ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ইতিহাস, সাথে ৬০০ ছোট-বড় ভাস্কর্য
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৪, ১৩:০৬
ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ইতিহাস, সাথে ৬০০ ছোট-বড় ভাস্কর্য
মেহেরপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মেহেরপুরের মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ইতিহাস সহ ৬০০ ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। ভাঙা ভাস্কর্যগুলো এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।


৫ আগস্ট, সোমবার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে শতাধিক দুর্বৃত্ত হানা দেয় মেহেরপুরের মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে। এসময় তারা মহান মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যগুলো ভেঙে ফেলে।


ঐতিহাসিক এই স্থানটির ভাস্কর্যগুলো ভাঙচুর করায় নিন্দা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। নতুন যারা সরকারে আসবেন, তারা যেন দ্রুত ভাস্কর্যগুলো মেরামত করেন সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন স্থানীয়রা।


জানা যায়, ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী দেশের মানচিত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরকে ভাগ করে প্রায় ৬০০টি ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন চিত্র। দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে যান ঐতিহাসিক মুজিবনগরে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৫ আগস্ট বিকেল পাঁচটার দিকে শতাধিক যুবক রড, বাঁশ ও হাতুড়ি নিয়ে স্মৃতি কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে। প্রথম তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটির মাথা ভেঙে গুঁড়া করে ফেলে। একই সময়ে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে ‘১৭ এপ্রিলের গার্ড অব অনার’ ভাস্কর্যটিতে। আরও একটি দল ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের আত্মসমর্থনের ভাস্কর্যগুলোতে আঘাত করে। তবে সেখানে খুব বেশি ভাঙচুর করতে পারেনি তারা। পরে কমপ্লেক্সের মধ্যে দেশের মানচিত্রের আদলে তৈরি করা মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরে যুদ্ধের বর্ণনা সংবলিত ছোট ভাস্কর্যগুলো ভেঙে আশপাশে ছুড়ে ফেলে। আরও একটি দল শহীদ স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটকটি ভেঙে নিয়ে যায়।


মুজিবনগর কমপ্লেক্সের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য হ‌ুমায়ূন আহমেদ বলেন, ৬০০টি ছোট-বড় ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ ছিল ভাস্কর্যগুলো। প্রতিদিন কয়েক হাজার দর্শনার্থী এখানে আসতেন। কমপ্লেক্সের সব ভাস্কর্য ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কমপ্লেক্স জুড়ে চালিয়েছে লুটপাট।



মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়া আনসার সদস্য আজিমুদ্দিন শেখ ও সিরাজ উদ্দিন বলেন, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগরের বৈদ্যনাথতলা আম্রকাননে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা ও শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। তারা ওই সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়া সদস্য হওয়ায় প্রতি বছর অনেক দর্শনার্থী তাদের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে আসে। দেশের মানুষ যেসব ভাস্কর্য ও স্মৃতিসৌধ দেখার জন্য আসত, ভাস্কর্য ভেঙে ফেলায় তারা আর আসবে না। তাদের কথাও আর কেউ শুনবে না।


মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়া ১২ জন সদস্য ছিলেন। তাদের মধ্যে ১০ জনই মারা গেছেন। বাকি দুজন বেঁচে থেকে এই দৃশ্য দেখে গেলেন।


ভাস্কর্যগুলো ভাঙার সময় প্রশাসনের কাউকে তা রক্ষা করতে দেখা যায়নি। মানুষের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে পুলিশ প্রশাসন। আনসার সদস্য যারা ছিলেন তারা নিরুপায় হয়ে কমপ্লেক্স ছেড়ে পালিয়ে যান।


বিবার্তা/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com