শিরোনাম
ভোট উৎসবের অপেক্ষায় দেশ
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৩১
ভোট উৎসবের অপেক্ষায় দেশ
ফাইল ছবি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আর মাত্র একদিন পর কাঙ্ক্ষিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। উৎসব মুখোর পরিবেশে শুক্রবার সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। এখন শুধু ভোট উৎসবের অপেক্ষায় পুরো দেশ। ৩০০ সংসদীয় আসনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য সার্বিক নিরাপত্তার ছক তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।


গত ১০ ডিসেম্বর থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হয় প্রচারণা উৎসব। টানা ১৯ দিন বিরামহীনভাবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে চষে বেরিয়েছেন প্রার্থীরা। এবারের নির্বাচনে মূলত দুটো জোটের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট। দুই জোটের প্রার্থীর বাইরে আরো কিছু দল নিজ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন।


প্রতীক বরাদ্দের পরপরই সারাদেশে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয়েছিল প্রচার-প্রচারণা। সেই উৎসবের সমাপ্তি ঘটেছে শুক্রবার সকাল ৮টায়। এখন শুধু শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের অপেক্ষায় আছেন নির্বাচন কমিশন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ভোটাররাও অপেক্ষায় আছেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তার ভোটটি ঠিকভাবে দেয়ার জন্য।


নির্বাচন কমিশনও তার সব প্রস্তুতি শেষ করেছে। দেশের প্রায় সব নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছে গেছে ব্যালট পেপার। আইনগত জটিলতার কারণে সীতাকুণ্ড আসনে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে শুক্রবার। দেশের মোট ছয়টি আসনে ভোট হবে ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন)।


ইসি সূত্রে জানা যায়, এবারের সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলই অংশ নিচ্ছে। দীর্ঘ ১০ বছর পর মুখোমুখি হতে যাচ্ছে রাজনীতিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তারা উভয়ই জোটবদ্ধভাবে ভোটে অংশ নিয়েছে। একক দল হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (হাতপাখা) সবচেয়ে বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে দলটির ২৯২ জন প্রার্থী রয়েছেন।


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল ও জোট মিলিয়ে ২৭২ জনকে নৌকা প্রতীক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এসব প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা আছেন ২৫৮ জন। বাকিরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর। তাদের বাইরে জোট শরিক জেপির দুজন নিজস্ব প্রতীকে (বাইসাইকেলে) ভোট করবেন।


আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়া জাতীয় পার্টি ২৬টি আসনে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া আলাদাভাবে লাঙ্গল প্রতীকেও নির্বাচন করছেন দলের অনেক প্রার্থী।


আওয়ামী লীগের ২৫৮ জনের পাশাপাশি ওয়ার্কার্স পার্টির পাঁচ, জাসদের তিন, তরিকত ফেডারেশনের দুই, বাংলাদেশ জাসদের এক ও বিকল্পধারার তিনজন নৌকা প্রতীকে ভোট করছেন।


অপরদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিকদের জন্য ৫৯টি আসনে ছাড় দিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা পেয়েছে ১৯টি আসন। ২০ দলীয় জোটের শরিকরা পেয়েছে ৪০টি আসন।


জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে গণফোরাম পেয়েছে সাতটি আসন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি চারটি, নাগরিক ঐক্য চারটি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ পেয়েছে চারটি আসন।


অন্যদিকে, ২০ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে জামায়াত ২২টি, এলডিপি ৫টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর নিবন্ধিত অংশ ৩টি ও অনিবন্ধিত অংশ ১টি, খেলাফত মজলিসের ২টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১টি, এনপিপি ১টি, পিপিবি ১টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ২টি এবং লেবার পার্টি ১টি আসন পেয়েছে।


এই তালিকার বাইরে দুটি আসনে বিএনপির সঙ্গে উন্মুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জামায়াত। ৩০০টি আসনের মধ্যে এবার ৬টিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ হবে। আসনগুলো হলো ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, খুলনা-২, রংপুর-৩ ও সাতক্ষীরা-২।


এবারের নির্বাচন বিভিন্ন দিক থেকে আলাদা। যেমন এবারই প্রথম সরকার ক্ষমতা থাকা অবস্থায় সব দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যদিকে প্রথম বারের মতো বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পরিবারের কেউ নির্বাচনে মাঠে নেই। তাছাড়া প্রথম বারের মতো জাতীয় নির্বাচনে ৬টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহৃত হচ্ছে।


একাদশ সংসদ নির্বাচনেও ছিলো নতুন মাত্রা। এবার সব দলের প্রার্থীরাই ডিজিটাল মাধ্যমে অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বড় হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন। সব দলের প্রার্থীই ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ভোটারদের কাছে নিজ দল ও প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন।


নানা অভিযোগ ও শঙ্কার মধ্যে দিয়ে প্রচার-প্রচারণা শেষে প্রার্থীরা এখন ভোটের প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছেন। আগামী রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে।


প্রচার প্রচারণার বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের এক নির্দেশনার আলোকে এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে সব রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৮ অনুসারে ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৪৮ ঘণ্টা ও ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে অর্থাৎ, ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে ১ জানুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত সব নির্বাচনী এলাকায় যে কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ ও মিছিল, শোভাযাত্রা করা যাবে না।


অর্থাৎ, সংসদ নির্বাচনের সব প্রচার কাজ বন্ধ করতে হবে ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টার আগেই। আর ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোনো প্রচারণা চালানো যাবে না।


এছাড়া যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণের আগের দিন রাত ১২টা থেকে ভোটগ্রহণের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় ট্যাক্সি ক্যাব, বেবিট্যাক্সি/অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো, লঞ্চ, ইজিবাইক, ইঞ্জিনবোট ও স্পিডবোটগুলোর চলাচলের ওপর উক্ত নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।


তবে সারাদেশে ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ২ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত ক্ষেত্র বিশেষ আরো অধিককাল মোটরসাইকেল বা অনুরূপ যান চলাচল নিষেধ থাকবে। এবার নিবন্ধিত ৩৯টি দলই প্রার্থী দিয়েছে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী যোগ হয়ে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১ হাজার ৮৪৭ জন।


বিবার্তা/শান্ত/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com