
‘বিষ মিশ্রিত’ চিঠি পাঠিয়ে পাকিস্তানের লাহোর হাইকোর্টের অন্তত ১৭ জন বিচারপতিকে হুমকি দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। চিঠিতে পাকিস্তানের বিচার ব্যবস্থার সমালোচনা ও ‘ব্যসিলাস অ্যানথ্রাসিস’ শব্দটিরও উল্লেখ করা হয়েছে। যা এক ধরনের বিষাক্ত পাউডার হিসেবে পরিচিত।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বিচারপতিদের বিষ মিশ্রিত চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, চিঠিতে পাকিস্তানের জনগণের সমস্যার জন্য বিচারপতিদের দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসাসহ সুপ্রিম কোর্টের ৫ বিচারপতি একই ধরনের চিঠি পেয়েছেন।
এদিকে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা ‘ব্যসিলাস অ্যানথ্রাসিস’ হলো এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা অ্যানথ্রাক্স সৃষ্টি করে, যার তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না হলে তা মারাত্মক হতে পারে।
চিঠির ঘটনায় থানায় এফআইআর করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাদা খামে লেখা চিঠিগুলোতে প্রেরকদের অসম্পূর্ণ ঠিকানা ছিল। মঙ্গলবার খামগুলো খুলতেই ইসলামাবাদ হাইকোর্টের দুই বিচারপতির অধীনস্থ কর্মীরা সন্দেহজনক পাউডার দেখতে পান।
বিষ মিশ্রিত চিঠির বিষয়ে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চিঠি খোলার পরে কর্মকর্তাদের চোখে চরম জ্বালা অনুভূত হয় এবং তাদের ঠোঁটের চারপাশেও জ্বলছিল বলে অভিযোগ করেন তারা।
লাহোরের ডেপুটি পুলিশ প্রধান আলী নাসির রিজভি বলেন, এসব চিঠি তদন্তের জন্য সন্ত্রাস দমন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং অন্যান্য আদালতেও পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এ রহস্যের কিনারা খোঁজার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। এর নেপথ্যে কে বা কারা আছে, তা শনাক্ত করতে ডাকা হতে পারে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ডিপার্টমেন্টকে।
রাওয়ালপিন্ডির জেনারেল পোস্ট অফিসে এসব চিঠি শনাক্ত করেছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু ওই ডাক অফিসে কোনো সিসিটিভি না থাকায়, কারা এসব পাঠিয়েছে বা রেখে গেছে, তা শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। কোর্টের স্টাফরা ওই চিঠি খোলার পর তার ভিতর পাউডার শনাক্ত করতে পেরেছেন। ধারণা করা হচ্ছে এনভেলপের ভিতর সন্দেহজনক অ্যানথ্রাক্স পাউডার আছে। এটি একটি ক্ষতিকর পদার্থ। ত্বকের সংস্পর্শে এলে তা থেকে সংক্রমণ হতে পারে।
তবে ফরেনসিক বিশ্লেষকরা বলছেন, লাহোর হাই কোর্টের বিচারকদের কাছে পাঠানো এ চিঠিগুলোতে অ্যানথ্রাক্স নেই। আছে কার্বোহাইড্রেটস, যার ভিতর আর্সেনিক শনাক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে এই আর্সেনিক খাঁটি নয়।
সূত্রগুলো বলেছেন, ওই চিঠিতে কোনো অ্যানথ্রাক্স বা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নেই। তবু কারা এটা পাঠিয়েছে তা শনাক্ত করতে এনভেলপের ওপর আঙ্গুলের ছাপ শনাক্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তদন্তকারী এজেন্সিগুলোকে। প্রদেশের রাজধানীজুড়ে সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে পাঞ্জাব সেফ সিটি অথরিটিকে। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে মিটিং করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। তিনি এই যড়যন্ত্রের তথ্য উদ্ধারে দৃঢ়তা প্রকাশ করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, তেহরিক-ই-নামুস পাকিস্তান নামে স্বল্প পরিচিত একটি গোষ্ঠী সন্দেহজনক চিঠিগুলোর দায় স্বীকার করেছে।
তেহরিক-ই-নামুস পাকিস্তানের কথা প্রথম শোনা যায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। তখন পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ ইসলামাবাদের একটি হাইকিং ট্রেইলে একটি সন্দেহজনক ব্যাগ পায়। ব্যাগে একটি চিঠি, হ্যান্ড গ্রেনেড, একটি পিস্তল, কয়েকটি গুলি ও শহরের স্পর্শকাতর বিভিন্ন ভবনের মানচিত্র পাওয়া গেছিল।
সূত্র: ডন
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]