স্ত্রীর ভয়ে দিল্লি বিমানবন্দরে বোমাতঙ্ক ছড়ানোয় বাংলাদেশি গ্রেফতার
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪, ১৮:৪২
স্ত্রীর ভয়ে দিল্লি বিমানবন্দরে বোমাতঙ্ক ছড়ানোয় বাংলাদেশি গ্রেফতার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লির বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে কলকাতাগামী একটি ফ্লাইটে বোমা আছে দাবি করে ভুয়া ই-মেইল পাঠানোর অভিযোগে এক বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার দেশটির পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ওই ব্যক্তি তার স্ত্রীর কাছে ধরা পড়ার ভয়ে দিল্লি বিমানবন্দরে ভুয়া ই-মেইল পাঠিয়েছিলেন। গত রবিবার (৩ মার্চ) কলকাতা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে দিল্লি পুলিশ তাকে রিমান্ডে নিয়েছে।


৫ মার্চ, মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতাগামী একটি ফ্লাইটে বিস্ফোরক আছে দাবি করে দিল্লি বিমানবন্দরে প্রতারণামূলক ই-মেইল পাঠানোর অভিযোগে ২৯ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে ভারতীয় পুলিশ।


জানা গেছে, ওই বাংলাদেশির নাম নজরুল ইসলাম (২৯)। স্ত্রীর কাছে মিথ্যা বলে ধরা পড়ার ভয়েই ভুয়া ইমেইল করে দিল্লি বিমানবন্দরের বোমাতঙ্ক ছড়ান। দিল্লি থেকে কলকাতাগামী একটি ফ্লাইটে বোমা আছে দাবি করে দিল্লির বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে ই-মেইল পাঠান গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। পরবর্তীতে ফ্লাইটটিতে তল্লাশি চালিয়ে কর্মকর্তারা তেমন কিছু পাননি। পরে সোমবার (৪ মার্চ) কলকাতার নিউমার্কেটের একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করা হয় নজরুল ইসলামকে।


দিল্লি পুলিশ জানায়, নজরুল ইসলাম ভুয়া ইমেইল পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কারণ, নজরুল যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে যাচ্ছেন এবং ভিসা পেয়েছেন এমন মিথ্যা কথা বলে ২০২৩ সালে সোনিয়া নামের ভারতের নয়াদিল্লির এক নারীকে বিয়ে করেন। স্ত্রী তাকে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে যেতে বললে তিনি নানা অজুহাত দেখাতে শুরু করেন।


একপর্যায়ে স্ত্রী সোনিয়ার সন্দেহ হলে তিনি তার ভাইকে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে কলকাতায় পাঠান। ২৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় নজরুলের সঙ্গে সোনিয়ার ভাইয়ের দেখা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে তিনি দিল্লি বিমানবন্দরে বোমা থাকার গুজব ছড়িয়েছিলেন, যেন দিল্লি বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটটি ছাড়তে না পারে। কারণ, ওই ফ্লাইটে করেই সোনিয়ার ভাইয়ের কলকাতায় যাওয়ার কথা ছিল। আর প্রতারণামূলক ই-মেইল পাঠানোর পর নিরাপত্তা পরীক্ষার কারণে কয়েক ঘণ্টা বিলম্বের পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ফ্লাইটটি কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করে।


পুলিশ জানায়, নজরুল কলকাতার নিউমার্কেটের হোটেলটিতে প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে ছিলেন। শুধু স্ত্রীকে মিথ্যা বলা নয় এর পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে আনা প্রায় ৫০ লাখ টাকা প্রতারণা করে লুকিয়ে রাখতেই কলকাতায় থাকছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন তিনি। অভিযুক্ত নজরুলের পাসপোর্ট, ফোন এবং ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।


পুলিশ বলেছে, শুধুমাত্র নিজের স্ত্রীর কাছ থেকে তার আসল পরিচয় গোপন রাখার জন্য নজরুল ইসলাম এই অপরাধ করেছেন। কারণ তিনি তার স্ত্রীকে বলেছিলেন, তিনি (নজরুল ইসলাম) যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণার স্কলার।


দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ঊষা রঙ্গনানি বলেছেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেডের নিরাপত্তা অফিসারের কাছ থেকে ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, বিমানবন্দরে কেউ বিস্ফোরক বহন করছে এবং প্রতিটি ব্যাগ ও লাগেজ চেক করার হুমকি-সম্বলিত ই-মেইল পাওয়া গেছে।


ডিসিপি বলেছেন, তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ দিল্লির এই বিমানবন্দরে হাই অ্যালার্ট জারি করে। যদিও এই ই-মেইলটি পরে প্রতারণামূলক বলে প্রমাণিত হয়। এছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তি এই ভুয়া বার্তা পাঠানোর জন্য নতুন ই-মেইল ঠিকানা তৈরি করেন বলেও তদন্তের সময় পুলিশ দেখতে পায়। পরে পুলিশ জানতে পারে, কলকাতার একটি হোটেল থেকে ই-মেইলটি পাঠানো হয়েছিল।


দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ঊষা রঙ্গনানি বলেন, নজরুলের ফোন পরীক্ষা করা হলেও তিনি এর পুরো হিস্টরি মুছে দিয়েছেন। তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, তিনি ফ্লাইটটি বাতিল করার জন্য ই-মেইলটি পাঠিয়েছিলেন। কারণ তার শ্যালক তার সাথে দেখা করতে আসছেন এবং তিনি চান না, তার শ্যালক কলকাতায় পৌঁছান।


অভিযুক্ত নজরুল জানিয়েছেন, তিনি ২০১৭ সালে পাঞ্জাবের লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে একটি এভিয়েশন কোর্স করেছিলেন। আর সেখানেই তিনি তার স্ত্রীর সাথে প্রথম দেখা করেন।


ঊষা রঙ্গনানি বলেন, কোর্স শেষ করে নজরুল তার দেশে চলে যান। এরপর ২০২০ সালে তিনি আবারও সোনিয়ার সাথে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। এসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডি করছেন এবং মার্কিন ভিসা পেয়েছেন বলে সোনিয়াকে বোকা বানান। মূলত ওই নারী নজরুলের ফেক প্রোফাইল দেখে প্রভাবিত হন এবং ২০২৩ সালের এপ্রিলে তাকে বিয়ে করেন। তবে বিয়ের পরপর স্ত্রী নজরুলকে সন্দেহ করা শুরু করেন এবং তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করতে থাকেন।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com