গ্রীষ্মকাল মানেই ফলের মৌসুম। আম, কাঁঠাল, জাম, লিচুতে ভরপুর ফলের বাজার। এরই মধ্যে বাজারে ছেয়ে গেছে জাতীয় ফল কাঁঠাল দিয়ে। এই মৌসুমে বেশ জনপ্রিয় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল কাঁঠাল।
এ ছাড়া শুধু কাঁঠালই নয়, কাঁঠালের বিচিও খাওয়া হয়। এটিও উপকারী। সুস্বাদু ও সুমিষ্ট এই ফল নানাভাবে আমাদের উপকার করে থাকে।
কাঁঠালের উপকারিতা
১. প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে ৯৪ কিলো ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরকে০ প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে। তাই শরীরের ক্লান্তি এড়াতে রোজ পর্যাপ্ত কাঁঠাল খাওয়া ভালো।
২. প্রাকৃতিকভাবে মানবদেহে ভিটামিন-সি তৈরি হয় না। কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-সি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে এই ভিটামিন-সি।
৩. কাঁঠালে রয়েছে সোডিয়াম এবং পটাসিয়াম যা শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্সকে ঠিক রাখে। এর ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হার্টও ভাল থাকে।
৪. এই ফলে খনিজ উপাদান আয়রন থাকে যা রক্তে লোহিতকণিকার পরিমাণ বাড়ায়। এতে করে শরীরে রক্ত স্বল্পতা থাকলে তা কমে যায়।
৫. কাঁঠালে থাকে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভনয়েডসের মতো যৌগ। এই যৌগগুলি শরীরে ক্যান্সার বাসা বাঁধতে দেয় না।
৬. কাঁঠালে আছে ভিটামিন বি৬। উপকারী এই উপাদান ছাড়াও এতে পাওয়া যায় প্রচুর ক্যালোরি। যা কমায় হৃদরোগের ঝুঁকি। তবে এতে কোনো রকম কোলেস্টেরল নেই।
৭. ত্বক উজ্জ্বল রাখতে চাইলে কাঁঠাল খাওয়া উচিত। নিয়মিত কাঁঠাল খেলে ত্বক দ্রুত উজ্জ্বল হবে। কারণ এই ফলে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। সেই সঙ্গে কমায় বলিরেখাও।
৮. এই ফলে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন। চোখ ভালো রাখার জন্য এই দুই উপাদান অপরিহার্য।
৯. এই থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম মানব দেহের হাড়ের গঠন ও হাড় শক্তিশালীকরণে ভূমিকা পালন করে। এছাড়া রক্ত সংকোচন প্রক্রিয়া সমাধানেও ভূমিকা রাখে।
ওজন কমানো থেকে শুরু করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে কাঁঠালে থাকা পুষ্টিগুণ। জেনে নিন কাঁচা কাঁঠাল বা এঁচোড় খেলে কোন কোন রোগ থেকে মুক্তি মিলবে-
রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখে
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা কাঁঠালে ২০৬ গ্রাম ও কাঁঠালের বীজে ৬.৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। এই প্রোটিন দেহের গঠনে সাহায্য করে। কাঁঠালে থাকে শ্বেতসার। যারা মাছ-মাংসের প্রোটিন গ্রহণ করেন না, তারা এই এঁচোড় খেতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাংস খেলে যে উপকার পাওয়া যায়, তার অনেকটাই পাওয়া যায় এঁচোড় খেলেও। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দারুণ উপকারী এঁচোড়।
ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
পুষ্টিবিদদের মতে, এঁচোড় শুধুই স্বাদের জন্য খাওয়া হয় না। হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে এর জুড়ি মেলা ভার।
রক্তে যে খারাপ কোলেস্টেরল আছে তা কমাতে সাহায্য করে এঁচোড়। এছাড়া কাঁঠাল ফাইবারসমৃদ্ধ ফল হওয়ায় হজমশক্তি বাড়ায় ও পেট পরিষ্কার রাখে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও কাজ করে এঁচোড়। এতে থাকা ভিটামিন এ ও সি থাকে, যা বহু রোগ দূরে রাখতে সাহায্য করে।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়, তাই নিয়মিত খাবারের তালিকায় যদি এঁচোড় রাখতে পারেন তাহলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমবে অনেকটাই।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতেও এঁচোড়ের জুড়ি মেলা ভার। এর মধ্যে যে পটাশিয়াম, ফাইবার ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, তা বিভিন্ন রকমের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
অতিরিক্ত কাঁঠাল খেলে কি হয়?
কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ থাকে তাই এটি গুরুপাক ফল।
পরিমাণে বেশি আমিষ থাকায় এটি হজমে সময় বেশি প্রয়োজন হয়। তাই অতিরিক্ত কাঠাল খেলে বদহজমের সম্ভাবনা থাকে।
অনেক সময় এটি অ্যালার্জির কারণ ও হয়।
এটি গ্লুকোজ পরিবর্তন করতে সক্ষম তাই ডায়াবেটিস রোগীদের সহনশীল মাত্রায় খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
এছাড়া রক্ত সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগের জন্য ও এটি খেতে নিষেধ করা হয়।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]