'দর্শকনন্দিত 'মাইক', শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখানো হোক'
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৩, ১০:৩৯
'দর্শকনন্দিত 'মাইক', শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখানো হোক'
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘মাইক’ এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস জানতে পারবে। এর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর অনেক সিনেমা তৈরি হলেও ’৭৫ পরবর্তী দুঃসময় নিয়ে তেমন সিনেমা হয়নি। অনেকদিন পর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হলেও এই ধরনের সিনেমা তৈরি হয়েছে। নির্মাতারা মাইকে’র মাধ্যমে '৭৫ পরবর্তী সময়ের ইতিহাস তুলে ধরেছেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালির অনুরাগের জায়গা- সেই বিষয়টি এই সিনেমায় ফুটে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে এ চলচ্চিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একইসাথে প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের জাগ্রত ইতিহাস জানাতে এই ছবি দেখানো উচিত। সর্বোপরি, মাইক চলচ্চিত্র মাইকের আওয়াজের মতো চারিদিকে ছড়িয়ে যাক, এই প্রত্যাশা রইল।


কথাগুলো বলেছেন মাইক সিনেমা দেখতে আসা দর্শকরা। বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে চলচ্চিত্রটির মুক্তির পর ৭ম দিনের শো দেখে তারা এমন প্রতিক্রিয়া জানান।


এরআগে শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘মাইক’ মুক্তি পায়। এরপর থেকে প্রতিদিন দুটি করে শো চলে সপ্তম দিনে এসে দর্শকদের ভালোবাসায় হাউজফুল ছিল সিনেমাটি। শুধু তাই নয়, মাইক চলচ্চিত্রটি দেখতে শিক্ষার্থীদের ভিড়ও ছিল লক্ষ্যণীয়। শিক্ষার্থীরা দলে দলে এসে মুভিটি দেখে, ছবি তুলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।




মাইক চলচ্চিত্রের ৭ম দিনের শো দেখে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট সানজিদা খানম বিবার্তাকে বলেন, ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে উপজীব্য করে শিশুতোষ সিনেমা এর আগে কখনো হয়নি, এটি প্রথম সিনেমা। সিনেমাটি ভীষণ ভালো লেগেছে। বর্তমান প্রজন্ম জানে না, ৭৫ পরবর্তী সময়ের কথা। তারা এই বিষয়ে শুনেওনি। সিনেমায় বাচ্চারা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনছে এবং মানুষের মধ্যে প্রচার করার জন্য দুঃসাহস দেখিয়েছে- এটা আসলেই অসাধারণ। আমি মনে করি প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের এই ছবি দেখানো উচিত। সিনেমায় শিশুরা যে সাহস দেখিয়েছে, এটা সত্যিই অসাধারণ।




সিনেমা দেখে যুব মহিলা লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি বিবার্তাকে বলেন, মাইক সিনেমাটি দেখে খুবই ভালো লেগেছে। আমার মনে হয় নতুন প্রজন্মের সকলকেই এই সিনেমাটি দেখা উচিত। বিশেষ করে সিনেমায় শিশুরা যখন রাতের অন্ধকারে গাছের সাথে মাইক বাঁধে, এরপর সেই মাইকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনা যায়, সেই জায়গাটা এককথায় অসাধারণ, অনবদ্য। শুধু তাই নয়, সিনেমার শেষে যে গানটির আওয়াজ শুনে গ্রামের মানুষ জেগে উঠেছে, ওই দৃশ্যটি আরো বেশি ভালো লেগেছে।


তিনি বলেন, বাচ্চাদের অভিনয় অসাধারণ হয়েছে। মাইক সিনেমার সাফল্য কামনা করি। আমাদের সন্তানেরা যাতে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে, সে জন্য এর ব্যাপক প্রচার দরকার। একটি সময় ছিল বঙ্গবন্ধুর যখন কথা বলা যেতো না। বঙ্গবন্ধুর নাম বললে বাধা সৃষ্টি করা হতো। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তো বাংলাদেশের পরিপূরক, তাঁর বিকল্প কিছু নেই।



কদমতলী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু বিবার্তাকে বলেন, ছবিটি ভীষণ ভালো লেগেছে। বাংলাদেশ থেকে স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস মুছে ফেলার জন্য একদল লোক চেষ্টা করেছিল। পরবর্তীতে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি যারা ছিল তারা ৭ মার্চকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ছবিটি দেখে বুঝেছি স্বাধীনতার সময় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ কিভাবে মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল। এই ছবিটি বর্তমান প্রজন্মের সকলের দেখা উচিত। কারণ, তারা যদি এই ছবিটা না দেখে তাহলে '৭৫ পরবর্তী সময়ের ইতিহাস অজানা থেকে যাবে। শিশুতোষ ছবি আগে অনেক নির্মিত হলেও বর্তমানে হচ্ছে না, আমরা চাই এরকম ছবি আরো হোক। যেভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে, এরকম ছবি শিশুদের মেধা বিকাশের জন্য সহায়ক হবে।



