২০২৪ সালে শক্তিশালী ১০ মুদ্রার তালিকায় তলানিতে ডলার
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ২১:০৫
২০২৪ সালে শক্তিশালী ১০ মুদ্রার তালিকায় তলানিতে ডলার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মুদ্রাকে বৈশ্বিক বাণিজ্যের জীবনীশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এটি একটি দেশের অর্থনৈতিক শক্তিকেও প্রতিফলিত করে। মুদ্রার শক্তি বিচার করে কোনো দেশের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক অবস্থাকেও পরিমাপ করা হয়। মুদ্রার শক্তি বাড়লে একটি দেশের অর্থনীতিতে আস্থা বাড়ে। এতে ওই দেশটি বিনিয়োগ আকর্ষণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব বাড়াতেও সক্ষম হয়।


সাধারণত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা হিসেবে ধরা হয় মার্কিন ডলারকে। বিশ্বের যত মুদ্রা আছে তারমধ্যে মার্কিন ডলারই সবচেয়ে লেনদেন হয়ে থাকে। তবে ‘চমকপ্রদ’ তথ্য হলো, জাতিসংঘের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ১৮০টি মুদ্রার মধ্যে— যুক্তরাষ্ট্রের ডলার বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা নয়। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। কিন্তু তারপরও স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন ডলার বিশ্বের সেরা মুদ্রা হিসেবে জায়গা করে নিতে পারেনি।


মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস গত বছরের ৩০ নভেম্বর— ২০২৪ সালের বিশ্বের সেরা ১০টি মুদ্রার একটি তালিকা প্রকাশ করে। এই তালিকার তলানিতে রয়েছে ডলার।
ফোর্বসের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বিশ্বের সেরা মুদ্রা হলো কুয়েতি দিনার। এরপর যথাক্রমে রয়েছে— বাহরাইনি দিনার, ওমানি রিয়াল, জর্ডানিয়ান দিনার, ব্রিটিশ পাউন্ড, জিব্রাল্টার পাউন্ড, ক্যামেন আইল্যান্ড ডলার, সুইস ফ্রাঁ, ইউরো ও মার্কিন ডলার।


১. কুয়েতি দিনার (কেডব্লিউডি) : টানা কয়েক বছরের মতো এবারও কুয়েতি দিনারই হলো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা। বর্তমান বাজারে ১ কুয়েতি দিনারের বিপরীতে ৩.২৫ মার্কিন ডলার পাওয়া যায়। কুয়েত সৌদি আরব ও ইরাকের মধ্যবর্তী পারস্য উপসাগরে অবস্থিত। দেশটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তেল রপ্তানিকারক হিসাবে পরিচিত। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে নিজস্ব মুদ্রা দিনার চালু করে কুয়েত।


শুরুর দিকে মুদ্রাটি ব্রিটিশ পাউন্ডের সঙ্গে বাঁধা ছিল। অর্থাৎ কুয়েতি দিনার ও ব্রিটিশ পাউন্ডের মধ্যে বিনিময় একটি নির্দিষ্ট হারে স্থির ছিল। এতে কুয়েতের জন্য ব্রিটিশ পাউন্ড ব্যবহার করা অন্যান্য দেশের সঙ্গে লেনদেন করা সহজ ছিল। এখন এই মুদ্রাটি ব্রিটিশ পাউন্ড ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি মুদ্রার সঙ্গে নির্দিষ্ট হারে বিনিময় করা হয়।


২. বাহরাইন দিনার (বিএইচডি) : গত বছরের মতো চলতি বছরও বাহরাইন দিনারকে বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী মুদ্রা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে ফোর্বস। বর্তমান বাজারে ১ বাহরাইন দিনারের বিপরীতে ২.৬৫ মার্কিন ডলার পাওয়া যায়। বাহরাইন সৌদি আরবের পূর্ব উপকূলে পারস্য উপসাগরের একটি দ্বীপরাষ্ট্র। কুয়েতের মতো দেশটি তেল ও গ্যাস রপ্তানি করে সবচেয়ে বেশি আয় করে। ১৯৬৫ সালে বাহরাইন দিনার চালু করে তা মার্কিন ডলারের সঙ্গে নির্দিষ্ট হারে বিনিময় শুরু হয়েছিল।


৩. ওমানি রিয়াল (ওএমআর) : ২০২৪ সালেও বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী মুদ্রা হলো—ওমানি রিয়াল। বর্তমান বাজারে ১ ওমানি রিয়ালের বিপরীতে ২.৬০ মার্কিন ডলার পাওয়া যায়। দেশটি আরব উপদ্বীপের পূর্ব প্রান্তে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেনের মধ্যে অবস্থিত। ধনী প্রতিবেশীদের মতো ওমানও তেল-গ্যাসের একটি প্রধান রপ্তানিকারক দেশ। গত শতকের সত্তরের দশকে ওমানি রিয়াল চালু করে ডলারের সঙ্গে পেগ করা হয়েছিল।


৪. জর্ডানিয়ান দিনার (জেওডি) : জর্ডানিয়ান দিনার হলো বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী মুদ্রা। বর্তমান বাজারে ১ জর্ডানিয়ান দিনারের বিপরীতে ১.৪১ মার্কিন ডলার পাওয়া যায়। জর্ডান মধ্যপ্রাচ্যের একটি স্থলবেষ্টিত দেশ, যা এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় তেল ও গ্যাস রপ্তানির ওপর কম নির্ভরশীল। দেশটি মন্থর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের সঙ্গে লড়াই করেছে। ১৯৫০ সালে জর্ডানিয়ান দিনারের প্রচলন শুরু হয় এবং ডলারের সঙ্গে পেগ করা হয়।


