শিরোনাম
২১ আগস্টের যন্ত্রণা কাঁধে নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন সাংবাদিক কাইয়ুম
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০১৯, ১৪:০৮
২১ আগস্টের যন্ত্রণা কাঁধে নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন সাংবাদিক কাইয়ুম
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বিকট শব্দ। ভয়াল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর চারদিকে মানুষের করুণ আর্তনাদ ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপদে পৌঁছে জীবন বাঁচাতে যে যেদিকে ইচ্ছে ছুটছে। নিরাপদে যেতে দৌড়াতে গিয়ে সেদিন গুরুত্বর আহত হন সাংবাদিক কাইয়ুম আহমেদ।


এ সময় তার ওপর দিয়ে মানুষের স্রোত বয়ে যায়। প্রাণে রক্ষা পলেও এখন পর্যন্ত অসুস্থতায় ভুগছেন তিনি। তারপরও জীবনযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন। হাজারো কষ্টকে পরাজিত করে প্রতিদিন নিজের কর্মস্থলে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক হিসেবে ২০০১ পরবর্তী দিনগুলোর লড়াই-সংগ্রামেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।


সাংবাদিক কাইয়ুম আহমেদ রাজধানীর খিলগাঁও থানার দক্ষিণ বনশ্রীতে ভাড়া বাসায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। বর্তমানে প্রতিদিনের সংবাদের জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।



দেশের জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল বিবার্তা২৪ডটনেটের এ প্রতিবেদকের কাছে ভয়াল স্মৃতিচারণ করে কাইয়ুম আহমেদ বলেন, ২১ আগস্টে হামলার সময় তৎকালীন সাপ্তাহিক এশিয়া বার্তায় আমি কর্মরত ছিলাম। অ্যাসাইমেন্ট কাভার করতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে যাই। সমাবেশস্থলে ট্রাকের পূর্ব পাশে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে (আওয়ামী লীগ অফিসের রাস্তার মুখে) ছিলাম। বর্তমান প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্যের শেষদিকে জয় বাংলা স্লোগান দিলেন, ঠিক তখনই বিকট শব্দ। ভয়-আতঙ্কে দৌড়াতে গিয়ে পড়ে যাই। জনতার ঢল ছুটছে, সঙ্গে চিৎকার চেঁচামেচি। কখন যেন জনতার পায়ের নিচে পড়ে যাই। চিৎকার করলেও কে শোনে কার কথা; সবাই দিগ্বিদিক ছুটছে। অনেক কষ্টে উঠে আবার দৌড়াই। বাসায় গিয়ে ব্যথায় ছটফট করি।


তিনি বলেন,‘সেই ভয়ঙ্ক শব্দ এখনও কানে বাজে। ভয়ে থরথর করে কাঁপি। ঘুমও আসে না; যদিও আসে স্বপ্নের মধ্যে দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে ফিরি, আঁতকে উঠি। এই ঝুঝি আবার জনতার পায়ের নিচে পিষে যাই।


আগে নিজের ব্যথা নিয়ে না ভাবলেও এখন দুই ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যতের ভাবনায় কাতর। এক রকম পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে আছি। ঘাড়, পিঠ, হাড়, কোমর ও হাঁটুর যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। চিকিৎসকরা বলছেন, আমি আর সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারব না। বরং ধীরে ধীরে আরো খারাপের দিকে যাব।’


কাইয়ুম বলেন, ‘হামলার সময় নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য দৌড়াতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ মূল সড়কে (নবাবপুরের দিকের রাস্তা) পড়ে যাই। আমার ওপর দিয়ে মানুষ ছুটে গেলে কোমরে ও মেরুদণ্ডে আঘাত পাই। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করি। কিন্তু ব্যথার উপশম হয়নি।


২০১৩ সালের জুলাইয়ে দৈনিক যায়যায়দিনে কর্মরত অবস্থায় মেরুদণ্ডে ব্যথার কারণে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হই। কয়েক দিন পর সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও কোমর ও মেরুদণ্ডে ব্যথা বাড়তেই থাকে। পরে দুই দফা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছি। তখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর স্পাইনাল কর্ড ও লিভারে সমস্যা ধরা পড়ে। এরপর থেকে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে এবং ফিজিওথেরাপি নিয়েও ব্যথা থেকে রেহাই পাইনি। এখনো সেই ব্যথা বয়ে বেড়াচ্ছি।’


কাইয়ুম আরো বলেন, ‘সেদিন মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়ে আবার ফিরে আসায় হয়তো নতুন জীবন পেয়েছি- কিন্তু যত দিন বেঁচে থাকব তত দিন বহন করে যেতে হবে সেই শব্দের ভয়াবহতা, যা দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায়। রাতে ঘুমাতে পারি না। ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েও মাঝে মাঝে ঘুম আসে না। রাতে চিৎকার করে উঠি। সেই শব্দ। সেই ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকি। সেই ভয়ংকর শব্দ এখনো কান থেকে যায় না। মাথায় শব্দ ভর করে আছে। কঠিন যন্ত্রণা ভোগ করছি।’


উল্লেখ্য, সাংবাদিক কাইয়ুম আহমেদ দৈনিক জনতা, সংবাদ, যায়যায়দিন, মুক্তকণ্ঠ ও আজকের পত্রিকায় কাজ করেছেন। কখনো প্রতিবেদক ও কখনো সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদে জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক পদে কর্মরত রয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি একসময় আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি সাবেক ৭৪নং ওয়ার্ড (বর্তমান ডিএসসিসির ৩৮নং ওয়ার্ড) আওয়ামী লীগের একটি ইউনিটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।


২১ আগস্টে আহত হওয়ার পর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল এবং সাভারের সিআরপিতে বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। চিকিৎসার জন্য অনেক অর্থ ব্যয় হচ্ছে। সর্বশেষ চলতি মাসে এমআরআই রিপোর্টে ঘাড়, মেরুদণ্ড এবং হাঁটুতে সমস্যা ধরা পড়ে।


বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফ্ফর আহমেদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অসটোসিস কলার ও স্ক্র্যাচে ভর করে হাঁটা, ওষুধ সেবন ও থেরাপি নিয়ে চলতে হচ্ছে। এরই মধ্যে চোখের দৃষ্টি শক্তিও কমে গেছে। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়েই নিয়মিত অফিস করছেন। তবে চিকিৎসা ব্যয় বহনের জন্য পর্যাপ্ত টাকাও নেই তার। ধারকর্জ করে কোনো রকম চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।


বিবার্তা/খলিল/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com