চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি রোগীরা
পা সেলাই দিতে গুনতে হলো দেড় হাজার টাকা
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৪
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি রোগীরা
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এক দিকে দালালচক্রের অপতৎপরতা অন্যদিকে জরুরি বিভাগের কতিপয় স্বেচ্ছাসেবক সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।


টাকা ছাড়া চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাওয়া যায় না কোনো ধরনের সেবা। টাকা দিতে না পারলে বসিয়ে রাখা হচ্ছে রোগীদের। অনেকটা জোরপূর্বক টাকা আদায় করেই রোগীদের সেবা দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।


জানা গেছে, মঙ্গলবার দুই পায়ে জখম নিয়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে যান সেলিম হোসেন । এসময় সেখানে কর্তব্যরত অফিস সহায়ক ও স্বেচ্ছাসেবকরা তার দুই পায়ে সেলাই দিয়ে ১ হাজার ৫ শ টাকা হাতিয়ে নেন।


এ ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী সেলিমের স্বজনদের পক্ষ থেকে সিভিল সার্জন, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।


লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, আমি সেলিম গুরুতর আহত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে গেলে সেখানে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবক উজ্জ্বল হোসেন, রফিকুল ইসলামসহ আরও অনেকে জানান, কাটাস্থানে সেলাই দিতে হবে। সেলাই বাবদ ১৯শ টাকা প্রদান করতে হবে।


কিন্তু কাছে টাকা না থাকায় আমার স্বজনদের কাছে বিষয়টি বললে তারা সবাই মিলে ১৫ শ টাকা জোগাড় করে দেয়। আমি সেই টাকা নিয়ে উজ্জ্বল ও রফিকুলের কাছে গেলে তারা বলে এতে হবে না ১৯শ টাকাই লাগবে।


এভাবে তারা আমাকে জরুরি বিভাগে প্রায় ৪০ মিনিট বসিয়ে রাখে। পরে অনেক অনুনয়-বিনয় করার পর ১৫ শ টাকা নিয়ে আমার ক্ষতস্থানে সেলাই করে দেয় তারা।


এ ঘটনার তদন্তে সদর হাসপাতালের জুনিয়র সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময়কে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন ও ডা. সোহরাব হোসেন।


জানা গেছে, সদর হাসপাতালে জনবল সংকটের সুযোগে বিভিন্ন মাধ্যমের সহায়তায় জায়গা করে নিয়েছে এসব স্বেচ্ছাসেবকের দল। আর প্রকাশ্যেই চলছে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনা।


হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়োগ না দিলেও তাদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে অনিয়মই একপ্রকার নিয়মে পরিণত হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে।


ভুক্তভোগীরা জানান, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে জরুরি চিকিৎসা নিতে হলে আগে স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে দরদাম ঠিক করতে হয় দরদাম ঠিক হলেই শুরু হয় সেবা। টাকা দেওয়ার পরই শুরু হয় চিকিৎসা।


সেলিম বলেন, পৌর এলাকায় আমার বাড়ি। স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে যখন আমার মতো কেউ ধরাশায়ী হয়, তখন গ্রামগঞ্জের খেটে খাওয়া মানুষেরা হাসপাতালে কতটা অসহায়, তা অনুমান করতে পারছি।


অভিযোগের বিষয়ে সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর এ ঘটনায় ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩ দিনের মধ্যে এ কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন সিভিল সার্জন মহোদয়।


জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান বলেন, বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


বিবার্তা/আসিম/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com