শিরোনাম
যার যার কর্মস্থলে ও বাসস্থানে গাছ লাগাবেন: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ : ২০ জুন ২০১৯, ১৪:৩৭
যার যার কর্মস্থলে ও বাসস্থানে গাছ লাগাবেন: প্রধানমন্ত্রী
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে কর্মস্থলে ও বাসস্থানে গাছ লাগানোর অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। দেশের উন্নয়ন করতে হবে। কিন্তু সেটা পরিবেশ নষ্ট করে নয়।


তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষায় যথেষ্ট সচেতন। আমাদের যত স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত আছে আমি সবাইকে অনুরোধ করব প্রত্যেকে যার যার কর্মস্থলে এবং বাসস্থানে কিছু গাছ লাগাবেন। আমাদের ছেলেমেয়েদেরকেও শেখাতে হবে।


তিনি সবাইকে একটি করে ফলদ, বনজ ও ভেষজ গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন।


রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা-২০১৯ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত আধুনিকায়ন হচ্ছে, যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে, আমাদের অবিবেচনাপ্রসূত কাজের ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আধুনিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমরা যা যা ব্যবহার করছি, তার কারণে পরিবেশে দূষণ ছড়াচ্ছে।


তিনি বলেন, সাবান, শ্যাম্পু, বডি স্প্রে, ডিটারজেন্ট, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, শিল্প কলকারখানা- সবকিছু থেকে দূষণ ছড়ায়। তবে আমরা পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হচ্ছি। উন্নয়ন দরকার, কিন্তু পরিবেশও রক্ষা করতে হবে। বৃক্ষরোপণ করতে হবে, জলাধার রক্ষা করতে হবে।


তিনি আরো বলেন, প্রত্যেকেই নিজের কর্মস্থল ও বাসস্থানে গাছ লাগাবেন। বনজ, ফলজ, ভেষজ গাছ লাগাবেন। ছেলেমেয়েদেরও বৃক্ষরোপণ শেখাতে হবে। শুধু গাছ লাগালেই হবে না, পরিচর্যাও করতে হবে। প্রত্যেকে নিজের এলাকায় যতো ইচ্ছে গাছ লাগাবেন। এতে কয়েক বছর পর টাকাও পাওয়া যায়, বছর বছর ফল পেলেও খুশি লাগে।


এ সময় শেখ হাসিনা আজিমপুর গার্লস স্কুলে পড়ার সময় বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে গাছ লাগানোর স্মৃতিচারণও করেন।


সুন্দরবন রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের কর্মসূচির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন। এই বন রক্ষণাবেক্ষণে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছি। সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বড় ভূমিকা রয়েছে। কারণ বনে বেশি বাঘ থাকলে অনেকে ভেতরে গিয়ে বনের ক্ষতিকর কিছু করার সাহস পায় না।


তিনি বলেন, সুন্দরবনকে রক্ষায় নদীর লবণাক্ততা দূর করতে হবে। লবণাক্ততা দূর হলে হোগলা বন বেড়ে যায়। আর হোগলা বনে বাঘের বিচরণ বেড়ে যায়। নদীর নাব্যতা বাড়ানোরও কাজ করা হচ্ছে।


তিনি আরো বলেন, আমরা ছোটবেলায় উখিয়ায় যাই, সেখানে কোনো রাস্তা ছিল না তখন। গভীর জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যেতে হতো। ফরেস্ট বাংলোতে আমরা উঠতাম, এর চারপাশে ঘন জঙ্গল ছিল। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের টেকনাফ-উখিয়ায় আশ্রয় দেয়া হলো। এখন বন শেষ।


শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮৪-৮৫ সাল থেকে প্রতিবছর কৃষক লীগের মাধ্যমে পহেলা আষাঢ় থেকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু হতো। সব কর্মীকে তিনটি করে গাছ লাগাতে বলা হতো। এটা আবার শুরু করবো।


তিনি বলেন, প্রতি বছরের মতো এ বছরও আমরা জেলা, উপজেলায় বৃক্ষমেলার আয়োজন করেছি। মানুষের মাঝে একটা ভালো রকমের উদ্যোগ দেখেছি। তারা হাটে গেলে গাছের চারা কিনে নিয়ে বাড়িতে গিয়ে লাগায়। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় তারা এটা করে।


জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, আমরা জানি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা জলবায়ু পরিবর্তনের একটা ধাক্কা আমাদের ওপর আসবেই। আমরা কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেরাই কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। এই জলবায়ু পরিবর্তন এখনো আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারছে না।


তিনি বলেন, কিন্তু আমরা যেহেতু দায়ী না, উন্নত দেশগুলো এজন্য দায়ী, ভুক্তভোগী হতে যাচ্ছে আমাদের মতো দেশকে। সেজন্য আমরা আমাদের নিজস্ব পরিকল্পনা, নিজস্ব অর্থায়নে উদ্যোগ নিয়েছি।


দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ভবিষ্যতেও যাতে না পড়ে, সেই পরিকল্পনা নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী সৃষ্টি এবং বনভূমির ডিজিটাল ম্যাপ করা হচ্ছে। সুন্দরবনসহ মোট ১৫টি রক্ষিত এলাকার ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কার্বন জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় লাগসই প্রকল্প গ্রহণের জন্য ‘কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান ২০১৬-২০২১’ প্রণয়ন করা হয়েছে।


তিনি বলেন, বনের পাশে এবং প্রান্তিক ভূমিতে বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে সামাজিক বন সৃষ্টি করা হচ্ছে। যেখানে সরকারি জমিতে বৃক্ষ রোপণ ও পরিচর্যাকারী ব্যক্তি বা সংগঠনকে বনজ সম্পদ থেকে আহরিত লভ্যাংশের ৭৫ শতাংশ দেয়া হয়। বাকি ২৫ শতাংশ সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হয়।


তিনি আরো বলেন, সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে সৃজিত বাগানে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬০১ জন উপকারভোগী রয়েছেন। যাদের মধ্যে মহিলা উপকারভোগীর সংখ্যা এক লাখ ২৮ হাজার ৪৬৭ জন। এ পর্যন্ত এক লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৪ জন উপকারভোগীর মধ্যে ৩৫৬ কোটি ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ৫২২ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।


অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন-২০১৯’, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৮ ও সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেক এবং একইসঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখার জন্য জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৯ বিতরণ করা হয়।


অনুষ্ঠানের শুরুতে পরিবেশ ও বনের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।


পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এতে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী।


বক্তব্য শেষে পরিবেশ ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃক্ষমেলার বিভিন্ন অংশ তিনি ঘুরে দেখেন। তিনি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে একটি তেঁতুল গাছের চারা রোপণ করেন।


পাশাপাশি গাজীপুরে শেখ কামাল ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টার ও পরিবেশ অধিদফতরের একটি ভবনও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com