শিরোনাম
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মামলায় লড়বেন তুরিন আফরোজ
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:০৬
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মামলায় লড়বেন তুরিন আফরোজ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতের হায়দরাবাদের ৭ম নিজামের সম্পদ নিয়ে ৭০ বছর ধরে চলা মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতে পাকিস্তানের বিপক্ষে এক রায়ে সম্প্রতি জয় পায় ভারত। গত ২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক আদালতের ওই রায়ে বলা হয়েছে, হায়দরাবাদের নিজামের সম্পদে একমাত্র অধিকার ভারতের। এর পূর্ণ মালিকানা নিজাম ওসমান আলি খানের বংশধরদের। পাকিস্তানের এই সম্পত্তির ওপর কোনো ধরনের অধিকার নেই।


ওই রায়ের পর হায়দরাবাদের নওয়াব নাজাফ আলি খান সাহেব (সপ্তম নিজামের পৌত্র এবং প্রিন্স হাশাম জাহ বাহাদুরের ছেলে) দাবি করেন নিজামের এই সম্পত্তি তার ১২০ জন বংশধরের মধ্যে ভাগাভাগি করে দিতে হবে।


নওয়াব নাজাফ আলি খান তার দাবির পক্ষে আইনি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে। যিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক একজন প্রসিকিউটর।


তুরিন আফরোজ নিজেই বুধবার (১৩ নভেম্বর) তার ফেসবুক টাইমলাইনে একটি পোস্ট দিয়ে এই খবর জানিয়েছেন। তুরিন আফরোজ ফেসবুক পোস্টে লেখেন...


“আলহামদুলিল্লাহ! আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য একটা সুখবর। গতকাল (১২ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে) ভারতের হায়দরাবাদের নওয়াব নাজাফ আলি খান সাহেব (ভারতের হায়দরাবাদের সপ্তম নিজামের পৌত্র এবং প্রিন্স হাশাম জাহ বাহাদুরের পুত্র) আমাকে তার "লিগ্যাল এডভাইজার" হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তবে, গর্বের বিষয় হলো, লন্ডনের হাই কোর্ট অব জাস্টিসে বহুল আলোচিত "পাকিস্তান বনাম ভারত" মামলাটির শুনানিতে আমি নওয়াব সাহেবের পক্ষে আইনি লড়াই লড়ব। আরো বড় কথা, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মামলা লড়ব।”


প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময়ে হায়দ্রাবাদের সপ্তম নিজাম আশঙ্কা করেছিলেন, তার বিপুল সম্পত্তি হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে। লন্ডনে পাকিস্তানের দূতের হাতে তখন তিনি ১০ লাখ পাউন্ড নগদ দিয়েছিলেন। যা ওই দূত লন্ডনের ন্যাটওয়েস্ট ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখেন। সেই অর্থই এখন সুদে-আসলে সাড়ে তিন কোটি পাউন্ডে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা।


১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর লন্ডনের ওই ব্যাংকে নিজামের গচ্ছিত অর্থ পাকিস্তানকে দিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে ব্রিটিশ আদালতে আবেদন করে পাকিস্তান। এই ইস্যুতে মামলা করে হায়দরাবাদের নিজামের পরিবার।


১৯৪৮ সালে নিজামদের রাজ্য দখল করে ভারত সরকার। পরবর্তী কালে নিজামদের সঙ্গে বন্ধুত্বও স্থাপন করে তারা। এখন আইনি লড়াইয়ে তাদেরই পক্ষে দাঁড়ায় দিল্লি।


নিজামের দুই উত্তরসূরি মোকাররম ঝাহ (হায়দরাবাদের অষ্টম নিজাম) ও তার ছোট ভাই মোফাখমও ভারতের সঙ্গে হাত মেলান। এরপরই তাঁরা দাবি করেন যে এই সম্পত্তি তাঁদের। পাল্টা দাবি জানিয়ে পাকিস্তান বলে, ন্যায়ত এই সম্পত্তি তাদের। বর্তমানে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ রক্ষিত আছে লন্ডনের ন্যাশনাল ওয়েস্ট মিনস্টার ব্যাংকে।


লন্ডনের রয়্যাল কোর্ট অব জাস্টিসের বিচারক মার্কাস স্মিথ তার রায়ে বলেছেন, সপ্তম নিজাম ওই সম্পত্তির অধিকারী। ফলে ভারত সরকার এবং যুবরাজ এ সম্পদের অধিকারী। তিনি আরও জানান, কোনোভাবেই পাকিস্তান ওই সম্পত্তির দাবিদার হতে পারে না। পাকিস্তান সম্পদের সমর্থনে কোনো তথ্যপ্রমাণ আদালতে হাজির করতে পারেনি। দুই যুবরাজ এবং ভারতের অধিকার রয়েছে এ অর্থ গ্রহণ করার।


ওই রায়ের পর নিজামের এই নাতি নাজফ আলি খান বিবিসি তেলেগুকে বলেন, ‘আমরা বিচারপতি মার্কাস স্মিথের রায়কে স্বাগত জানাই। আদালত পাকিস্তানের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। পরিবার দীর্ঘকাল এই রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে।’


এর একদিন পরই নাজাফ আলি খান ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই-কে বলেন, ‘নিজামের ওই অর্থ তার ১২০ জন বংশধরের মধ্যে বন্টন করে দিতে হবে।’ আর নিজামের ওই বংশধররা এই বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য তাকে পুরো দায়িত্ব দিয়েছে। কেননা তিনি এখন ‘নিজাম ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট।


নাজাফ আলি খান আরো বলেন, ‘শুধু তারা দুজনেই- প্রিন্স মোকাররম ঝাহ (হায়দরাবাদের অষ্টম নিজাম) ও তার ছোট ভাই মোফাখম এই সম্পত্তি নিতে পারে না। তারা পরিবারের সঙ্গে বসে এর সুরাহা করবে।


‘কিন্তু তারা যদি সকলকে সম্পত্তির ভাগ দিতে না চায় তাহলে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব’, বলেন নাজাফ আলি খান।


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com