শিরোনাম
লকডাউনে কেমন আছেন পরিবহন শ্রমিকরা
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২১, ১২:৫০
লকডাউনে কেমন আছেন পরিবহন শ্রমিকরা
মোফাজ্জল বিদ্যুৎ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

কর্ম নেই, বেতন নেই। তিন-চার দিন ধরে অর্ধহারে দিন কাটছে। কাজ না থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়। আয়ের বিকল্প কোনো পথও খোলা নেই। আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টাকার অভাবে কিছু খেতেও পারছি না। সকাল থেকে একটা বিস্কুট খেয়ে আছি। কথাগুলো বলছিলেন মহাখালী বাস টার্মিনালের এনা ট্রান্সপোর্টের হেলপার মো. আজিজুল ইসলাম।


শুধু মহাখালী বাস টার্মিনালের আজিজুলেরই নয়, দেশের সকল পরিবহন শ্রমিকের চিত্র এটি। দেশে চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে দেড় বছর ধরেই নানা সমস্যার মধ্যে রয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোর বিধিনিষেধের কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।


সোমবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে দেখা যায়, বাসের হেলপার, ড্রাইভাররা অলস সময় পার করছেন। আবার কিছু কিছু বাস মেরামত করতেও দেখা যায়।


গাবতলী বাস টার্মিনালে পরিবহন শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবারের লকডাউনের আগে ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত রাস্তায় জ্যামের কারণে বাসগুলোর কোনটি দু-তিনটি, কোনটি সর্বোচ্চ চারটি, অনেকে মাত্র একটি ট্রিপ চালাতে পেরেছে। এসব ট্রিপ থেকে ৫০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ চৌদ্দশ টাকা পেয়েছেন।



দূরপাল্লার গাড়ির হেলপার মো. আরিফ জানায়, লকডাউনের আগে গাড়ি চালিয়ে তিনি যে টাকা পেয়েছেন তা থেকে পরিবারকে কোনো টাকা দিতে পারেননি। কারণ নিজে চলার মতোও টাকা হয়নি। বর্তমানে তার পকেট ফাঁকা। গাড়ি পাহারা দেয়ায় গাড়ির মালিক তাকে যে টাকা দেন সেটা দিয়ে খাবার খরচও ওঠে না।


এছাড়া অধিকাংশ শ্রমিকই কোনো কাজ ছাড়াই অলস সময় কাটান বাসে কিংবা টার্মিনালে। অনেকে আবার চলে গেছেন গ্রামের বাড়িতে। কিছু কিছু বাসের ড্রাইভার ও সুপারভাইজারের ঢাকাতে থাকার জায়গা থাকলেও হেলপারদের বাসে কিংবা টার্মিনালেই কাটাতে হয় পুরোটা সময়।


কেউ কেউ অর্ধাহারে কিংবা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, আবার অনেকেই ইতিমধ্যে পরিবর্তন করেছে পেশা। তবে এ কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে অন্য কিছু করে দিনযাপনেরও খুব বেশি সুযোগ নেই।


বিভিন্ন বাসের হেলপারি করতেন সাইফুল ইসলাম। লকডাউনের মধ্যে পেশা পরিবর্তন করে এখন রিকশা চালান তিনি। তিনি বলেন, 'পরিবহনও চলে না আমাদের রোজগারও হয় না। না খেয়ে থাকতে হয়। কতক্ষণ না খেয়ে থাকা যায়। তাই সোমবার থেকে রিকশা চালানো শুরু করেছি'।



এনা ট্রান্সপোর্টের হেলপার মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, 'আমরা যারা বাসের হেলপার তাদের সবাই ই বাসে ঘুমায়। বাস চলাচল করলে দিনে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন হতো। তখন নিজের প্রয়োজনমত খরচ করতে পারতাম, সাথে সাথে বাড়িতেও বাবাকে টাকা পাঠাতাম। কিন্তু গত দেড় বছর ধরেই আমাদের দিন খেয়ে না খেয়ে কাটতেছে। মাঝে মাঝে বাস চালু হলে কিছু টাকা উপার্জন হয় পরে বন্ধ হলে জমানো টাকা ভেঙ্গে খাওয়ার পরে ধার দেনা করে চলতে হয়'।


ওয়েলকাম পরিবহনের চালক মো. সজিব বলেন, 'আমরা করোনা দেখে ভয় পাই না, লকডাউন দেখে ভয় পাই। গাড়ির চাকা ঘুরলে আমাদের ইনকাম হয়। এই লকডাউনে ইনকাম নাই, তাই আমাদের অনাহারে আর অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে। আমাদের খাবার দেয়া হোক, না হয় গাড়ি চালু করা হোক'।


ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক মো. মানিক মিয়া বলেন, 'মহাখালী বাস টার্মিনালেই বাসের ড্রাইভার, সুপারভাইজার ও হেলপার মিলে প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক রয়েছে। তাদের গত বছর লকডাউনে সহযোগিতা করা হয়েছিল, এবারও করা হবে। আমরা এখনও সরকারের কাছ থেকে কোনো প্রণোদনার আশ্বাস পাইনি। নিজেরা যে কিছু করবো সেটাও বড় কোনো সহায়তা ছাড়া সম্ভব না'।


পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, 'আমরা বারবার সরকারকে বলেছি, আমাদের ভিক্ষার দরকার নেই। আমাদের ১০ টাকা কেজি মূল্যের চাল দেয়া হোক। শ্রমিকরা টার্মিনালের সামনে গিয়ে ট্রাক থেকে কিনে নিবে, কিন্তু সেটাও দিচ্ছে না। এ করোনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহন শ্রমিকরা'।


বিবার্তা/নাঈম/বিআর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com