করোনা মহামারীর মধ্যেই গত ২ জুলাই বাংলাদেশ সরকার মোট ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে। এই দুর্যোগ মোকাবেলায় পৃথিবীর অনেক দেশ যেখানে বিপুল পরিমান প্রণোদনা দিয়ে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছে, বাংলাদেশ সরকার সেখানে উল্টো এক অমানবিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রায় ২৫ হাজার স্থায়ী এবং ২৫ হাজার অস্থায়ী শ্রমিককে কর্মচ্যুত করে মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
অথচ ৪ মাস অতিবাহিত হলেও এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের পাওনা মজুরি এখনো পরিশোধ করা হয়নি। মিলগুলো খুলে দেয়ার ব্যাপারেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা আসেনি। প্রশাসনের এই সীমাহীন গাফিলতি এবং অবহেলার কারণে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক ও তাদের পরিবার দীর্ঘ সময় ধরে অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ ও মিলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে তারা এই করোনার মধ্যেও আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।এমনকি এ বছর ২৫শে মার্চ রাতে দিনাজপুরে পুলিশের গুলিতে মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত একজন পাটকল শ্রমিক নিহত হন।
৪ অক্টোবর বিকাল ৪টায় পাটকল রক্ষায় এবং বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে শ্রমিকদের পূর্ব নির্ধারিত একটি কফিন মিছিল বের হওয়ার কথা ছিল। সকালে হঠাৎ করেই আন্দোলনের তিনজন সংগঠককে পুলিশের ভ্যানে করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আবার শ্রমিক সমাবেশ এবং মিছিল যেন হতে না পারে, সেজন্য বিকেলে ছাত্রলীগ পুলিশের সাথে একত্রিত হয়ে মিছিল এবং শ্রমিক দমন-নিপীড়নের নেমে পড়ে। সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা ৫ জনকে বেদম মেরে পুলিশের কাছে তুলে দেয়। স্টার জুটমিলের শ্রমিক জামির আলম; প্লাটিনাম জুটমিলের শ্রমিক ফারুক, শ্রমিক ছাত্র জনতা ঐক্যের রুহুল আমিন, সুজয় শুভ, নিয়াজ মোর্শেদ দোলন, এবং সুন্দরবন কলেজের ছাত্র তানিম আমিন এবং খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র তাইমকে প্রায় ৮ ঘন্টা আটক রেখে ছেড়ে দেয়া হয়। আমরা পুলিশ এবং সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের এই বর্বরোচিত যৌথ হামলা ও ধরপাকড়ের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
আমরা বলতে চাই, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও অন্যান্য পাওনাদি পরিশোধে গড়িমসি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। শ্রমিকরা শতভাগ ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছেন। অথচ বেতন ভাতা পরিশোধ করার বদলে ধরপাকড়, গ্রেফতার করে নাগরিকের মিছিল করার নূন্যতম অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়া হচ্ছে।
আমরা দাবি জানাচ্ছি অবিলম্বে এই ধরণের হামলা, গ্রেফতার, হয়রানি বন্ধ করা হোক। সকল শ্রমিকের বকেয়া বেতন অবিলম্বে পরিশোধ করুন এবং দুর্নীতি মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যবস্থাপনায় বন্ধ হওয়া ২৫টি মিল অতি সত্বর চালু করুন।
বিবৃতিতে অনলাইনে ই-স্বাক্ষর করেছেন- ১. হামিদা হোসেইন, শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকারকর্মী ২. মেঘনা গুহঠাকুরতা, গবেষক, অধিকার কর্মী ৩. খুশি কবির, মানবাধিকার কর্মী ৪. ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী ৫. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আইনজীবী ৬. সারা হোসেইন, আইনজীবী ৭. ফরিদা আখতার, নারী আন্দোলন কর্মী ৮. মোহাম্মদ তানজিমুদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৯. সামিনা লুৎফা, ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় ১০. মোশাহিদা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১১. মাহা মির্জা, লেখক, গবেষক ১২. আজফার হুসেইন, শিক্ষক, গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেইট ইউনিভার্সিটি ১৩. ফাহমিদুল হক, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৪. মাইদুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৫. আরিফুজ্জামান রাজীব, ইটিই বিভাগ, বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ ১৬. রুশাদ ফরিদী, সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৭. সায়েমা খাতুন, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ১৮. কাজী মারুফুল ইসলাম, অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯. আ-আল মামুন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ২০. গীতি আরাা নাসরীনগণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২১. কামরুল হাসান, অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২২. বখতিয়ার আহমেদঅধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, রাবি ২৩. রেহনুমা আহমেদ, লেখক, নৃবিজ্ঞানী ২৪. অধ্যাপক স্বপন আদনান, SOAS, ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন ২৫. ফইজুল হাকিম, চিকিৎসক, রাজনৈতিক সংগঠক ২৬. ড. লুৎফুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ২৭. মির্জা তাসলিমা সুলতানা, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ২৮. মাহমুদুল সুমন , শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশবিদ্যালয় ২৯. সাঈদ ফেরদৌস,শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৩০. রোবায়েত ফেরদৌস, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৩১. শাহীন আনাম, অধিকারকর্মী ৩২. দিনা সিদ্দিকী, শিক্ষক, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় ৩৩. ড. আইনুন্নাহার, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৩৪. জোবাইদা নাসরিন, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৩৫. হানা শামস আহমেদ, গবেষক, অধিকারকর্মী ৩৬. পারভীন হাসান, শিক্ষক, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি ৩৭. নাফিসা তানজিম, শিক্ষক, লেসলি বিশ্ববিদ্যালয় ৩৮. সৌভিক রেজা, শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৩৯. সাদাফ নূর, শিক্ষক, চিটাগং বিশ্ববিদ্যালয় ৪০. রাইয়ান হাসান,পরিচালক, এনজিও ফোরাম অন এডিবি ৪১. অরূপ রাহী, লেখক, সঙ্গীতশিল্পী ৪২. লিসা গাজী, লেখক, সংস্কৃতি কর্মী ৪৩. বিনা ডি'কস্টা, শিক্ষক, অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় ৪৪. রেজাউর রহমান লেনিন, গবেষক এবং অধিকার কর্মী ৪৫. সুস্মিতা পৃথা, সাংবাদিক ও গবেষক ৪৬. মুক্তাশ্রী চাকমা, অধিকার কর্মী ৪৭. ঋতু সাত্তার, নাট্যকর্মী ৪৮. সুব্রত চৌধুরী, আইনজীবী ৪৯.ড. ফস্টিনা পেরেইরা, আইনজীবী ৫০. বীথি ঘোষ,সংস্কৃতি কর্মী ৫১. তানভীর মুরাদ তপু, আলোকচিত্রী ৫২. রুহি নাজ,অধিকার কর্মী ৫৩. মিজানুর রহমান, জনঅধিকারকর্মী ৫৪. মেহজাবিন রহমান,অধিকার কর্মী ৫৫. আলী মো. আবু নাঈম, লেখক, সংগঠক।
বিবার্তা/এসএ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]