৫. জিব্রাল্টার পাউন্ড : ২০২৪ সালের তালিকায় এই মুদ্রাটি গত বছরের তুলনায় ২ ধাপ এগিয়েছে। বিশ্বের শক্তিশালী মুদ্রাগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ পাউন্ডের সমান মান নিয়ে জিব্রাল্টার পাউন্ড তালিকার পাঁচ নম্বরে রয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতিটি জিব্রাল্টার পাউন্ডের বিপরীতে ১.২৭ মার্কিন ডলার পাওয়া যায়। জিব্রাল্টার স্পেনের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত এবং আনুষ্ঠানিকভাবে এটি একটি ব্রিটিশ অঞ্চল। ১৯২০-এর দশকে জিব্রাল্টার পাউন্ড চালু হয়েছিল এবং এটি ব্রিটিশ পাউন্ডের সঙ্গে পেগ করা হয়।


৬. ব্রিটিশ পাউন্ড (জিবিপি) : জিব্রাল্টার পাউন্ডের সমান মান হলেও শক্তিশালী মুদ্রার তালিকায় এবার ৬ নম্বরে রয়েছে ব্রিটিশ পাউন্ড। বর্তমান বাজারে ১ ব্রিটিশ পাউন্ডের বিপরীতে ১.২৭ ডলার পাওয়া যায়। চতুর্দশ শতকে এই মুদ্রা চালু হয় এবং ১৯৭১ সালে মুদ্রাটি ডেসিমেলাইজড হয়। তখন পাউন্ড, শিলিং ও পেন্সের পুরোনো পদ্ধতি বাদ দিয়ে পাউন্ড ও পেন্সের বর্তমান দশমিক পদ্ধতি চালু হয়। এই মুদ্রা অন্য কোনো মুদ্রার সঙ্গে বাঁধা নেই।


৭. কেম্যান আইল্যান্ড ডলার (কেওয়াইডি) : কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের ডলার বিশ্বের শক্তিশালী মুদ্রাগুলোর মধ্যে এক ধাপ পিছিয়ে এবার সপ্তম স্থানে রয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতিটি কেম্যান ডলারের বিপরীতে ১.২০ ডলার পাওয়া যায়। সত্তরের দশকে কেম্যান ডলার চালু হয়েছিল এবং তা ডলারের সঙ্গে বাঁধা আছে।


৮. সুইস ফ্রাংক : বিশ্বের শক্তিশালী মুদ্রাগুলোর মধ্যে অষ্টম স্থানে রয়েছে সুইস ফ্রাংক। বর্তমান বাজারে প্রতিটি ফ্রাংকের বিপরীতে ১.১৭ মার্কিন ডলার পাওয়া যায়। সুইস ফ্রাংক হলো সুইজারল্যান্ড ও তার ক্ষুদ্র প্রতিবেশী লিচেনস্টাইনের সরকারি আইনি দরপত্র। সুইজারল্যান্ডের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে মুদ্রাটিকে একটি নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে দেখা হয়। ১৮৫০ সালে সুইস ফ্রাংক চালু করা হয়েছিল এবং পরে ফ্রি-ফ্লোটে যাওয়ার আগে এই মুদ্রা ইউরোর সঙ্গে বাঁধা আছে।


৯. ইউরো : ইউরো হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠনকারী ২৭টি দেশের মধ্যে ২০টি দেশের সরকারি মুদ্রা। ২০০২ সালের ইউরোর কয়েন ও ব্যাংক নোট চালু হয়। মুদ্রাটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রার তালিকায় ৯ নম্বর অবস্থানে অর্থাৎ মার্কিন ডলারের ঠিক ওপরের অবস্থানটিতে রয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি ইউরোর বিপরীতে ১.০৯ মার্কিন ডলার পাওয়া যায়। এটি অন্য কোনো মুদ্রার সঙ্গে বাঁধা নেই।


১০. মার্কিন ডলার : বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মুদ্রা মার্কিন ডলার হলো ১০ তম শক্তিশালী মুদ্রা। বিশ্বে অন্য সব মুদ্রার দাম ইউএস ডলারের চেয়ে কম। সপ্তদশ শতকে এই মুদ্রা চালু হয়েছিল। বর্তমানে মুদ্রাটি বিশ্বের বৃহত্তম রিজার্ভ কারেন্সি। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কাছে সবচেয়ে বেশি মজুত করা মুদ্রা হলো ইউএস ডলার। তেল, স্বর্ণ, রুপা ও তামাসহ অনেক পণ্যের মূল্য নির্ধারণের জন্য এই মুদ্রা ব্যবহৃত হয়।


বিদেশি মুদ্রার লেনদেন হয় আলাদা দুটি দেশের মুদ্রায়। উদাহরণ স্বরূপ, অস্ট্রেলিয়ান ডলার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডলার ক্রয়। যার ফলে এক দেশের মুদ্রার মান আরেক দেশের মুদ্রার মানের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। যা ‘এক্সচেঞ্জ রেট’ নামে পরিচিত।


বিশ্বের বেশিরভাগ মুদ্রার মানই ওঠানামা করে। যার অর্থ চাহিদা এবং সরবরাহ অনুযায়ী দাম পরিবর্তন হয়ে থাকে। কিছ মুদ্রার মান স্থির। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ডলার একটি নির্দিষ্ট দামে নির্ধারিত। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মার্কিন ডলারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ডলারের মান নির্দিষ্ট করা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেটি বাতিল করা হয়। এখন চাহিদা ও সরবরাহ অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ান ডলারের মূল্য ওঠানামা করে।


মুদ্রা শক্তিশালী হয় বিভিন্ন কারণে। যারমধ্যে অন্যতম হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, পণ্যের চাহিদা ইত্যাদি।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com