
সরকারি চাকরির সব গ্রেড থেকে কোটা বাতিল করার এক দফা দাবিতে পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছেন কোটাবিরোধীরা। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
১১ জুলাই, বৃহস্পতিবার বিকেলে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কারওয়ান বাজারের দিকে দিকে আসার পথে শাহবাগে পুলিশি বাধায় পরেন তারা। সেখানে পুলিশের বাধা ডিঙিয়ে এগুতে থাকেন তারা।
এসময় আন্দোলনকারীকে পুলিশের আর্মার্ড পাসরসোনেল ক্যারিয়ায়ের (এপিসি) ওপর ওঠে পড়েন এবং সেখানে দাাঁড়িয়ে শ্লোগান দেন।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বেলা সাড়ে তিনটায় কোটাবিরোধীদের অবরোধ কর্মসূচি করার কথা ছিল। চারটার দিকে ঢাবি ও ঢাকা কলেজ এলাকায় মিছিল বের হয়। তারা জড়ো হন ঢাবির লাইব্রেরি ও টিএসসি এলাকায়।
বৃষ্টির কারণে আন্দোলনকারীদের জড়ো হতে দেরি হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন। এরপর মিছিল নিয়ে তারা যান শাহবাগে।
এদিকে আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। বিশৃঙ্খলা মোকাবিলার প্রস্তুতিসহ মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে জড়ো হয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে আসে তারা।
আন্দোলকারীরা বলছেন, রাজধানীতে এদিন কর্মসূচি হবে শুধু মাত্র শাহবাগে। এর বাইরে কাউকে কোথাও ‘বাংলা ব্লকেড’ নামের অবরোধ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তবে চলমান অবরোধে যদি কেউ শক্তি প্রয়োগ করে সেই দায় তাদেরকেই নিতে হবে বলে প্রশাসনকে উদ্দেশ করে জানিয়েছেন আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
এদিন সকাল থেকেই বিভিন্ন নীতি নির্ধারক ও পুলিশ সরকারের বিপক্ষে নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ বলা হয়েছে, উচ্চ আদালতের আদেশের পর কোটাবিরোধী আন্দোলনের সুযোগ নেই। সড়ক অবরোধ করে ভোগান্তি সৃষ্টি করলেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কোটাবিরোধী আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ‘পানি ঘোলা’ করার দৌড়ঝাঁপ চলছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলন বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে বিরোধীদের সড়ক অবরোধের কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
বুধবার রাজধানীর অন্তত ২০টি পয়েন্ট অবরোধ করে কোটাবিরোধীরা। এতে সড়কে যান চলাচল ও রেলপথে ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাপক দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ।
গত সোমবার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কারের দাবিতে অবরোধ কর্মসূচি করছে আন্দোলনকারীরা।
কোটা সংস্কার ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র জারি করে সরকার। গত ৫ জুন সেই পরিপত্রের আংশিক অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। এর ফলে সরকারি চাকরিতে আগের কোটা পদ্ধতি ফিরে আসে।
এরপরই হাইকোর্টের আদেশ বাতিল এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ, দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করছেন তারা। এতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
এরই মধ্যে বুধবার হাইকোর্টের আদেশে এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছে আপিল বিভাগ। এসময়ে সরকারি চাকরিতে কোটা থাকবে না। কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদেরও ক্লাসে ফিরতে বলেছেন প্রধান বিচারপতি।
কিন্তু এসবের কিছুই মানতে নারাজ শিক্ষার্থীরা। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে তারা আগের মতোই অবরোধ-কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা এখন নতুন দাবি তুলেছেন যে, আদালত নয়, সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা আসতে হবে।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]