স্তন ক্যান্সার : দানাবাঁধার আগে হতে হবে সতর্ক
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:১৪
স্তন ক্যান্সার : দানাবাঁধার আগে হতে হবে সতর্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

শরীরের কোনো স্থানে অনিয়ন্ত্রিতভাবে কোষ বৃদ্ধি পাওয়াকে ক্যান্সার বলা হয়। আর স্তন ক্যান্সার হলো: স্তনের কোনো স্থানে কোষ অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়া। অর্থাৎ স্তনে অনিয়ন্ত্রিতভাবে কোষ বেড়ে যাওয়া। স্তন ক্যান্সার শুধু স্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।


এটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ক্যান্সারের ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা অনেক বেশি। এজন্য ক্যান্সারকে মরণঘাতী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মানুষ এটিকে ভয়ানক মনে করে। তারা মনে করে ক্যান্সার হলে আর উদ্ধার নেই।


যদিও কথাটা সত্য নয়, বরং এর ছড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতাটাই প্রধানত সমস্যা।


আমাদের দেশে মহিলারা লজ্জায় প্রকাশ করতে পারে না। এখন সব জায়গায় মহিলা সার্জন রয়েছে। রোগীরা তাদের কাছে যাওয়া উচিত। এবং অবশ্যই পরীক্ষা করানো দরকার। লজ্জায় না দেখালে জীবন হুমকির মুখে পড়বে। দ্রুত আসলে স্তন ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা পাওয়া সহজ হয়ে যায়। লজ্জা এক পাশে, আরেক পাশেই কিন্তু জীবন। তাই জীবনকে নিরাপদ রাখতে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।


যেসব কারণে স্তন ক্যান্সার হয়


স্তন ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তবে গবেষণায় কিছু কারণ দেখতে পাওযা যায়, তা হলো: হরমোন জনিত সমস্যা, সেক্সচুয়াল সমস্যা, বয়স ৪০ এর উপরে গেলে, স্থুলতা, মাসিকে বিলম্ব, দেরিতে সন্তান গ্রহণ, শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ানো এবং বংশগত কারণ। এ ছাড়া ছেলেদেরও স্তন ক্যান্সার হয়, তবে এটা মাত্র শতাংশেরও কম।


স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ


প্রাথমিকভাবে ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ থাকে না। স্ক্রিনিং করলে রোগটি ধরা পড়ে। তবে কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়, তা হলো: প্রথমে স্তনে চাকা দেখা দেয়া, চাকাটা খুবই শক্ত হবে এবং এটি নড়াচড়া করবে না। ব্যথা থাকবে না। মাসিক বা অন্যকিছুর সাথে এটি চলে যাবে না, সর্বদা একস্থানে থাকবে। স্তনের বোঁটা ভেতরে দেবে যাওয়া, নিপল দিয়ে রক্ত বা পুঁজ পড়া, নিপলে চুলকানো, নিপল লালচে হয়ে যাওয়া। আরো অনেকভাবে দেখা যেতে পারে। যেমন- হাড়ে ব্যথা স্তনে ছড়িয়ে পড়া, কাশি এবং জন্ডিস হওয়া। তরুণী মেয়েদের ক্ষেত্রে স্তনের চামড়া লালছে হওয়া তার সাথে জ্বর থাকা ,ব্যথা থাকা। স্তনের চামড়ার রং পরিবর্তন হওয়া বা চামড়া মোটা হওয়া (কমলালেবুর খোসার মতো)। ভোগলে চাকা থাকা।


ঝুঁকিতে যারা


প্রথমত সব মহিলারা ঝুঁকিতে রয়েছেন। তার মধ্যে বেশি ঝুঁকিতে আছেন, যারা ঠিক সময়ে সন্তান নেন না এবং বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান না। আগে পরিবারের কারো এ রোগ থাকলে পরবর্তীতে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও রোগটি হতে পারে। অতিরিক্ত রেডিয়শনের কারণে হতে পারে। কেউ যদি আগেই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, তাহলে পরববর্তীতে আবার আক্রান্ত হতে পারেন। ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে মহিলাদের মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়াচ্ছে স্তন ক্যান্সার।


কখন পরামর্শ নিতে হবে


যেহেতু প্রাথমিকভাবে লক্ষণ বোঝা যায় না, তাই স্ক্রিনিং করে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। ৩৫ বছরের কম হলে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হবে। ৩৫ এর বেশি হলে ম্যামোগ্রাফি করতে হবে। সবসময় ম্যামোগ্রাফি করতে হবে না। পরিবারে যদি কেউ আগে আক্রান্ত থাকলে ২৫ বছর থেকে স্ক্রিনিং করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শের মধ্যে আসতে হবে। আক্রান্তের ইতিহাস না থাকলে ৩৫ থেকে চিকিৎসক দেখানো শুরু করা যেতে পারে। আজ-কাল তরুণীদের বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়, তাই ২০ বছর হতে নিজে নিজের স্তন পরীক্ষা করতে হবে। যখন স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং মার্চ শুরু হয়, তখন অনেক সেন্টার বা সংগঠন এগিয়ে আসে। কীভাবে নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করবেন, এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য।


চিকিৎসা


ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে একমাত্র বিশেষায়িত ক্যান্সার হাসপাতাল। যেখানে প্রত্যেকটা রোগীর ক্ষেত্রে সমন্বিত পদ্ধতিতে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। রোগী আসার পরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ পারস্পরিক আলোচনা করে এবং একটি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়, রোগীর অপারেশন লাগবে কিনা? কেউ যদি মনে করে এটি অনেক বড় হয়ে গেছে, ব্যথা হয়—এ মুহূর্তে অপারেশন করলেই ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু শুধু সার্জারি সমাধান না। এখন অনেক যন্ত্রপাতি বের হয়েছে, তার মধ্যে রেডিয়েশন, ক্যামোথেরাপি ও হরমোন থেরাপি—এগুলো খুবই উপকারী চিকিৎসা। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন, কোন থেরাপিটা আগে দরকার। এসব থেরাপির ওপর নির্ভর করে রোগীর ভালোভাবে বেঁচে থাকা। সরকারি হাসপাতালে এসব চিকিৎসা নিতে ৫-৭ হাজার টাকা প্রয়োজন। প্রাইভেট অনেকে হাসপাতালেও চিকিৎসা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে একেক হাসপাতাল ব্যয় একেক রকম হয়।


প্রতিরোধের উপায়


এই রোগ শরীরে দানাবাঁধার আগে সতর্ক হতে হবে। নিজেই পরীক্ষা করে দেখতে হবে আক্রান্ত কিনা। স্তন ক্যান্সারের যখন কারণ জানা যায়। তখন সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। একটা সময় মানুষ জানতো টিবি বা ক্ষয়রোগে মানুষ মারা যায়। কিন্তু যখন জানা গেলো টিবির একটা ব্যাকটেরিয়া দিয়ে এটি তৈরি হচ্ছে তখন রোগটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসলো। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে হলে অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়া হতে বিরত থাকতে হবে। বেশি পরিশ্রম করা, শাকসব্জি খাওয়া। কায়িক পরিশ্রম করা, বেশি সময় অলস না থাকা। দ্রুত বিয়ে করা, সন্তান নেওয়া, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো। সেই সঙ্গে স্ক্রিনিংয়ে আসতে হবে। সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সমন্বিত চেষ্টা করে এটি প্রতিরোধ করতে হবে।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com