সিভিল এভিয়েশনের ১১টি খাতের দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত এবং এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে সুপারিশমালাসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে হস্থান্তর করা হয়েছে।
দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান রবিবার সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর কাছে এই অনুসন্ধানী এবং পর্যবেক্ষণ মূলক প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
দুদকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
মোজাম্মেল হক বলেন, দুর্নীতির কারণসমূহ চিহ্নিত করে তা বন্ধে সুনির্দিষ্ট সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিশনের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিম এই অনুসন্ধানী এবং পর্যবেক্ষণমূলক প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন।
কমিশনার বলেন, একইভাবে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের জন্য গঠিত প্রাতিষ্ঠানিক টিম ওই প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ ও উন্নয়নমূলক কাজ, কনসালটেন্ট নিয়োগে, বিমানবন্দরের স্পেস অথবা স্টল ও বিলবোর্ড ভাড়া, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজসহ ১১টি খাতের দুর্নীতির উৎসের কথা উল্লেখ করেছে।
প্রতিবেদনে একইভাবে এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে ১১টি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়েছে।
এদিকে সিভিল এভিয়েশনের পাশাপাশি বিমানেরও আটটি খাতের দুর্নীতির উৎস এই প্রতিবেদনে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে আটটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা এই প্রতিবেদনে রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উড়োজাহাজ কেনা, ইজারা নেয়া ও নানা যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে ‘ব্যাপক দুর্নীতি’ হয়ে থাকে। উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনাকাটায় ‘শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি’ হয়ে থাকে। বিমানের আয়ের বড় খাত কার্গো সার্ভিস হলেও এ খাতে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কার্গো সার্ভিস খাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কোটি কোটি টাকা এয়ারওয়ে বিল কম পাচ্ছে। অনেক সময় বিমানের কার্গো সার্ভিসের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী আমদানি-রপ্তানিকারকদের যোগসাজশে ওজনে কম দেখিয়ে, আবার কখনও একক পরিবর্তন করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন।
দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, বিমানে যাত্রীরা অনেক সময় অতিরিক্ত ব্যাগেজ নিয়ে উঠেন। সেজন্য যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত মাশুল নেয়া হলেও জমা না দেখিয়ে ‘লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ’ করা হয়।
বিমানের টিকেট শেষ হওয়ার কথা বলা হলেও বিভিন্ন ফ্লাইটে আসন খালি থাকে বলেও দুদক দেখতে পেয়েছে। এজন্য বিমানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়ী করে প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্যান্য এয়ারলাইন্সের যোগসাজশে তাদের টিকিট বিক্রির সুবিধা করে দিতে বিমানের কর্মকর্তারা কমিশন নিয়ে এসব কাজ করে।
মোজাম্মেল হক বলেন, কমিশনের নির্দেশনা আলোকে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক টিম ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে এজাতীয় প্রতিবেদন প্রেরণ করে। দেশের উন্নয় এবং সমৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে দুর্নীতি দমনে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূতি উজ্জল করতে হলে সম্মিলিতভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে।
এসময় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী দুর্নীতি দমন কমিশনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, শুধু দুর্নীতি নয় যারা কাজে অবহেলা করবেন তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এই মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতিবাজদের কোন স্থান নেই।
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]