'সারাদেশে দাবদাহের জন্য দায়ী বায়ুদূষণ'
প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ২০:০৮
'সারাদেশে দাবদাহের জন্য দায়ী বায়ুদূষণ'
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সারা দেশে চলমান তীব্র দাবদাহ ও গরম অনুভূত হওয়ার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বায়ুদূষণও দায়ী। কিন্তু দেশে বায়ুদূষণ কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। বরং সমন্বিত নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন না করে একটি অগ্রহণযোগ্য ও বিতর্কিত বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


আজ শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ও বারসিক আয়োজিত ‘বায়ুদূষণ কমাতে দ্বৈতনীতির পরিহার জরুরি’ শীর্ষক ওই সংবাদ সম্মেলনে ‘বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদন তুলে ধরে বলা, বায়ুদূষণের কারণে ২০১৭ সালে দেশে অন্তত এক দশমিক ২৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দেশে অকাল মৃত্যুর ২০ শতাংশ বায়ুদূষণের কারণে। বর্তমানে বায়ুদূষণ এমন বেড়েছে যে, তা মানুষের শরীরেই প্রভাব ফেলে না, বিপর্যস্ত করে তুলছে মানসিক অবস্থাকেও। তাই এ মুহূর্তে দূষণ রোধে কার্যকর পদপে না নেওয়া হলে বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মকে বায়ুদূষণের কারণে অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।


আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, পৃথিবীর সকল দেশের নীতি, আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয় জনস্বার্থে। কিন্তু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিত্র উল্টো। অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাধ্যমে জনস্বার্থ উপেক্ষা করে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ রায় আইন ও নীতি প্রণয়ন করা হয়। এ ধরনের সাম্প্রতিক একটি ঘৃণ্য উদাহরণ হচ্ছে- সমন্বিত নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন না করে একটি অগ্রহণযোগ্য বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রণয়ন। বিতর্কিত ওই বিধিমালা বাতিল করে দ্রুত সমন্বিত নির্মল বায়ু আইন পাসের দাবি জানান তিনি। তিনি পরিবেশ রার সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।


সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বায়ুদূষণের দিক দিয়ে ২০২০ ও ২০১৯ সালে শীর্ষ অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ এবং বিশ্বের রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে দূষণের দিক দিয়ে দ্বিতীয় ছিল রাজধানী ঢাকা। সাম্প্রতিককালে পরিবেশ দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দেশের বিভিন্ন শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।


তাপপ্রবাহের জন্য বায়ুদূষণ দায়ী, উল্লেখ করে অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, ধুলিকণা ও দূষিত গ্যাসের তাপ শোষণ করার মতো থাকার কারণে বর্তমানে অত্যাধিক দূষিত ধুলিকণা ও গ্যাসীয় পদার্থগুলো সূর্যের তাপমাত্রাকে শোষণ করে তাপ প্রবাহ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি সালাফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সসাইড, কার্বন মনো অক্সাসাইড, কার্বন ডাই অক্সসাইড তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সুতরাং তাপমাত্রার বৃদ্ধি কমাতে বায়ু দূষণও কমানো জরুরি।


পরিবেশ রায় আদালতের কাছ থেকে আগের মতো সাহসী রায় পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন হিউম্যান রাইটস অ্যাণ্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, আদালতে নানাভাবে সময় পেন হচ্ছে। সংসদেও জনস্বার্থে আইন প্রণয়ন হচ্ছে না। সংসদে ব্যবসায়ীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারাই পরিবেশ দূষণের জন্য প্রধানত দায়ী। ফলে আইন প্রণয়নে কারা প্রভাব বিস্তার করছে। এই অবস্থায় জনগণকে জেগে উঠা ও আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই।


সভাপতির বক্তব্যে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, বায়ুদূষণ কমানোর জন্য আমরা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, কিন্তু বিভিন্ন নীতিমালায় তার বিপরীতমুখি আইন পাস হয়ে যাচ্ছে যা খুবই উদ্বেগজনক। এই বিষয়ে জনগণের সচেতনতা অতন্ত্য জরুরি তার জন্য পুরো ব্যাপারটি সহজ সরল ভাষায় ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে সাংবাদিক/মিডিয়ার ভাইদের সচেষ্ট হতে হবে।


সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তৃতা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান, বারসিক-এর সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম, ক্যাপসের গবেষক ইঞ্জিনিয়ার মো. নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী প্রমূখ।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com