সারা দেশে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৪
সারা দেশে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

এক মাস সিয়াম সাধনার পর এল খুশির ঈদ। সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে এবার সারা দেশে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর।


ঈদ আনন্দের দিন হলেও বিগত বছরগুলোতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব পালনে ছিল নানা বিধি-নিষেধ তথা কড়াকড়ি। ছিল ভয়, শঙ্কা ও গ্রেফতার আতঙ্ক। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের জন্য দিনটি বয়ে আনত চাপা কষ্টের ও আতঙ্কের। কারণ উৎসবের দিনেও তারা পরিবারের সঙ্গে স্বাধীনভাবে দিনটি উদযাপন করতে পারেননি।


৩১ মার্চ, সোমবার সকালে ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা। কুশল বিনিময়, কোলাকুলি, স্বজনের কবর জিয়ারত, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে দেখা সাক্ষাৎ করে আজ সময় পার করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। বাংলাদেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় সোমবার ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় সামাজিক মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়। রেডিও-টেলিভিশনে, বেজে চলেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কালজয়ী গান, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’


রমজান মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সুসংবাদ নিয়ে আসে। মুসলমানরা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা চালান। পার্থিব জীবনে মুসলমানদের জন্য এটা অনেক বড় আনন্দের বিষয়। আরও আনন্দের বিষয় হচ্ছে মাহে রমজান শেষে খুশির ঈদ। কারণ এই ঈদ ফিতরা দিয়ে গরিবের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। ঈদ ধনী-গরিবের মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে।


রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত ছিল সকাল সাড়ে ৮টায়। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষও ঈদগাহের প্রধান জামাতে অংশ নিয়েছেন।


শনিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক শাহজাহান মিয়া সাংবাদিকদের জানান, এবার জাতীয় ঈদগাহে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। নারীদের জন্য নামাজের আলাদা জায়গা করা হয়েছে। মুসল্লিদের জন্য অজু করার জায়গা, শৌচাগার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করার জন্য আরামদায়ক কার্পেট বিছানো হয়েছে। তাই কাউকে জায়নামাজ সঙ্গে আনতে হবে না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা–সহায়তার জন্য দুটি মেডিকেল টিম থাকবে।


বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক ইমাম হিসেবে এ জামাতে দায়িত্ব পালন করেন। ক্বাবি হিসেবে ছিলেন বায়তুল মোকাররমের মুয়াজ্জিন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।


প্রধান ঈদ জামাত ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা নিরাপত্তার আয়োজন পর্য়বেক্ষণ করে আশ্বস্ত করেছেন।


যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামাতগুলোতে বিপুলসংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেন। প্রতিটি জামাত শেষে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহ’র কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।


সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল ৭টায় প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে আরও চারটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।


প্রথম জামাতে পেশ ইমাম হিসেবে হাফেজ মুফতি মাওলানা মুহিববুল্লাহিল বাকী এবং মুকাব্বির হিসেবে মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. আতাউর রহমান দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় জামাতে ইমাম হিসেবে সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান এবং মুকাব্বির হিসেবে প্রধান খাদেম মো. নাসির উল্লাহ দায়িত্ব পালন করেন। তৃতীয় জামাতে ইমাম হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস ড. মাওলানা মুফতি ওয়ালিউর রহমান খান এবং মুকাব্বির হিসেবে খাদেম মো. আব্দুল হাদী দায়িত্ব পালন করেন। চতুর্থ জামাতে ইমাম হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদ ও সংকলন বিভাগের সম্পাদক ড. মুশতাক আহমদ এবং মুকাব্বির হিসেবে খাদেম মো. আলাউদ্দীন দায়িত্ব পালন করেন। পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতে ইমাম হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মো. আব্দুল্লাহ এবং মুকাব্বির হিসেবে খাদেম মো. রুহুল আমিন দায়িত্ব পালন করেন।


এদিকে, বায়তুল মোকাররম মসজিদে ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কড়া। পুলিশ, র‍্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পুরো মসজিদ এলাকা কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখেন।


ঢাকা উত্তর সিটির উদ্যোগে পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে হবে ঈদ জামাত। সেখান থেকে বের করা হবে ঈদ আনন্দ মিছিল। হবে ঈদ মেলা। সংসদ ভবন এলাকায় হবে সাংস্কৃতিক আয়োজন।


এ ছাড়া রাজধানীসহ সারা দেশে ঈদগাহ ও পাড়া–মহল্লার জামে মসজিদগুলোতে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সবমিলিয়ে দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক পর প্রথমবারের মতো দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে, নিজেদের ইচ্ছামতো ধর্মীয় ও স্থানীয় সমৃদ্ধ সংস্কৃতির মেলবন্ধনে ঈদ উদযাপন করছে।


বিবার্তা/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com