
জিটিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেছেন, জনগণের ভরসার এখনো শেষ ঠিকানা গণমাধ্যম। এটা জাতির জন্য আয়নাস্বরূপ। যে আয়নায় ভেসে উঠে জাতির ও দেশের প্রতিচ্ছবি।
বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে “পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম: ভূমিকা ও সংকট” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় কি-নোট স্পিকারের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে বিবার্তা২৪ডটনেট ও জাগরণ (আইপি) টিভি।
গণমাধ্যম কী সে ব্যাখ্যায় সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজে গণমাধ্যম নাগরিকের অধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখে, তথ্য জগতে তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। মানুষ জানতে চায়, মানুষ সমাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চায়। আর সেখানেই গণমাধ্যমের ভূমিকা। নীতিনির্ধারক, আইনসভাসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ ঘটাতে ভূমিকা রাখে গণমাধ্যম। গণমাধ্যমে প্রতিফলিত হয় দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা। স্বাধীনতার আগে এবং পরে বাংলাদেশের গণমাধ্যম মানুষের প্রতিটি গণতান্ত্রিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগ্রামের সঙ্গে থেকেছে। বাংলাদেশে গণমাধ্যম নানা ঐতিহাসিক ঘটনায়, মানুষের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট থেকেছে। দুর্নীতি, সহিংসতার ইস্যুকে অনেক সময় গণমাধ্যমই সবার আগে মানুষের কাছে নিয়ে আসতে পেরেছে।
গণমাধ্যমের উপর করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে জানিয়ে জিটিভির প্রধান এই সম্পাদক বলেন, লকডাউন, কারফিউ কিংবা চলাচলে নিয়ন্ত্রণের কারণে ছাপা কাগজ বিতরণ ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় বিঘ্ন সৃষ্টির কারণে পত্রিকার প্রচারসংখ্যা কমেছে। এখন বেড়েছে কিনা জানা নেই। কিন্তু, অনলাইনে পাঠকসংখ্যা বেড়েছে নাটকীয় হারে। টিভির দর্শকসংখ্যাও বেড়েছে। শ্রোতারা আবার রেডিওমুখী হয়েছেন। পাঠক-দর্শক-শ্রোতার চাহিদা পূরণে সাংবাদিকতা এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
গণমাধ্যমের সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় সংবাদমাধ্যমের জন্য তিনটি বিষয়কে প্রধানতম সমস্যা বলা যায়। এগুলো হলো গণমাধ্যমের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, সরকার ও জাতীয় সমস্যা এবং উগ্রবাদ ও ধর্মান্ধতা। কিন্তু গণমাধ্যমের অর্থনীতি ও প্রাতিষ্ঠানিকতার সংকট আমাদের কোথায় নিয়ে যায় সেটি দেখার অপেক্ষায় না থেকে একটু নিবিড় দৃষ্টি দেই, কিভাবে সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। গণমাধ্যমে মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, সংকট ও সম্ভাবনার কথা বলে। গণমাধ্যম মানুষের স্বপ্ন পূরণের কথা বলে এবং বলেও যাবে সবসময়। কিন্তু আমরা জানিনা, নিজেদের আকাশে জমে থাকা মেঘ কাটবে কবে?
তিনি আরো বলেন, চাকরির নিরাপত্তা নেই, ঠিক মত বেতন হয় না বহু পত্রিকা, অনলাইন ও সম্প্রচার মাধ্যমে। কারণ গণমাধ্যম অর্থনীতি নতুন সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে নিয়মিত। সংবাদপত্র পাঠকের স্বল্পতা ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। সংবাদপত্রের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখাই এখন আরেক লড়াই। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নিয়মিত সংবাদপত্র পাঠের অভ্যাস শোচনীয় ভাবে কমছে, কমছে দেশীয় টেলিভিশন দেখা। ডিজিটাল প্লাটফর্মের ব্যাপক বিস্তার এমন অবস্থার সৃষ্টি করেছে যে, পাঠক বা দর্শক টেনে নেয়ার পাশাপাশি এখন তারা গণমাধ্যমের আয়ের একমাত্র উৎস–বিজ্ঞাপনও ছিনিয়ে নিচ্ছে। এদিকে সরকার, সরকারি সংস্থা এতো এতো প্রমো বানায়, সেগুলো বিনে পয়সায় প্রচার করতে হয় টিভিগুলোকে। যেকোনো বিশেষ দিবসে পত্রিকা ক্রোড়পত্র পায় কিন্তু টেলিভিশনগুলো কিছুই পায় না!
গণমাধ্যমের উপর কোভিডের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে করণীয় প্রসঙ্গে বিশিষ্ট এ সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশ সরকার বর্তমান কঠিন অর্থনৈতিক বাস্তবতা মোকাবিলায় শিল্প খাতসহ বিভিন্ন খাতের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। সংবাদপত্র শিল্পও যাতে সেই প্রণোদনা পায় তা নিশ্চিত করা উচিত। বিশেষ করে দৈনন্দিন পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের জন্য যে তহবিল ঘোষণা করা হয়েছে তাতে সংবাদপত্র শিল্পকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
তিনি বলেন, দেশের সংবাদপত্র শিল্পকে এখন ৩৫ শতাংশ হারে করপোরেট ট্যাক্স দিতে হয়, যেখানে তৈরি পোশাক শিল্পকে দিতে হয় মাত্র ১৫ শতাংশ। এটা কমিয়ে ফেলার বিষয়টি যৌক্তিক। নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি দীর্ঘ দিনের। সংবাদপত্র শিল্পের স্বার্থে এটা এখনই প্রত্যাহারে ঘোষণা দেয়া যেতে পারে। বিজ্ঞাপনের ওপর মূল্য সংযোজন করে ছাড় দেয়া হলে বেসরকারি খাতের বিজ্ঞাপনদাতারা কিছুটা হলেও ফিরতে পারেন।
জাগরণ আইপি টিভি’র প্রধান সম্পাদক এফএম শাহীনের সঞ্চালনা ও বিবার্তা২৪ডটনেট সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি’র সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি।
এছাড়া আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান, ডিবিসি নিউজ সম্পাদক প্রণব সাহা, ঢাকা পোস্টের সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার, নিউজ টোয়েন্টিফোর টিভির যুগ্ম বার্তা সম্পাদক এবং ডব্লিউজেএনবির সমন্বয়ক আঙ্গুর নাহার মন্টি প্রমুখ।
বিবার্তা/রাসেল/সোহেল/আদনান/বিপ্লব/গমেজ/জহির
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]