
দেশের সংকটকালীন অবস্থা পার করে অবশেষে বাজারে এলো স্বস্তি। কমেছে সবজি ও মুরগিসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম। তবে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও অস্থির চাল-ডালের বাজার। শিক্ষার্থীদের বাজার তদারকি অব্যাহত থাকায় রাজধানীসহ চট্টগ্রাম, বরিশাল ও রাজশাহীতে বিভিন্ন পণ্যের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
তবে, ঢাকাসহ দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে অনেকটাই নীরবে বাড়ছে চালের দাম। খুচরায় বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) সব ধরনের চালের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা এবং প্রতি কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত মাসের তুলনায় বাজারে সব ধরনের সবজির দাম আগের চেয়ে কমেছে। তবে ২-৩ আইটেমের সবজির বর্তমানে মৌসুম না হওয়ায় সেগুলোর দাম কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা অর্থাৎ মিল ও পাইকারি পর্যায়ে সরবরাহ তদারকি করলে জিনিসপত্রের দাম কমতে পারে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আজকের সাপ্তাহিক ছুটির দিনের বাজারে প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, পেঁপে ৩০ টাকা, মিস্টি কুমড়া ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ২২০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা কেজি ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, জালি প্রতি পিস ৬০ টাকা, কাঁকরোল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া যেসব সবজির দাম কিছুটা বাড়তি সেই তালিকায় আছে করলা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, মূলা ৮০ টাকা, কচুর মুখি প্রতি কেজি ৭০, টমেটো ১৫০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা এবং কচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক হওয়ায় মুরগি, ডিম, মাছ ও সবজির দাম অনেকটাই কমে এলেও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ কেউ বলছেন, মিল মালিকদের কারসাজিতে চালের বাজারের এই অবস্থা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় প্রতি কেজি চিকন চাল (মিনিকেট) মানভেদে ৭২ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ব্রি-২৮ ও পাইজাম চাল প্রতি কেজি ৫৮ থেকে ৬২ টাকায় এবং নাজিরশাইল চাল প্রতি কেজি কেজি ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদর তথ্যেও চড়া দামে চাল বিক্রির বিষয়টি দেখা গেছে।
টিসিবির গতকাল বাজারদর প্রতিবেদনে দেখা যায়, সরু বা চিকন চাল মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭৮ টাকা।
পাইজাম চাল কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায়। গতকাল রামপুরা বাজারের একটি দোকান থেকে চাল কিনছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আলতাব হোসেন। তিনি জানান, জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে একই দোকান থেকে ৭৪ টাকা কেজি দরে মিনিকেট চাল কিনেছিলেন তিনি। গতকাল একই চালের জন্য তাকে কেজিপ্রতি ৭৮ টাকা দিতে হয়েছে।
আসলেই কী সবজির দাম কমেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, বাজারে সবজির দাম আগের তুলনায় কমেছে এ কথা ঠিক। এর মূল কারণ হলো পথে পথে যে সবজি পরিবহনের চাঁদাবাজি ছিল, কারণ বাজারেও বিভিন্ন জায়গায় যে টাকা দিতে হতো সেগুলো এখন দিতে হচ্ছে না। যে কারণে এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে সবজির বাজারে। এজন্যই সবজি বিক্রেতারা তুলনামূলক কম দামে সবজি বিক্রি করতে পারছেন। এছাড়া এলাকাভিত্তিক স্থানীয় বাজারগুলোতে শিক্ষার্থীরা এসে বাজার মনিটরিং করছে। সবমিলিয়ে আগের তুলনায় সবজির দাম বাজারে কমেছে।
রাজধানীর বাড্ডা বাজারের মুদি দোকানদার মো. হানিফ বলেন, ‘গত মাসে ছাত্রদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও কারফিউয়ের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় চালের দাম বেড়ে যায়। এখনো সেই বাড়তি দামেই চাল বিক্রি করা হচ্ছে।’ চালের বাজার আপাতত কমার কোনো লক্ষণ নেই বলেও তিনি জানান।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মেসার্স মান্নান রাইস এজেন্সির আব্দুল মান্নান বলেন, ‘চালের দাম জুলাই মাসে যা বেড়েছিল সেই অবস্থায় এখনো আছে। বর্তমানে চালের দাম কমেনি।’
রাজধানীর বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন বলেন, বাজারে চালের কোনো ঘাটতি নেই। মূলত এবার ধানের বাড়তি দামের কারণে মিলাররা চালের দাম বাড়িয়েছেন। যার প্রভাবে পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে।
এদিকে, বাজারে বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪০-৬০ টাকা বেশি দামে কিনছেন গ্রাহকেরা। তবে কয়েক ধরনের মাছ, ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি এবং ফার্মের মুরগির ডিমের দাম সামান্য কমেছে।
তবে আগের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে রসুন। দেশি রসুন কেজি ২২০ টাকায় এবং আমদানি করা রসুন কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ছোট দানার মসুর ডাল ১৪০ টাকায় এবং বড় দানার মসুর ডাল ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
সবজির আড়তদারেরা জানান, সহিংসতা ও ডাকাতির আশঙ্কায় গত সপ্তাহে সবজি পণ্যের সরবরাহ কম ছিল। এতে বিভিন্ন উৎপাদন স্থল বা পাইকারি মোকামে কম দামে সবজি বিক্রি হয়েছিল। এখন সবজির সরবরাহ ঠিক হয়েছে এবং সড়কে চাঁদাবাজিও নেই। এ কারণে বাজারে বর্তমানে ‘স্বাভাবিক দামে’ সবজি বিক্রি হচ্ছে।
তবে সাধারণ ভোক্তারা এ ধরনের কথা মানতে নারাজ। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে কথা হয় গৃহিণী আফরোজা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগের সরকার চলে যাওয়ার পর গত সপ্তাহে সবজির দাম অনেকটাই কম ছিল। ব্যবসায়ীরা এত সবজি লোকসানে তো বিক্রি করেননি; কিন্তু এখন আবার দাম বাড়ছে। বাজারে তদারকি থাকলে এই দাম বাড়ানো আটকানো যেত।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]