শিরোনাম
‘অটিস্টিকদের প্রতিভা কাজে লাগালে তারাই হবে দেশের সম্পদ’
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০১৯, ১৪:৪৩
‘অটিস্টিকদের প্রতিভা কাজে লাগালে তারাই হবে দেশের সম্পদ’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অটিজম আক্রান্তরা সমাজের বোঝা না। প্রতিবন্ধী বা অটিস্টিক শিশুদের প্রতি দায়িত্বশীল এবং সহানুভূতিশীল হতে হবে। তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে দেশের সম্পদে পরিণত করতে হবে।


তিনি বলেন, অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের সুপ্ত প্রতিভাকে কাজে লাগাতে পারলে তারাই হবে আমাদের সম্পদ। তাদের অবহেলা করা যাবে না। তারা যাতে এগিয়ে যেতে পারে সে জন্য সমাজের সুস্থ সবাইকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।


তিনি আরো বলেন, আগামী বাজেটে দেশের ১৪ লাখ প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য ভাতার ব্যবস্থা করবে সরকার।


বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ১২তম বিশ্ব অটিজম দিবস ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান উপলক্ষে মঙ্গলবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।


দেশের সব বিভাগীয় শহরে অটিজম পরিচর্যা কেন্দ্র করার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্যায়ক্রমে দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে বৃহৎ পরিসরে এ ধরনের পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এসব কেন্দ্রে তাদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা, খেলাধুলাসহ সকল সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।


তিনি বলেন, পিতামাতা ও অভিভাবকহীন নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী মেয়েদের জন্য সরকার ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও বগুড়ায় ৫০ আসনের পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন করেছে।



তিনি আরো বলেন, প্রতিবন্ধীদের সুবিধার্থে ইতোমধ্যে মিরপুরে প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হয়েছে। সাভারে প্রতিবন্ধীদের জন্য স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের জন্য সংসদ ভবন সংলগ্ন জমিতে অনুশীলনের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়া তাদের বাবা-মায়ের অবর্তমানে দেখাশোনার জন্য প্রতিটি বিভাগে পরিচর্যা কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।


শেখ হাসিনা বলেন, একটা শিশু যখন জন্ম নেয় সে যে অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী হবে এটা তো ওভাবে জানা থাকে না। শিশুটা যখন জন্ম নেয় মাও দায়ী থাকে না, বাবাও দায়ী থাকে না। কেউই কিন্তু দায়ী থাকে না। শিশুটা সাধারণ মানুষের মতো হয়নি এটা আল্লাহতালার ইচ্ছা।


তিনি বলেন, অনেক সময় দেখি মায়ের ওপর দোষারোপ করা হয়। আশা করি ভবিষ্যতে মাকে আর কেউ অযথা দোষারোপ করবেন না। এটা মায়ের জন্য কষ্টের।


তিনি আরো বলেন, আমি এটুকুই চাইব, এই অবহেলিত জনগোষ্ঠী যেন আর অবহেলার শিকার না হয়। তারা যেন আমাদের সমাজে তাদের যোগ্য স্থান পায়। তারা আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই ভাই, বোন। সে কথাটা মনে করে সবাই অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধীদের সাথে নিয়ে চলবেন সেটাই আমি চাচ্ছি।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের আঁকা ছবি দিয়ে আমি প্রতিবছর ঈদ কার্ড করি। যাদের ছবি দিয়ে এই কার্ড করি তাদেরকে পারিশ্রমিকও দেয়া হয়। প্রতিবন্ধীরা যাতে ভালোভাবে চলতে পারে সে জন্য ট্রাস্টে বৃত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছি।



তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার সুরক্ষায় ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩’ এবং ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন ২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে। দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে ‘বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন ২০১৮’ অনুমোদন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকারবিষয়ক কর্মপরিকল্পনা ২০১৯ অনুমোদন দেয়া হয়েছে।


তিনি আরো বলেন, ‌জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে তার পিছিয়ে পড়া সন্তানদের এগিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম বিভিন্ন স্কুলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য ব্যবস্থা করেন। সেই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকারে থাকা এবং না থাকা উভয় অবস্থাতেই প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থ বছরে ১৪ লাখ প্রতিবন্ধী শিশুকে ভাতার আওতায় আনা হবে। এছাড়া বর্তমানে ১০ লাখ প্রতিবন্ধীকে প্রতিমাসে ৭০০ টাকা ভাতা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ৯০ হাজার শিক্ষার্থীকে বিশেষ ভাতা দেয়া হচ্ছে।


তিনি বলেন, বাংলাদেশ অটিজমবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন আমার কন্যা সায়মা ওয়াজেদের নিরলস প্রচেষ্টায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অটিজম বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে।


অটিজম ও প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখা ও প্রতিবন্ধীদের কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য ১১ জনকে পুরস্কার দেয়া হয়। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নীল বাতি প্রজ্জ্বলন করেন। এ সময় ‘আমরা করবো জয়’ গানটি বেজে ওঠে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির অধিকার’।


অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।


অটিজমে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০৭ সালে ২ এপ্রিলকে ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ হিসেবে পালনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর থেকে প্রতি বছর দিবসটি পালন করা হচ্ছে।


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com