চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৩৯
চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

চীনে সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তোনি ব্লিনকেনকে দেশটির শিল্পখাতের সক্ষমতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অতি-উদ্বেগ বন্ধ হওয়া উচিত বলে বার্তা দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এসময় শি জিনপিং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, চীন আশা করে যুক্তরাষ্ট্র চীনের উন্নয়নকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবে।


২৬ এপ্রিল, শুক্রবার বিকালে বেইজিংয়ে গণ-মহাভবনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্টনি ব্লিঙ্কেন।


শি জিনপিং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, চীন একটি আত্মবিশ্বাসী, উন্মুক্ত এবং সমৃদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায়। আমরা আশা করি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও চীনের উন্নয়নকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবে।


চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, একবার এই মৌলিক সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে চীন-মার্কিন সম্পর্ক সত্যিকার অর্থে আরও ভালো হবে এবং এগিয়ে যাবে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উচিত প্রতিপক্ষের পরিবর্তে অংশীদার হওয়া; একে অপরের ক্ষতি না করে একে অপরকে সফল হতে সাহায্য করা।


আলাপে একে অন্যকে নিয়ে কোনো প্রকার ভুল হিসাব-নিকাশ এড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন অ্যান্তোনি ব্লিনকেন।


গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) চীনের সাংহাইয়ে পৌঁছান অ্যান্তোনি ব্লিনকেন। সেখানে তিনি চীনের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। শুক্রবার বেইজিং পৌঁছে তিনি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ির সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে তিনি চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।


চীনে এমন সময় সফর করছেন ব্লিনকেন যখন ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ধুকতে থাকা রুশ সামরিক শিল্প বেইজিংয়ের পরোক্ষ সমর্থনে আবার চাঙ্গা হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।


অন্যদিকে, চলতি সপ্তাহে তাইওয়ানকে ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিতে একটি বিল পাস করেছে মার্কিন কংগ্রেস। শুধু তাই নয়, জনপ্রিয় চীনা মালিকানাধীন ভিডিও অ্যাপ টিকটককে নিষিদ্ধ করার জন্যও একটি বিল পাস হয়েছে। উভয় বিলেই সই করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ বিষয়গুলো নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা চলছে। এমন সময় বেইজিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনকে রীতিমতো রাজনৈতিক পাঠ দিলেন ওয়াং ইয়ি ও শি জিনপিং।


শুক্রবার সাক্ষাৎকালে শি জিনপিং ব্লিনকেনকে বলেন, চলতি বছর চীন-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪৫তম বার্ষিকী। ৪৫ বছরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছে। যেমন, দুই দেশের অংশীদার হওয়া উচিত, প্রতিদ্বন্দ্বী নয়; পরস্পরকে ক্ষতি নয়, সাহায্য করা উচিত। দু’পক্ষের উচিত মতৈক্য খোঁজা এবং ভিন্নতাকে সম্মান করা। প্রতিশ্রুতি ভালোভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। জিনপিং তিনটি প্রধান নীতিগত প্রস্তাব দেন। তা হলো- পারস্পরিক সম্মান, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং উভয়ের-জয় সহযোগিতা। এসব অতীত অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপই নয়, বরং ভবিষ্যতেরও পথপ্রদর্শন করে।


জিনপিং আরো বলেন, এখন বিশ্বে গভীর পরিবর্তন চলছে এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপ জোরদার করা, পার্থক্য মোকাবিলা করা এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করা দু’দেশের জনগণের সাধারণ আকাঙ্ক্ষাই নয়, আন্তর্জাতিক সমাজের অভিন্ন প্রত্যাশাও বটে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ বিকাশ এবং স্বাধীনভাবে সমৃদ্ধির জন্য পৃথিবী যথেষ্ট বড় বলে উল্লেখ করেন জনাব তিনি। চীন একটি আত্মবিশ্বাসী, উন্মুক্ত, সমৃদ্ধ ও উন্নয়নশীল যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায়। চীন আশা করে, যুক্তরাষ্ট্রও চীনের উন্নয়নকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবে। শুধুমাত্র মৌলিক এ সমস্যার সমাধান হলে, চীন-মার্কিন সম্পর্ক সত্যিকার অর্থে স্থিতিশীল, কল্যাণকর এবং অগ্রসর হবে।


চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, সান ফ্রান্সিসকোতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ‘সান ফ্রান্সিসকো ভিশন’ উত্থাপন করা হয়েছে। গত কয়েক মাসে, দুদেশের কর্মদল ‌এসব ঐকমত্য বাস্তবায়ন করেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগাযোগ বজায় রেখেছে এবং কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তবে, এখনও অনেক সমস্যা রয়েছে যা সমাধান করা দরকার। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এবার চীন সফর পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি। এ সফর সার্থক হবে বলে আশা করেন জিনপিং।


চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, শি জিনপিং ব্লিনকেনকে আরও বলেছেন, দুই দেশের উচিত কথায় সত্য এবং কাজে দৃঢ় হওয়া। এক কথা বলে অন্য কাজ করা উচিত নয়।


একই দিন শুক্রবার ওয়াং-ব্লিনকেনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ব্লিনকেনকে ওয়াং ইয়ি বলেছেন, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের স্বার্থের ক্ষেত্রে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয় যুক্তরাষ্ট্রের। চীনের উন্নয়নকে দমন করা এবং চীনের রেড লাইনে পা রাখাও কাম্য নয়। ওয়াং ইয়ি বলেন, চীনের উন্নয়নের বৈধ অধিকার অযৌক্তিকভাবে দমন করা হচ্ছে, এবং চীনের মূল স্বার্থ ক্রমাগত চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে।


এসময় ব্লিনকেন বলেন, তিনি আশা করেন, দুই পক্ষ বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন মাদকবিরোধী, সামরিক সম্পর্ক এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অগ্রগতি করতে পারে।


বৈঠকের পরে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেছেন, ব্লিনকেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পে চীনের সমর্থন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি বজায় রাখা এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের তৎপরতা নিয়েও আলোচনা করেছেন।


ব্লিনকেন জানান, ওয়াংয়ের সঙ্গে তার আলোচনা প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলেছে। পৃথকভাবে চীনের জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ওয়াং জিয়াওহং-এর সঙ্গেও আলোচনা করেছেন ব্লিনকেন। তিনি এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অবৈধ ড্রাগের বিরুদ্ধে সহযোগিতার বিষয়ে জোর দিয়েছেন।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com