দেশে এখন আতঙ্কের নাম এডিস মশা। এর জীবাণুতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২১ হাজার ২৩৫ জন। মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশা মারার পণ্য কয়েল, ইলেকট্রিক ব্যাট, লোশন ও স্প্রে ব্যবহার করছেন প্রায় সবাই। একই চিত্র হাসপাতাল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল এমনকি অফিস আদালতেও। চাহিদা বাড়ায় এসব পণ্যের দামও বেড়ে গেছে।
মানুষের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরাও ফায়দা লুটছেন। নির্দিষ্ট দামের বাইরে ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিচ্ছেন তারা।
সরেজমিন রাজধানীর পুরান ঢাকা ও কারওয়ান বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মশা নিরোধক প্রতিটি পণ্যের চাহিদা ও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে বর্তমানে প্রায় ৪৮টি মশার কয়েল বাজারে চালু রয়েছে। এর মাঝে কাটতি রয়েছে ১৫টি ব্র্যান্ডের কয়েলের। কিন্তু ডেঙ্গু প্রকোপ বাড়ার পর থেকে ৪ টাকার কয়েল বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকায়। বাজারে নিম পাতার কয়েল ও বুস্টার কয়েলের চাহিদা বেশি।
নিম পাতার একটি কয়েলে দাম রাখা হচ্ছে ৮ টাকা। যা আগে ছিল ৫ টাকা। আর বুস্টার কয়েলের দাম ছিল প্রকারভেদে ৮ থেকে ১০ টাকা, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়। তেজতুরি বাজারের মুদি দোকানদার ইকবাল হোসেন বিবার্তাকে বলেন, এ এক সপ্তাহে প্রায় ২৫ কার্টন কয়েল বিক্রি হয়েছে। এর আগে ২৫ কার্টন কয়েলের বিক্রি হতে সময় লাগত দেড় থেকে তিন মাস।
তিনি আরো বলেন, আমি অর্ডার দিয়েছিলাম ৩০ কার্টনের আর আমাকে দেয়া হলো ২৫ কার্টন কয়েল। এজন্যই কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয় ।
মশা দমনের স্প্রে বাজারে চলে প্রায় ৩০টি কোম্পানির। আর ক্রেতাদের কাছে প্রিয় ব্র্যান্ড প্রায় ১০টি। প্রচলিত ব্র্যান্ডের এসব স্প্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বোতলপ্রতি প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এসব স্প্রের বোতলের গায়ে আগের মূল্য লেখা থাকলেও নেয়া হচ্ছে বাড়তি মূল্য। কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. ইয়াসির দাম বৃদ্ধির দোষ চাপান ডিলারদের ঘাড়ে।
কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটে ভিআইপি স্টোরের মালিক মো. কবির হোসেন বিবার্তাকে বলেন, মশার স্প্রের বিক্রি দ্বিগুণ হয়েছে। আগে মাসে ২০ থেকে ২৫ কার্টন (প্রতিটিতে ১২টি করে) স্প্রে বিক্রি হতো। কিন্তু গত ১৭ দিনে তিনি প্রায় ৪০ কার্টন স্প্রে বিক্রি করেছেন।
শুধু দোকান নয়, সুপারশপ ও ফার্মেসিতেও স্প্রে এবং লোশনের চাহিদা এখন বহুগুণ। রাজধানীর ফার্মগেটের আগোরা সুপার শপের জুয়েল বিবার্তাকে বলেন, মশা তাড়াতে শরীরে দেয়ার লোশন দু'দিনেই ১৫০ পিস বিক্রি হয়েছে। গুডনাইট রিফিল একজন ক্রেতা ২০ পিস নিয়ে গেছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে এসব উপকরণের বিক্রি ব্যাপক পরিমাণে বেড়েছে। অনেকে আবার ম্যাজিক লাইট হ্যান্ডওয়াশ নিয়ে গেছেন।
মশা থেকে রক্ষা পেতে ওডোমাস ও রোলআন ক্রিমের চাহিদাও বেশ বেড়েছে। বাজারে ওডোমাস অয়েন্টমেন্ট ১০০ গ্রাম ক্রিম অন্য সময়ে ২০০ টাকার কম দামে বিক্রি হয়। এখন তার দাম বেড়ে ৫০০-৭০০ টাকা। বৃহস্পতিবার মিরপুর-১৪ ও মিরপুর-১২-এলাকায় লাজ ফার্মা , স্বপ্ন সুপার শপ, প্রিন্স বাজার ছাড়া এই ক্রিম পাওয়া যায়নি কোথাও। এসব জায়গায় এসব ক্রিমের গায়ে দাম কম লেখা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে কয়েকগুণ চড়া দামে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিরপুর-১২ প্রিন্স বাজারের এক বিক্রয়কর্মী বিবার্তাকে বলেন, এসব ক্রিমের দাম বেশি হওয়ার কারণ আমদানিকারক বলতে পারবে। তবে এটা ঠিক এখন চাহিদা বেশি থাকার কারণে মালিকপক্ষ ১০০-২০০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাজারে মশা মারার বৈদ্যুতিক ব্যাটের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আগে এই ব্যাট ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন তা ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ারের ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি মশার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাটের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু এই ব্যাট দেশে উৎপাদন হয় না। তাই বাজারে থাকা ব্যাটের দাম বেড়ে গেছে।
এছাড়া মশা তাড়ানোর জন্য লাইট, ফাঁদ, মশারি ও মশানিধক সব জিনিসের দামই কয়েক গুণ করে বেড়ে গেছে বলে সরেজমিন দেখা যায়।
বিবার্তা/আদনান/উজ্জ্বল/রবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]