আইনের নিরঙ্কুশ আধিপত্য বা প্রাধান্য কার্যকর করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। বিচার বিভাগ যদি আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ বা পিছপা হয় তাহলে রাষ্ট্র এবং নাগরিক ক্ষতিগ্রস্থ হতে বাধ্য মনে করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে বিদায়ী সংবর্ধনায় দেয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় আমার উত্তরাধিকারী গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন এবং আমি এটাও মনে করি মহান আল্লাহতায়ালা তাকে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার অধিকারী করবেন এবং বিচার বিভাগকে আরো গতিশীল বিচার বিভাগে পরিণত করবেন।
বিচারপতি বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি আমার বিচার বিভাগ তার কাছেই হস্তান্তর করতে যাচ্ছি যিনি এই বিভাগকে আরও গতিশীল করার জন্য ক্ষমতাবান এবং মনোযোগী হবেন।
বিচার বিভাগকে প্রজাতন্ত্রের হৃদপিণ্ড উল্লেখ করে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের দক্ষতার চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের আর কোনো উপযুক্ত পরীক্ষা নেই। একটি জাতির জনগণ শাসন বিভাগ বা আইন বিভাগের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারে কিন্তু বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারালে সে জাতিকে খারাপ দিনটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আইনের নিরঙ্কুশ আধিপত্য বা প্রাধান্য কার্যকর করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। বিচার বিভাগ যদি আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ বা পিছপা হয় তাহলে রাষ্ট্র এবং নাগরিক ক্ষতিগ্রস্থ হতে বাধ্য।
তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগ সংবিধানের আধিপত্য রক্ষার পাশাপাশি জনগণের মৌলিক অধিকারের রক্ষক। সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের বিকাশ, আইনের শাসন সংরক্ষণ এবং সমাজের দুর্বল অংশের অধিকার এবং সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য্য। সুপ্রিম কোর্ট বিচার প্রশাসনের সর্বোচ্চ আদালত আর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এর সর্বোচ্চত্বের উপর নির্ভর করে। সাংবিধানিক বিধান দিয়ে সর্ব প্রকার সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে বিচার বিভাগকে মজবুত দেওয়াল দিয়ে রক্ষা করার দায়িত্ব বিচারকদের, আইনজীবীদের এবং রাষ্ট্রের প্রত্যেক দায়িত্বশীল নাগরিকের। আমরা, আপনারা, সবাই সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সর্বনাশা দিনের জন্য প্রতিটি নাগরিকের অপেক্ষা করতে হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, এখানে আমার ৪৩ বছরের পদচারণা আজ থেকে স্মৃতি হয়ে থাকবে। আমি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মহাশক্তিতে বিশ্বাস করি, তিনি এই পবিত্র বিচারালয়, বিজ্ঞ বিচারক, বিজ্ঞ আইনজীবী, বিচারালয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রক্ষা ও সঠিক পথে চলার তওফিক দান করবেন।
তিনি বলেন,
আমার কর্মকালীন সময়ে সম্মানিত বিচারক, বিজ্ঞ আইনজীবী, আইন, বিচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, অর্থ, জনপ্রশাসন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ এবং সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির প্রত্যেক কর্মকর্তা এবং কর্মচারী এবং সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা যে সহায়তা দিয়েছেন তা আমি কৃতজ্ঞতার সাথে সারাজীবন মনে রাখব।
উল্লেখ্য, অবসরে যাচ্ছেন দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যাবেন। কিন্তু সে সময় সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি থাকায় আজ (বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট) তার বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবস।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর শপথগ্রহণের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২২তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। টানা ২০ মাস বিচারিক দায়িত্ব পালন করেন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
তার ৬৭ বছর পূর্ণ হবে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। তাই সংবিধান অনুসারে ওই দিন তিনি অবসরে যাবেন।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
পড়ালেখা শেষে ১৯৮১ সালের ২১ আগস্ট জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট এবং ১৯৯৯ সালের ২৭ মে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খুলনা সিটি করপোরেশন, কুষ্টিয়া পৌরসভা, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির আইন উপদেষ্টা ছিলেন। বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৯ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগের এবং ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ আপিল বিভাগে নিয়োগ পান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এ ছাড়া তিনি ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিবার্তা/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]