শিরোনাম
তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাত্মতা প্রকাশ
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৪৮
তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাত্মতা প্রকাশ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নয় এবং অচিরেই বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার বিল সংসদে উত্থাপন করা হবে বলে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।


মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) একাত্মতা প্রকাশ করে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘বিএনপি-জামায়াতের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধে নাগরিক সমাজের করণীয় ও পঁচাত্তর পরবর্তী বীর মুক্তিযোদ্ধা সামরিক সদস্যদেরকে বিনা বিচারে হত্যার অপরাধে অবৈধ সামরিক শাসক জিয়ার মরণোত্তর বিচারের দাবি’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে তারা।


আলোচনা সভায় ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান প্রতিষ্ঠিত না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। অবৈধ সামরিক শাসক জিয়া ও এরশাদ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাহাত্তরের সংবিধান ধ্বংস করে দিয়েছিল। হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সামরিক সদস্যদের বিনা বিচারে হত্যা করেছিল। একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করে অবৈধ সামরিক শাসক জিয়া ও এরশাদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করা উচিত।


তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। পূর্বের হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হলে এ ধরনের ঘটনা আমাদেরকে দেখতে হতো না। নাসির নগরের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ হয়নি, বিচার হয়নি। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বন্ধ করতে চাইলে অবশ্যই প্রতিটি সাম্প্রদায়িক হামলার দ্রুত বিচার করে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।


ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, সম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্বজনীন দূর্গা পূজা উৎসবকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দোসর বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা। কুমিল্লায় মন্দিরে কোরআন শরীফ রেখে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে তারা। ধর্মকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের মাধ্যমে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্যে। এহেন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।


তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে গোপনে নাশকতার ছক কষেছিল স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির দোসর বিএনপি-জামায়াত চক্র। দুর্গাপূজায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বহির্বিশ্বে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত সেই সুযোগটাকে ইস্যু বানিয়ে আন্দোলনে নেমে সরকারের পতন ঘটানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এজন্য কুমিল্লা থেকে শুরু করে দেশব্যাপী বিশৃঙখলা শুরু করেছে বিএনপির-জামাতের ক্যাডাররা। কুমিল্লায় মন্দিরে পরিকল্পিতভাবে কোরআন শরীফ রেখে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের প্রকৃত চরিত্র জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রামে মন্দিরে-বাড়িঘরে হামলা এবং সর্বশেষ ঢাকায় বায়তুল মোকাররমের সামনে পুলিশের ওপর হামলা-সব একই সূত্রে গাঁথা।


রাশা বলেন, এসব হামলার সাথে জড়িত বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। গত বছর ভাস্কর্য ইস্যুতেও বিএনপি-জামায়াত ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছিল। দেশের জনগণ তাদেরকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিল। আমরা বিশ্বাস করি, অতীতের ন্যায় আবারও জনগণ বিএনপি-জামায়াতকে রাজপথে সমুচিত জবাব দিবে। বিগত ২০০১ সালে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর ছয় শতাধিক সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল, আহত হয়েছিল ৩০ হাজারেরও বেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ, ১২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেছিল। সংঘবদ্ধভাবে হামলা, নির্যাতন, লুটতরাজে নিঃস্ব হয়েছিল লক্ষাধিক হিন্দু পরিবার।


আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষদাঁত উপড়ে ফেলবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসানের বক্তব্যের সাথে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে শক্তি একমত পোষণ করেছে। শুধুমাত্র স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির দোসররাই বিরোধিতা করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছে।


তিনি বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন- যারা মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ডাকে, সাম্প্রদায়িকতার জন্য যুদ্ধ করে, সংগ্রাম করে এবং জীবন উৎসর্গ করে তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।’ দেশবাসীর বিবেকের কাছে প্রশ্ন- বিএনপি জামায়াত কি সত্যিই ইসলামের চর্চা করে? এরা প্রকৃতপক্ষে আবু জাহিলের অনুসারী অভিশপ্ত গোষ্ঠী। কারণ সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বিএনপি-জামায়াত ইসলাম ধর্মের লেবাস লাগিয়ে প্রতিনিয়ত ইসলাম পরিপন্থী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে যাচ্ছে। এদের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।


মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসানের বক্তব্যের সাথে একাত্মতা পোষণ করছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। তার বক্তব্য শুনে যাদের জ্বলে তারা অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত অথবা স্বাধীনতা বিরোধীদের দোসর।


তিনি বলেন, এদেশের সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ডা: মুরাদ হাসানের বলিষ্ঠ উচ্চারণ নিতান্তই সাহসীকতার দাবিদার। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাহাত্তরের সংবিধান অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করেছিলেন। একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তানি অপশক্তি স্বাধীনতা বিরোধীরা পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাহাত্তরের সংবিধানকে কেটে ছিঁড়ে ধ্বংস করে আবার বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিলো।


মামুন বলেন, কোন নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেনি। একাত্তরে সকল ধর্মের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। সকল ধর্মের মানুষের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। ধর্মনিরপেক্ষ মানে ধর্মহীনতা নয়, সকল ধর্মের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। রাষ্ট্র ও ধর্ম দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। ধর্মকে রাজনীতিতে নিয়ে আসলে সেই ধর্ম কলুষিত হয়। ধর্মকে পুঁজি করে ধর্ম ব্যবসায়ীরা ইসলাম ধর্মকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। ভারত, আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রগুলোর সংবিধানে কোথাও রাষ্ট্র ধর্ম উল্লেখ নেই। এমনকি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইন্দোনেশিয়াতেও রাষ্ট্র ধর্মের কথা উল্লেখ নেই। তাদের সংবিধানেও ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি রয়েছে।


মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক বলেন, রাষ্ট্র সকলকে সমান চোখে দেখবে। এটাই ইসলাম শিক্ষা দেয়। রাষ্ট্র কোন নির্দিষ্ট ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে অন্য ধর্মের মানুষদের খাটো করার অধিকার রাখে না। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এরশাদ ও জিয়া অত্যন্ত সুকৌশলে সংবিধানে সাম্প্রদায়িক বিষ ঢুকিয়ে মানুষের মগজ ধোলাই করে দিয়েছিল। যার ফলাফল এখনো বাংলাদেশকে ভুগতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর বাহাত্তরের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হলে বাংলাদেশ অনেক আগেই সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত হতো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রণীত বাহাত্তরের সংবিধানের বিরোধিতা কারীরা দেশ ও জাতির শত্রু। জিয়া ও এরশাদ কর্তৃক অবৈধভাবে সংশোধিত সংবিধানের পক্ষে যারা কথা বলে তারা প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের দোসর।


তিনি আরো বলেন, এদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা-এই চার মূলনীতির ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। বাহাত্তরের সংবিধানের ১ম অনুচ্ছেদে এই রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া ও এরশাদ অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত সংবিধান কেটে ছিঁড়ে ধ্বংস করে দিয়েছিল। জিয়া ও এরশাদের অবৈধ শাসনামলে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সামরিক সদস্যদের বিনা বিচারে ফাঁসি দিয়ে লাশ গুম করা হয়েছিল। অবিলম্বে জিয়া ও এরশাদের মরণোত্তর বিচারের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করে জাতির সামনে অবৈধ সামরিক শাসক জিয়া ও এরশাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।


মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সম্প্রীতি বাংলাদেশ এর সদস্য-সচিব অধ্যাপক ডা: মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল ও বিশিষ্ট ভাস্কর শিল্পী রাশা। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরু করা হয়।


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com