
ভয়াবহ যুদ্ধের জেরে মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়া গাজা উপত্যকায় ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পাঠাতে সেখানে অস্থায়ী বন্দর নির্মাণ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ ঘোষণা দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট অব ইউনিয়ন দিবস উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে দেয়া এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, গাজায় সমুদ্রপথে ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা সামগ্রী পাঠাতে সেখানে একটি অস্থায়ী বন্দর নির্মাণ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা বাহিনী।
নির্মাণ কাজ শেষ হতে কয়েক সপ্তাহ লাগবে। বন্দরটি ব্যবহার করা হবে শুধু গাজায় ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর জন্য। কোনো সামরিক প্রয়োজনে এটি ব্যবহার করা হবে না। ভাষণে ইসরায়েলকে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
গাজার যুদ্ধপীড়িত বেসামরিক জনগণের হাতে ত্রাণ তুলে দেওয়া একটি সামষ্টিক দায়িত্ব এবং ইসরায়েলকে অবশ্যই তার হিস্যার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। আর সেই দায়িত্ব হলো গাজায় অধিক হারে ত্রাণ প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো ঝামেলা না করা এবং এই নিশ্চিয়তা দেওয়া যে, ত্রাণকর্মীরা ক্রসফায়ারে প্রাণ হারাবে না।
ইসরায়েলকে আরেকটি কথা আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই মানবিক সহায়তা নিয়ে কোনো প্রকার দর কষাকষি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। মানবিক সহায়তা রাজনৈতিক দর কষাকষির অস্ত্র হতে পারে না।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গাজায় ত্রাণ সরবরাহ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে রাষ্ট্রটির যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। ত্রাণ পণ্যবাহী ট্রাকের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা বর্ষণের বেশ কয়েকটি ঘটনাও ঘটেছে সেখানে।
এদিকে ত্রাণের অভাবে মানবিক বিপর্যয় শুরু হয়েছে যুদ্ধ জর্জরিত গাজা উপত্যকায়। খাদ্যের অভাবে সেখানে মরতে শুরু করেছে মানুষ; বিদ্যুৎ-চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে হাসপাতাল গুলো পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে।
জাতিসংঘের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত অঙ্গ সংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, গাজার ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছেন না।
গাজার ভৌগলিক আয়তন ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার। এ উপত্যকার উত্তর ও পশ্চিমে ইসরায়েল সীমান্ত, দক্ষিণে মিসর সীমান্ত এবং পূর্বদিকে ভূমধ্যসাগর অবস্থিত। ২০০৫ সালে হামাস ক্ষমতা দখলের পর থেকে উপত্যকার উত্তর ও পশ্চিম সীমান্ত সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে।
এতদিন পর্যন্ত উপত্যকায় খাদ্য-ত্রাণ ও মানবিক সহায়তার সরবরাহ দক্ষিণে মিসরীয় সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করতো; কিন্তু এখন সেই সীমান্তপথটিও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েলি বাহিনী।
তবে গাজায় কোনো সমুদ্রবন্দর নেই। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএসকে জানিয়েছেন, বন্দর নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে একটি সামরিক ইউনিট গঠন করা হয়েছে। সেই ইউনিটটির নাম সেভেন্থ ট্রান্সপোর্টেশন ব্রিজ।
প্রসঙ্গত, গাজায় ত্রাণ পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে সড়ক পথের বিকল্প খুঁজছে, গত ৫ মার্চ তার আভাস দিয়েছিলেন জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জন কিরবি।
হোয়াইট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছিলেন, সাগরপথ বা মেরিটাইম করিডোরের মাধ্যমে গাজায় ত্রাণ পাঠানোর ব্যাপারটি বিবেচনা করছে ওয়াশিংটন।
আসছে নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কারণে এবারের বার্ষিক স্টেট অব দ্য ইউনিয়নে বাইডেনের ভাষণের মূল লক্ষ্য ছিল মার্কিন ভোটারদের কথামালায় আকৃষ্ট করে সমর্থন আদায়।
কংগ্রেসের উচ্চ ও নিম্নকক্ষের জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে তিনি দাবি করেন, দেশে ও বিদেশে হুমকির মুখে পড়েছে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা।
নিজের শাসনামলের তিন বছরে ১ কোটি ৫০ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের দাবি করেছেন তিনি। বলেছেন, দেশে সহিংসতার হার ২০২৩ সালের ৯ মাসে আগের বছরের তুলনায় আট দশমিক দুই শতাংশ কমেছে, যা বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।
গাজায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানির তথ্য এই ভাষণে উঠে আসলেও ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের পরম মিত্র বলেও দাবি করেছেন বাইডেন। তার ভাষণ চলাকালে বিক্ষুব্ধ কয়েকজন চিৎকার করে প্রতিবাদ জানালে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। আর ক্যাপিটল হিল অভিমুখী রাস্তা আর হোয়াইট হাউজের বাইরে অবস্থান নিয়ে বাইডেনের বহরে বাধা তৈরি করেন একদল বিক্ষোভকারী। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা ও সেনা অভিযান অবিলম্বে বন্ধের দাবিতে স্লোগান দেন তারা।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]