১৬ জুলাই : বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কিত দিন
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৩, ১০:০৩
১৬ জুলাই : বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কিত দিন
মাহবুবউল আলম হানিফ
প্রিন্ট অ-অ+

দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা-কে।


১৬ জুলাই ভোরে সেনা সমর্থিত তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধানমন্ডির সুধাসদন থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে। কয়েকটি মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। সেখান থেকে শেখ হাসিনাকে সরাসরি জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে স্থাপিত সাবজেলে নিয়ে যাওয়া হয়।


কিন্তু কেন এই গ্রেফতার?


এবার একটু পেছনে ফেরা যাক। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত জোট সরকার সন্ত্রাস, দুর্নীতি, নির্যাতন ও লুটপাটের মাধ্যমে নরকে পরিণত করেছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে। গ্রেনেড, বুলেট, বোমায় শেষ করতে চেয়েছিল গণতন্ত্রের মানসকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকেই সমূলে নিশ্চিহ্ন করে আজীবন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্নে বিভোর ছিল বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়া।


বিএনপি জামায়াতের সীমাহীন দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং দুঃশাসনে জনগণ ফুঁসে উঠেছিলে বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিরুদ্ধে। জনরোষে ভীত হয়ে বিএনপি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার নীল নকশা আঁটে । জাল বিস্তার করে প্রহসনের নির্বাচনের। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তীব্র গণআন্দোলনের মুখে বানচাল হয়ে যায় এই ষড়যন্ত্রের নির্বাচন ।


এই সুযোগে সামরিক নেতৃত্বের সহায়তায় ক্ষমতা গ্রহণ করে তথাকথিত সুশীলদের ব্যানারে এক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। রচিত হয় কলঙ্কজনক ওয়ান-ইলেভেন বা এক-এগারোর পটভূমি। মাইনাস টু ফর্মূলার নামে মূলত মাইনাস ওয়ান তথা শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে নির্বাসনের এজেন্ডা বাস্তবায়নে মরিয়া ওঠে এরা। সেই নীল নকশারই অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে গ্রেফতার করা হয়।


একের পর এক সন্ত্রাস, জঙ্গি উত্থান, দুর্নীতি, অরাজকতা ও দুঃশাসনের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার নরকে পরিণত করেছিল বাংলাদেশকে। বহির্বিশ্বে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল বাংলাদেশকে নিয়ে। ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত এবং ১০০’রও বেশি আহত হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ানক গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি ঘটে। এতে নিহত হয় ২৩ জন, আহত হয় পাঁচ শতাধিক। রক্ষা পান জননেত্রী শেখ হাসিনা। এ হামলায় অংশ নেয় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের একটি অংশ। দেশজুড়ে এসব অরাজকতা-বিশৃঙ্খলা যারা করেছে তাদের রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে! জঙ্গিরা এখন আর বাংলাদেশে বড় ধরনের হামলা চালাতে সক্ষম নয় এবং প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে আধিপত্য বিস্তার করা বিএনপি-জামায়াতের মদদপুষ্ট ধর্মের অপব্যাখ্যাকারী এই সন্ত্রাসীগোষ্ঠী সক্ষমতা হারিয়েছে। কীভাবে সম্ভব হয়েছে? জননেত্রী শেখ হাসিনাই এটি সম্ভব করেছেন, তার নির্দেশ ও নির্দেশনায় বাংলাদেশে কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে জঙ্গিবাদ।


১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নৃশংসভাবে হত্যা করে বাংলাদেশে নেতৃত্বশূন্য এক অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল, একইভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে না দিয়ে, মামলা দিয়ে, গ্রেফতার করে, হত্যার চেষ্টা করে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যাকে অন্যায়ভাবে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কথা বলেন, বাংলার মানুষের কথা ভাবেন, দেশ-জাতির কল্যাণে এমন আত্মনিবেদিত আর আছে কে? ঠিক সে কারণেই ১৬ জুলাইয়ের এই কূটচাল ভেস্তে যায়।


জরুরি অবস্থার মধ্যে দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেষপর্যন্ত দেশরত্ন শেখ হাসিনা কে জামিনে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। প্রায় ১১ মাস কারাবন্দি থাকার পর ২০০৮ সালের ১১ জুন জামিনে মুক্তি পান তিনি। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা । শুরু হয় নতুন বাংলাদেশের পথচলা। উন্নয়ন অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে । চরম দরিদ্র দেশ আজ উননয়নশীল দেশ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।


স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ হাসিনা এবং গণতন্ত্র এক ও অভিন্ন সত্তা। শেখ হাসিনা অর্জন আর বিজয়ের ঠিকানা। তিনি রাষ্ট্রনায়ক থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতৃত্ব, সততা, যোগ্যতা ও কর্মগুণে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা এবং আস্থার ঠিকানা ।


শতায়ু হোন বঙ্গবন্ধু কন্যা- এটাই দোয়া ও প্রত্যাশা।


লেখক : মাহবুবউল আলম হানিফ,
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com