রফতানি-রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হ্রাস, চাপ বাড়ছে অর্থনীতিতে
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:০১
রফতানি-রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হ্রাস, চাপ বাড়ছে অর্থনীতিতে
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ডলার সংকটের মধ্যে সদ্য বিদায়ী আগস্টে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ২১ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমেছে। একইসময়ে রফতানিতে প্রবৃদ্ধির হার কমেছে ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দুই প্রধান খাতের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করেছে।


দেশের আমদানির পেছনে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। আমদানি ব্যয় মেটাতে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সের ওপরে নির্ভর করতে হয়। তবে এই খাত দুটিতে কয়েক মাস ধরেই কোন সুখবর নেই।


বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের আশেপাশে। ২০২১ সালের শুরুতে রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি ডলার ডলার।


এদিকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এরপর সময় যত গড়িয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বিস্তৃতি ততই বেড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পরই বিশ্ববাজারে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে জ্বালানি তেলসহ খাদ্যপণ্যের দাম। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও। চাপ সামাল দিতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সে পতন শুরু হয়। এসবের প্রভাবে রিজার্ভে ধারাবাহিক পতন চলছে।


আগের অর্থবছরের মধ্যে চার মাসে প্রবাসীরা ২০০ কোটি ডলারের বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠায়। এছাড়া অন্যান্য সময়ে দেড়শ কোটি ডলারের আশেপাশে ছিল প্রবাসীদের পাঠানো ডলারের পরিমাণ। ঐ অর্থবছরের শুরুর মাসে ২০৯ কোটি ডলার এবং আগস্টে ২০৩ কোটি ডলার পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। এরপর দীর্ঘ ছয় মাসের চেয়ে অনেক কম ডলার এসেছে। আবারও মার্চ মাসে ২০২ কোটি ডলারের এবং অর্থবছরের শেষে জুনে ২১৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্সের নেতিবাচক ধারাবাহিকতা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও বজায় রয়েছে। এই অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৭ কোটি ডলার। সদ্য সমাপ্ত আগস্টে যার পরিমাণ আরো কমে ১৬০ কোটি ডলারে নেমেছে।


অপরদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে রফতানি করে দেশের আয় হয়েছিল ৪৫৯ কোটি ডলার। তখন রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। আগস্টে রফতানির পরিমাণ বেড়েছে। এই মাসে রফতানি হয়েছে ৪৭৮ কোটি ডলারের পণ্য। তবে এ মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি ব্যাপকহারে কমে ৩ দশমিক ৮০ শতাংশে নেমেছে।


বাংলাদেশ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ডলার-সংকটে ভুগছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি পণ্য রফতানির প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে যাওয়া অর্থনীতির জন্য দুশ্চিন্তার। এরফলে রিজার্ভের ওপর চাপ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে যে পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে তা গত ৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। ২০২২ সালের আগস্টে প্রবাসীরা ডলার পাঠিয়েছিল ২০৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আগস্টে রেমিট্যান্স কমেছে ৪৩ কোটি ডলার।


অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের বাজারে ডলারের বিনিময় মূল্য নিয়ে অস্থিরতা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব জুড়েই অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্সের ওপরে। এছাড়া ব্যাংকিং ব্যবস্থায় প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বিনিময় হার এখনো হুন্ডির চেয়ে কম। এরফলে বিদেশে বসবাসরত কর্মীরা দেশে অর্থ পাঠানোর জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহার না করে হুন্ডি বা বিকল্প চ্যানেল ব্যবহার করছেন।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com