বাবা দিবসে কী উপহার দেবেন বাবাকে?
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩, ০৯:০৭
বাবা দিবসে কী উপহার দেবেন বাবাকে?
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আজ রবিবার, ১৮ জুন ‘বিশ্ব বাবা দিবস’। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্ববাসী বাবা দিবস হিসেবে পালন করে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে বাবা দিবস পালনের প্রচলন হয়। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকেই যার শুরু। মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।


১৯০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ভার্জিনিয়ার মোনোনগাহ্‌য় কয়লা খনিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৩৬২ জন পুরুষ। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন সন্তানের বাবা। ফলে প্রায় এক হাজার শিশু পিতৃহারা হয়ে পড়ে। পরের বছর ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই পশ্চিম ভার্জিনিয়ার এক গির্জায় একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। নিহতদের সম্মান জানাতে সন্তানরা মিলে এই প্রার্থনাসভার আয়োজন করে। এটি ছিল বাবাকে সম্মান জানাতে ইতিহাসের প্রথম আয়োজন।


বাবা দিবসকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে সনোরা স্মার্ট ডড নামে এক নারীর। ১৯০৯ সালের আগে ওয়াশিংটনে বাবা দিবস বলে কোনও বিশেষ দিন ছিল না। সে সময় স্থানীয় গির্জায় ডড মা দিবস পালনের কথা শোনেন। মা দিবস পালনের রীতি রয়েছে কিন্তু বাবা দিবস পালনের রীতি নেই জেনে তিনি ভীষণ অবাক হন। তারপর তিনি বাবা দিবসের স্বীকৃতির জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ডড তার বাবাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। মা ছিল না তার। মায়ের মৃত্যুর পর শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থেকেও তাদের সাত ভাইবোনকে বড় করে তুলেছিলেন তাদের সিঙ্গেল বাবা। বাবার এই ত্যাগ দেখে ডডের মনে হলো, মা দিবসের এত আয়োজন হলে বাবা দিবস কেন বাদ থাকবে। বাবাকে সম্মান জানানোর জন্যও একটা দিন থাকা দরকার।


তারপর অনেক চেষ্টা করে দীর্ঘ এক বছরের সাধনায় স্থানীয় কমিউনিটিগুলোতে বাবা দিবস পালন করতে পারেন ডড। ১৯১০ সালের ১৯ জুন বিশ্বে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বাবা দিবস।


ওয়াশিংটন থেকে শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এ দিবস পালনের কথা। আস্তে আস্তে মা দিবসের পাশাপাশি বাবা দিবসের প্রতিও সচেতন হতে থাকেন সন্তানরা। এরপর ১৯২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলি বাবা দিবসে সম্মতি দেন। তারপর ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন জুন মাসের তৃতীয় রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস উদযাপনের কথা ঘোষণা করেন। এবং সবশেষে ১৯৭২ সালে তখনকার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সন একটি আইনে স্বাক্ষর করে বাবা দিবসকে জাতীয় মর্যাদা দেন। তারপর থেকে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার সারা বিশ্বে বাবা দিবস পালন হয়ে আসছে।


বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ দিবসটি ভিন্ন ভিন্ন দিনে পালন করা হয়। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাবা দিবস পালন করা হয় জুন মাসের তৃতীয় রবিবার। দক্ষিণ আমেরিকায় দিবসটি পালিত হয় ১৯ মার্চ। আর অস্ট্রেলিয়া ও ফিজিতে পালন করা হয় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম রবিবার।



বাবা দিবসে বাবার জন্য উপহার



বাবা দিবসে বাবাকে উপহার হিসেবে সাবান, শেভিং ক্রিম, মানিব্যাগ ছাড়াও আরও অনেক কিছু দেওয়া যায়। এই বাবা দিবসে বাবাকে দিতে পারেন এমন উপহার নিয়েই আজকের আলোচনা।


১। ঘড়ি রাখার বক্স


বাবা যদি বিভিন্ন নান্দনিক ঘড়ি নিজের সংগ্রহে রাখেন তাহলে এই গিফটটি হতে পারে তার জন্য উপযুক্ত এক উপহার। তার সংগ্রহ করা ঘড়িগুলো যেন সুরক্ষিত থাকে সেজন্য দিতে পারেন ঘড়ি রাখার বক্স।


২। থার্মাল পানির বোতল


বাবা যদি সকালে নিয়মিত হাঁটেন কিংবা বেশ খানিকটা পথ পায়ে হেঁটে অফিসে যান তাহলে নিশ্চয়ই পথে পানি প্রয়োজন হতে পারে। এর জন্য থার্মাল বোতল উপহার হিসেবে দিতে পারেন। এই তীব্র গরমে থার্মাল বোতল থেকে তিনি যেমন কিছুটা ঠাণ্ডা পানি পান করতে পারবেন আবার একই বোতলে শীতকালে কিছুটা উষ্ণ পানিও পান করতে পারবেন। কারণ উষ্ণ কিংবা শীতল, যেই তাপমাত্রার পানিই রাখা হোক না কেন, থার্মাল বোতলে দীর্ঘ সময় ধরে তা একই থাকবে। তাই, সুন্দর একটি থার্মাল পানির বোতল হতে পারে বাবার জন্য বিশেষ উপহার।


