কোটাবিরোধী আন্দোলন: আওয়ামী লীগের ১২ নেতা-কর্মীকে হত্যা, আহত কয়েক হাজার
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪, ২২:১৬
কোটাবিরোধী আন্দোলন: আওয়ামী লীগের ১২ নেতা-কর্মীকে হত্যা, আহত কয়েক হাজার
সোহেল আহমদ
প্রিন্ট অ-অ+

কোটাবিরোধী আন্দোলনে সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এর অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অন্তত ১২ নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আর হতাহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে কয়েক হাজার। এর মধ্যে অনেকেই গুরুতর অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দলের নেতারা বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছেন।


চলতি মাসের শুরুতে দানা বেঁধে কোটাবিরোধী আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয় ১৬ জুলাই। এদিন বিকেলে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে মারা যান ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী সবুজ আলী। কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী সবুজ উত্তর ছাত্রাবাসের ২০৫ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি নীলফামারী। আর রাত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষ ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা। সহিংস এসব ঘটনার রেশে রাজধানীসহ দেশজুড়ে তাণ্ডব চলে আরো পাঁচদিন।


১৯ জুলাই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশের আয়োজন করেছিল আওয়ামী লীগ। সেই সমাবেশে শতাধিক নেতা-কর্মীসহ যোগ দিতে আসছিলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু পথিমধ্যে উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের হামলার শিকার হন জাহাঙ্গীরসহ নেতা-কর্মীরা।


আন্দোলনকারীদের ইটের আঘাতে জাহাঙ্গীর আলমের মাথা থেতলে যায়। এসময় প্রতিরোধের চেষ্টা করতে গিয়ে মারধরের শিকার হন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত সহকারী ও গাছা থানা যুবলীগ নেতা জুয়েল মোল্লাকে বেধড়ক মারধর করে আন্দোলনকারীরা। মারধরের একপর্যায়ে তার মৃত্যু হলে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এঘটনায় জাহাঙ্গীরসহ আরো অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন নেতা-কর্মী হতাহত হন।


গত ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কোটা আন্দোলনের ক্ষতি চিত্র তুলে ধরেন। এসময় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কর্মীকে হত্যা করেছে। ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের নাজমুল হোসেন, ৬১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের শোভন, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের নূর আলম, আওয়ামী লীগ কর্মী রোমানকে হত্যা করা হয়েছে। জুয়েলকে হত্যা করে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছে। এই যে ঘটনাগুলো…।


তিনি বলেন, যে ক্ষতিগুলো হয়েছে। কারা করলো- এটা কোনও রাখঢাক ব্যাপার না। এখানে ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ছাত্রদের বিরুদ্ধে। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলমাল শুরু হয়েছে, আমি ছাত্রলীগকে বলেছি, তোমরা বের হয়ে চলে আসো। বেচারারা বেরিয়ে চলে এসেছে আর তাদের প্রত্যেকের রুম থেকে সমস্ত মালামাল ফেলে পুড়িয়ে দিয়েছে। মেরেছে। আমি বলেছি ধৈর্য ধরো।


সরকারপ্রধান বলেন, শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছে। ছাত্রলীগ করে কেন এ জন্য মেয়েদের পিলারের সঙ্গে বেঁধে মেরেছে। কত ধরনের ঘটনা ঘটেছে সেগুলি বলতে চাই না। তারপরও আন্দোলনকারীদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনেছি। যখন যে দাবি করেছে, তা মেনেছি। মানার পরেও তারা কী করবে জানি না। তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কারা পিছনে এই ঘটনা ঘটালো?


আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের দফতর সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত অন্তত ১২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আর আহত হয়েছেন আরো কয়েক হাজার নেতা-কর্মী। নিহতরা হলেন- ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী সবুজ আলী, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত সহকারী ও গাছা থানা যুবলীগ নেতা হামিদুল ইসলাম জুয়েল মোল্লা, ঢাকা মহানগরী উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা বাকের মিয়া, গাজীপুর মহানগর শ্রমিক লীগের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কর্মী নূরে আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর ৯১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মমিনুল ইসলাম হৃদয়, ৯২ নম্বর ওয়ার্ড ভোলা বস্তি ইউনিট অর্থ সম্পাদক বাবুল, ৯৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা আহসান হাবিব তানিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগ ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা নাজমুল হোসেন, ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা সুমন, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ জহিরুল ইসলাম টিপু, ঢাকা মহানগরী উত্তর আওয়ামী লীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা বাবুল ও ঢাকা মহানগরী উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা কবির।


আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান বলেন, এখন পর্যন্ত সারা দেশে ১২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এছাড়া সহস্রাধিক নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। সংকটাপন্ন অবস্থায় অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দলের পক্ষ থেকে আহতদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।


জানতে চাইলে যুবলীগের দফতর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ বিবার্তাকে বলেন, এখন পর্যন্ত যুবলীগের চারজন নেতা নিহতের খবর আমরা পেয়েছি। গুরুতর আহত অবস্থায় আরও অনেকে হাসাপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকাসহ সারাদেশে সহস্রাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।


তিনি বলেন, আহতদের সার্বিক খোঁজখবর রাখতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও জেলা-মহানগরের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা প্রদান করেছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খাঁন নিখিল। আমরা এই বর্বরোচিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।


আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপ-দফতর সম্পাদক এডভোকেট মো. মনির হোসেন বিবার্তাকে বলেন, দেশজুড়ে সহিংসতার ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুইজন নেতা মারা গেছেন। এছাড়া সারা দেশে আমাদের অগণিত নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।


জানতে চাইলে ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ বিবার্তাকে বলেন, সারা দেশে ছাত্রলীগের ১৫০০ থেকে ২ হাজার নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২ শতাধিক গুরুতর আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com