শিরোনাম
মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পাওয়া হুমায়ুন কাশিমপুর থেকে মুক্ত
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৫৮
মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পাওয়া হুমায়ুন কাশিমপুর থেকে মুক্ত
ফাইল ছবি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

এক স্কুলছাত্রীকে হত্যা মামলায় ২০০৬ সালের এপ্রিল থেকে কনডেম সেলে ছিলেন লাকসামের হুমায়ুন কবির। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে খালাস পেয়ে সোমবার (১৯ অক্টোবর) কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবিএম বায়েজিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


২০০৬ সালে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা হয় কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার বাসিন্দা হুমায়ুন কবিরের। সেই থেকে তিনি কনডেম সেলে ছিলেন। তারও প্রায় দুই বছর আগে ২০০৪ সালের জুলাই মাসে ওই হত্যাকাণ্ডের পর তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন।


পরবর্তীতে হাইকোর্টে জেল আপিলেও তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। এরপর জেল আপিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। গত ২২ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ হুমায়ুন কবিরের জেল আপিল মঞ্জুর করে তাকে এই মামলা থেকে খালাস দেন। ওইদিন তার পক্ষে আইনজীবী এবিএম বায়েজিদ বলেন, খালাস হওয়ায় আর কোনো মামলা না থাকলে তার এখন মুক্তি পেতে বাধা নেই।


আইনজীবী এবিএম বায়েজিদ সাংবাদিকদের জানান, হুমায়ুনের এক আত্মীয় মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন তিনি কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। পরে হুমায়ুনের ছোট বোনের জামাই মনু মিয়াও সাংবাদিকদের বলেন, মাগরিবের সময় তিনি (হুমায়ুন) ফোন করে মুক্তি পাওয়ার কথা বলেছেন। আমরা এখন তাকে আনতে যাচ্ছি।


ঘটনার বিবরণী উল্লেখ করে আইনজীবী বায়েজিদ জানান, ২০০৪ সালের ৩০ জুন লাকসামের কনকশ্রী গ্রামের সাকেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী সকাল সোয়া ১০টার দিকে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু স্কুল ছুটি হওয়ার পরও বাড়ি ফিরে না আসায় স্কুলে খোঁজ করেন তার অভিভাবকরা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন শিশুটি স্কুলে যায়নি। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি ও সম্ভাব্য স্থানে তাকে খুঁজে না পেয়ে ওই দিনই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শিশুটির চাচা মো. জসীম উদ্দিন।


ওই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়ার পথে শিশুটিকে সাকেরা গ্রামের মাস্টারবাড়ির পাশে কালভার্টের উপর শুয়ে পড়তে দেখেন। এ সময় আরও পাঁচ-ছয়জন লোক ছিলেন সেখানে। ওই সময় হুমায়ুন কবির এসে সবাইকে তাড়িয়ে দিতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী যাওয়ার সময় শিশুটিকে বাড়ি যেতে বললে হুমায়ুন কবির শিশুটির মামা পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি শিশুটিকে বাড়ি পৌঁছে দেবেন। কিন্তু হুমায়ুন কবির বাড়ি পৌঁছে দেননি।


পরে এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থার আবেদন জানিয়ে লাকসাম থানায় এজাহার দায়েরের পর পুলিশ ওই বছরের ২ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করে। ৪ জুলাই ট্রাকচালক হুমায়ুন কবিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওইদিনই কালভার্টের পাশে জঙ্গলের ভেতর থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করা হয়।


এ মামলায় ২০০৬ সালের ৫ এপ্রিল বিচারিক আদালত হুমায়ুন কবিরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। নিয়ম অনুসারে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে এবং হুমায়ুন জেল আপিল করেন। ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন।


এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জেল আপিল করেন হুমায়ুন। এই আপিলের শুনানি শেষে গত ২২ সেপ্টেম্বর তার আপিল মঞ্জুর করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ।


এবিএম বায়েজিদ আরো বলেন, এ মামলায় ক্রেডিবল সাক্ষী ছিল না। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে শিশুটির মরদেহ উদ্ধারের সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেখানে ছিলেন। অথচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিচারের সময় জেরা করা হয়নি। এছাড়া হুমায়ুন কবির তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন শিশুটি তার খালাতো বোনের মেয়ে।


কিন্তু শিশুটির বাবা সাক্ষ্যে বলেছেন তিনি হুমায়ুন কবিরকে চেনেন না। আবার শিশুটির মাকেও এ মামলায় সাক্ষী করা হয়নি। শিশুটির মাকে সাক্ষী করা হলে জানা যেত হুমায়ুন কবির আদৌ পরিচিত কেউ কিনা। ফলে এখানে সন্দেহ রয়ে গেছে।


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com