন।


প্রত্যেকে এগিয়ে এলে পৃথিবীর স্বাস্থ্য ফিরতে ও রূপ খুলতে বেশি সময় লাগবে না। তখন এই সুন্দর, সুস্থ পৃথিবীই হবে আমাদের আগামীর বাসস্থান।


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com