অপরাধের শাস্তি কমিয়ে সড়ক আইনের খসড়া অনুমোদন
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪, ১৭:০৩
অপরাধের শাস্তি কমিয়ে সড়ক আইনের খসড়া অনুমোদন
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

১২ ধারায় অপরাধের শাস্তি কমিয়ে বিদ্যমান ‘সড়ক পরিবহন (সংশোধন) আইন, ২০২৪’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।


১৩ মার্চ, বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০২৪’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।


সভা শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানান।


মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সড়ক পরিবহন আইনের ১২টি ধারায় অপরাধ কমানো হয়েছে। ৮টিতে জরিমানার পরিমাণ কমানো হয়েছে।


সড়ক পরিবহন আইনের তিনটি ধারার অপরাধ অজামিনযোগ্য ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন একটি ধারার অপরাধকে অজামিনযোগ্য রেখে অন্যগুলোকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে।


মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, কারিগরি নির্দেশ না মানলে এতদিন তিন বছর জেল দেওয়ার বিধান ছিল। এই অপরাধের সাজা আগের মতো রাখা হলেও এটিকে অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বা ওভারলোডভাবে গাড়ি চালানোর পর দুর্ঘটনা হলে সেটিকে অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। এখন শুধুমাত্র দুর্ঘটনায় মারা গেলে বা গুরুত্বর আহত হলে তা অজামিনযোগ্য অপরাধ হবে।


তিনি বলেন, ২০১৮ সালে এই আইন করা হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর নেতৃত্বে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল এই আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আইন সংশোধন করা হচ্ছে।


মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত সংক্রান্ত অপরাধ করলে এতদিন ২ বছর জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান ছিল, সেটিকে কমিয়ে ২ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা করা হচ্ছে। লাইনেন্স বাতিলের পরেও যানবাহন চালালে বর্তমান আইনে ৩ মাস কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। এটিকে বদলে ৩ মাস জেলা ও ১৫ হাজার হাজার টাকা করা হচ্ছে।


তিনি জানান, লাইসেন্স ছাড়া কন্ডাক্টরের দায়িত্ব পালন করলে এক মাস কারাদণ্ড, ৫ হাজার জরিমানার সাজা বহাল রাখা হয়েছে। এই ধারায় এখন কন্ডাক্টরের সঙ্গে সুপারভাইজার শব্দটি যোগ করা হয়েছে। ভাড়ার চার্ট না দেখালে বা বেশি ভাড়া নিলে এতদিন ১ মাস জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো।


দুটো অপরাধ এক সঙ্গে করলে এতদিন এই শাস্তি দেওয়া হতো জানিয়ে তিনি বলেন, এখন চার্ট প্রদর্শন না করলে বা বেশি ভাড়া দাবি করলে এই সাজা দেওয়া হবে।


মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, মিটার টেম্পারিং করলে ৬ মাস জেল, ৫০ হাজার টাকা হতো। এখন এই অপরাধের জন্য তিন মাসের কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে, সঙ্গে এক পয়েন্ট কাটা যাবে। সরকার নির্ধারিত হারের থেকে টার্মিনাল চার্জ বেশি নিলে তা চাঁদাবাজি হিসেবে আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


তিনি বলেন, বর্তমান আইন অনুযায়ী ট্রাফিক সাইন ও সংকেত না মানলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। এখন জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে ২ হাজার টাকা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ওজন বহন করলে ৩ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হতো। এখন সেটিকে বদলে ১ বছর জেল, ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। এর সঙ্গে চালকের এক পয়েন্ট কাটা যাবে।


পরিবেশ দূষণকারী মোটরযান চালালে ৩ মাস জেল ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। এটিকে কমিয়ে ১ মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।



মো. মাহবুব হোসেন জানান, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করালে বর্তমান আইনে ৫ হাজার জরিমানার সঙ্গে চালকের ১ পয়েন্ট কাটা হতো। এটিকে বদলে শুধু এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। কী অবস্থায়, কীভাবে গাড়ি চালাতে হবে সেই নির্দেশনা অমান্য করলে এতদিন ৩ মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। সেটিকে বদলে ১ মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে।


মোটরযান মালিককে বিমা করতে হবে বলে একটি ধারা যোগ করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিমা না করলে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।


শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলনের পর ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে সড়ক পরিবহন আইন পাস করা হয়। সে বছরের ৮ অক্টোবর এটির গেজেট জারি করা হয়। তবে আইনে বলা হয়, সরকার আইনটি কার্যকরের তারিখ ঠিক করে এর প্রজ্ঞাপন জারি করবে। ইতোমধ্যে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো আইন পরিবর্তনের দাবিতে দুই দফায় ধর্মঘট করে। এমন প্রেক্ষাপটে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সে বছরের নভেম্বরে সরকার আইনটি প্রয়োগ করার ব্যবস্থা নিলে পরিবহন সংগঠনগুলো আইনটির বিভিন্ন ধারা পরিবর্তনের জন্য আবারও ধর্মঘট ডাকে। তাদের মূল দাবি ছিল, আইনের অধীনে সব অপরাধ জামিনযোগ্য করতে হবে। বিভিন্ন ধারায় যে জরিমানার কথা বলা হয়েছে, তা কমাতে হবে। এ অবস্থায় চার বছরের মাথায় আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার।


আরও ৩ আইনের খসড়া অনুমোদন


মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরও তিনটি আইনের সংশোধিত খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো– ‘খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট (সংশোধন) আইন-২০২৪’, ‘হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট (সংশোধন) আইন-২০২৪’, ‘বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট (সংশোধন) আইন-২০২৪’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন-২০২৪’।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com