এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবে কোটাবিরোধীরা
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪, ২২:১৫
এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবে কোটাবিরোধীরা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করেছিল সরকার। এরপর কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের করা এক রিট আবেদনের শুনানিতে গত জুন মাসে কোটা পদ্ধতি বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি 'বাংলা ব্লকেডে'র মতো কর্মসূচি নিয়ে আবারো রাজপথে নেমেছেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা


বুধবার (১০ জুলাই) সকালে ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে দেয়া হাইকোর্টের রায়ে এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছে আপিল বিভাগ। ফলে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্রটি বহাল থাকছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন জানান, আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন। ফলে যা ছিল, তা-ই থাকবে। অর্থাৎ, কোটা বাতিল নিয়ে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল থাকছে।



তবে এ রায়কে অস্থায়ী সমাধান হিসেবে দেখছেন আন্দোলনকারীরা। বলছেন, অস্থায়ী কোনো সমাধান নয়, তারা চান স্থায়ী সমাধান। আর এজন্য কমিশন গঠন করে সরকারি চাকরির সকল গ্রেড থেকে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন তারা। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার চান আন্দোলনকারীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।



পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সকাল দশটায় রাজধানীর রাজপথে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। যার ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকা। সড়কে যান চলাচলও অন্য দিনের তুলনায় কম দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।



সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সকাল দশটার দিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে শাহবাগে জড়ো হচ্ছেন রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় শাহবাগ মোড় দিয়ে সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মেট্রোরেল স্টেশনের পাশ ঘেষে শতাধিক পুলিশ সদস্যকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরি বিভাগের শিক্ষার্থী নাজিম উদ্দিন বিবার্তাকে বলেন, ২০১৮ সালে কোটা ব্যবস্থা একদম বাতিল করে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে আবার সেই ৩০ শতাংশে নিয়ে আসা হলো। তাহলে ২০১৮ সালে আমরা যে আন্দোলন করলাম তার লাভ কোথায় হলো। এখানে কমিয়ে ৫ শতাংশ বা ১০ শতাংশ দিতে পারত।


তিনি বলেন, কিন্তু ৩০ শতাংশ রাখা এটাতো অন্যায়, অবিচার। এই অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ না করলে আর কেউ তো করবে না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমরা রাজপথে নেমেছি।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিফাত আহমেদ বিবার্তাকে বলেন, আমাদের দেশে কত পার্সেন্ট কোটা। ৫৬ শতাংশ কোটা আর ৪৪ শতাংশ আমাদের জন্য। বিসিএসের মধ্যে একটা জেনারেল ক্যাডারের কথা যদি বলি তাহলে দেখা যাচ্ছে সেখানে দেড় হাজার, দুই হাজার, তিন হাজার সিরিয়াল থেকে কোটার মাধ্যমে কেউ ক্যাডারে চলে আসছে। যেখানে একজন সাধারণ ছাত্র ৩শ' সিরিয়ালেও ক্যাডার পাচ্ছে না, সেখানে এটা তো লেজিট (বৈধ) না।


এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী অদিতি ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, আমাদের এক দফা দাবি সরকারি চাকরির সকল গ্রেডের যতপ্রকার অযৌক্তিক কোটা আছে সেগুলোর যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে। অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে নূন্যতম ৫ শতাংশে এনে কোটা পদ্ধতির সংস্কার করা হোক এবং আমাদের দাবি মেনে নেয়া হোক।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার বিবার্তাকে বলেন, আমরা কখনোই কোটার বিরুদ্ধে ছিলাম না। আমরা বৈষম্যমূলক কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি।


প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করা হয়েছে। এ অবস্থায় পরবর্তী কর্মসূচি কি হবে? জানতে চাইলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বিবার্তাকে বলেন, আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। আমাদের দাবি সরকারের নির্বাহী বিভাগের কাছে। সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে শুধুমাত্র অনগ্রসর গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রাখতে হবে।


তিনি বলেন, যদি নির্বাহী বিভাগ থেকে কোনো লিখিত পরিপত্রের মাধ্যমে সকল গ্রেডে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে যৌক্তিক সংস্কারের তথ্য জানানো হয়, তাহলেই শিক্ষার্থীরা রাজপথ থেকে ক্লাসে ফিরবে।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com