৩। ফুডগ্রেড লাঞ্চ বক্স


বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাবারা স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠেন। তারা বাইরের খাবার যতটা পারেন কম খান। তারা চেষ্টা করেন যেভাবেই হোক খাবার যেন বাসা থেকেই আসে। তাছাড়া কাজের ফাঁকে বাসার খাবার কাজের মধ্যে তাকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেয়। কিন্তু সেই লাঞ্চ বক্স যদি সাধারণ কোনো বক্স হয় তবে বাবার স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বাবার স্বাস্থ্যকে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি থেকে বাঁচাতে তাকে উপহার দিতে পারেন ফুডগ্রেড প্লাস্টিকের তৈরি লাঞ্চ বক্স।


৪। স্মার্ট ওয়াচ


স্মার্ট বাবার জন্য চাই স্মার্ট ওয়াচ। প্রতিদিন কত কিলোমিটার হাঁটছেন তা নিয়ে তাকে এখন আর এত ভাবতে হবে না। ঘড়িই তাকে সবকিছু জানিয়ে দিবে কত কিলোমিটার হাঁটছেন, কত ক্যালরি খরচ ও হাঁটার গতি কেমন ছিল। স্মার্ট ওয়াচের এই সুবিধাগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধাগুলোর সঙ্গে বাবাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বাবাকে করে তুলুন আরেকটু বেশি স্মার্ট।


৫। ভালোমানের কেডস বা জুতা


সুস্বাস্থ্যের জন্য সকালে প্রতিদিন হাঁটতে যাওয়া একদিকে যতটা উপকারী অন্যদিকে তার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায় যখন হাঁটার জুতাটা ভালো মানের না হয়। নিম্নমানের জুতা গোড়ালি থেকে শুরু করে হাঁটু পর্যন্ত নানা রকমের ব্যথার সৃষ্টি করে। তাই বাবাকে দিন আরামদায়ক ও ভালো মানের কোনো জুতা। যা তিনি হাঁটার সময় ব্যবহার করতে পারবেন স্বাচ্ছন্দ্যে।


৬। চশমা


চশমা হতে পারে বাবার নিত্যদিনের সঙ্গী। তাই তাকে উপহার দিতে পারেন ডাস্ট প্রোটেকটেড, সান প্রোটেকটেড ও অ্যান্টি রিফ্লেকশন সুবিধা সমৃদ্ধ চশমা। চাইলে একদিন বাবাকে সঙ্গে নিয়ে তার চোখের পরীক্ষাটা করে নিতে পারেন। তার চোখের পাওয়ার ঠিক আছে কি না তা জানা জরুরি। সংসার ও অফিসের ব্যস্ত সময় পার করে বাবারা নিজের দিকেই খেয়াল করেন না অনেক সময়ে।


৭। অফিস ব্যাগ


প্রতিদিন অফিসে যাবার সময়ে আপনার দেওয়া ব্যাগ হতে পারে বাবার জন্য একটি বিশেষ উপহার। তাই ভালো কোনো ব্র্যান্ডের অফিস ব্যাগ নির্বাচন করতে পারেন উপহার হিসেবে। তাছাড়া অফিসে না গেলেও কোথাও বেড়ানোর জন্য হলেও বাবার একটি ব্যাগের প্রয়োজন তো আছেই।


৮। পারফিউম


বাবার জন্য চাই সেরা পারফিউম। যদি বাবা সুগন্ধি পছন্দ করেন তাহলে তার জন্য নির্বাচন করুন অ্যালকোহল মুক্ত কোনো পারফিউম। সেক্ষেত্রে নামাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তার কোনো আপত্তি থাকলো না।


৯। রাতে ঘুমানোর পোশাক


সারাদিনের ক্লান্তি ও পরিশ্রমের পরে বাবার রাতের ঘুম বিশেষভাবে প্রয়োজন। তাই যদি পাতলা ও আরামদায়ক কোনো কাপড় পরিধান করে ঘুমোতে যান তাইলে ঘুমের মধ্যে আর কোনো অসুবিধা নেই। তাই ভালোমানের একটি নাইট ড্রেস উপহার হিসেবে দিতে পারেন।


১০। ছবির ফ্রেম


ছবির ফ্রেমে পরিবারের একটি ছবি উপহার দিতে পারেন বাবাকে। অথবা নিজের সঙ্গে বাবার কোনো মুহূর্ত যদি ক্যামেরাবন্দী করা হয় সেটিও ছবি হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন। বাবার কাজের ডেস্কে এই ছবির ফ্রেম তাকে সবসময় পরিবার ও আপনার কথা মনে করিয়ে অনেক বেশি প্রাণবন্ত রাখবে।



তবে বাবার কাছে আসলে সন্তানের ভালোবাসাটাই মুখ্য। কোন উপহার দিয়ে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ প্রয়োজন হয় না। আবার, এও সত্যি উপহার দিয়ে আমরা বিশেষ দিন উদযাপন করতে ভালোবাসি।



বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের এই বিশেষ দিবসে সন্তানরা বাবাদের কোনও না কোনও উপহার দিতে পছন্দ করে। বিশ্বের অনেক দেশে ঘটা করে বাবা দিবস উদযাপন করা হয়। সমাজ, সংস্কৃতি, দেশভেদে উদযাপনে কিছুটা বৈচিত্র্য দেখা যায়। কোনও দেশে হয়তো সন্তান বাবাকে ফুলের তোড়া ও কার্ড উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়, আবার কোনও দেশে নেকটাই, টুপি, মোজা ও বিভিন্ন স্পোর্টস সামগ্রী উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। তবে দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি কিংবা উপহার ভিন্ন হলেও বাবার প্রতি সন্তানদের ভালোবাসায় নেই কোনও ভিন্নতা। যেখানে প্রকাশভঙ্গি নয়, ভালোবাসা প্রকাশই মুখ্য।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com