নড়াইলের কালিয়া থেকে ঢাকায় মাইক সিনেমাটি দেখতে এসেছেন সাজ্জাদুর রহমান। তিনি বিবার্তাকে বলেন, মাইক সিনেমাটি আসলেই অসাধারণ। এই সিনেমায় শিশুরা যেভাবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটিকে প্রচার করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে, এটা আসলেই ভালো লেগেছে। ভাষণটি যখন নিষিদ্ধ ছিল, সিনেমায় দাদা যখন তার নাতিকে বলেছে গল্পটা সেটা মন ছুঁয়ে গেছে। এমনকি দাদা যেটা করতে পারেনি তার আবেগের জায়গা থেকে, নাতিরা সেটাই করতে চেয়েছে অর্থাৎ মাইকে ভাষণটি চালানোর চেষ্টা করেছে আর এক পর্যায়ে সফলও হয়েছে। এটা অনেক ভালো লেগেছে।



সালাহউদ্দিন আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হক বিবার্তাকে বলেন, ১৯৭১ এবং ৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে যে পরিস্থিতি ছিল মাইক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সেই চিত্রটি ফুটে উঠেছে। এক সময় বঙ্গবন্ধুর নাম বলা যেতো না এবং তার ভাষণ প্রকাশ্যে বাঁজানো নিষিদ্ধ ছিল। মাইক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সেই বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এর মাধ্যমে শিশুরা সেইসব তথ্য পাবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা ছবিটি দেখে উৎফুল্ল এবং আনন্দিত বোধ করছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিষয়টি তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে।



ফরিদাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রোকসানা বিবার্তাকে বলেন, মাইক দেখে যেটা মনে হলো- ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয় একটি সিনেমা। আমি মনে করি শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্ম যাতে ভালো করে গড়ে উঠতে পারে সেই উদ্দীপনা মাইক সিনেমা থেকে পাবে।


সালাহউদ্দিন আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সাজ্জাদ বিবার্তাকে বলেন, আমরা বন্ধুরা মিলে মাইক চলচ্চিত্রটি দেখতে এসেছি। চলচ্চিত্রটি দেখে আমরা খুবই উচ্ছ্বাসিত হয়েছি। কারণ মাইক ছবিটির মধ্যে যে সকল বিষয়গুলো ফুটে উঠেছে, এসব বিষয়গুলো পূর্বের কোন সিনেমায় ছিল না- যা মাইক দেখে জানতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পেরেছি এবং '৭৫ পরবর্তী সময় সম্পর্কে জানতে পেরেছি।



ফরিদাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী হালিমা খাতুন বিবার্তাকে বলেন, স্কুল শেষে আমরা সহপাঠীরা মাইক সিনেমা দেখার জন্য এসেছি। ছবিটি দেখে খুবই ভালো লেগেছে। এই ছবির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। এক সময় যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি প্রচার করা নিষিদ্ধ ছিল তা এই ছবিটির মাধ্যমে জানতে পারলাম।



লেখক, কলামিস্ট ও সংগঠক এফ এম শাহীনের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি যৌথভাবে পরিচালনা করছেন এফ এম শাহীন ও হাসান জাফরুল বিপুল।


গত ২৯ মে চলচ্চিত্রটি আনকাট সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছিল। ‘মাইক’ চলচ্চিত্রটি দেখে সেন্সরবোর্ডের সদস্যরা ভূয়সী প্রশংসা করেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে এ ধরনের সিনেমা নির্মাণকে তারা সাধুবাদ জানিয়েছেন। গত ২৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে চলচ্চিত্রটির বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।


‘মাইক’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন বিশিষ্ট অভিনেতা তারিক আনাম খান, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, অভিনেত্রী তানভীন সুইটি, অভিনেতা নাদের চৌধুরী, ঝুনা চৌধুরী, জয়িতা মহলানবিশ, সংগীতা চৌধুরী, রহিম সুমন, ইকবাল হোসাইন, শিশুশিল্পী সানজিদ রহমান খান, আলী আবদুল্লাহ দাইয়ান ভূঁইয়া, খোন্দকার মেঘদূত জলিল, মীর্জা ত্বাবীব ওয়াসিত প্রমুখ।


বিবার্তা/ইলিয়াস/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com